Cvoice24.com

ব্যস্ত সড়কেই পড়ে আছে মামলার আলামত, থানা বলছে জায়গা সংকট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২৮, ১৩ জুন ২০২১
ব্যস্ত সড়কেই পড়ে আছে মামলার আলামত, থানা বলছে জায়গা সংকট

ব্যস্ত সড়কেই পড়ে আছে মামলার আলামত।

মামলার আলামত হিসেবে জব্দ গাড়ি ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের ওপর। খোলা সড়কে এসব গাড়ি ফেলে রাখায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় চুরি হচ্ছে গাড়ির ভিতরের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি। নগরের খুলশী থানার জাকির হোসেন সড়কের একপাশে রাখা হয়েছে এসব মামলার আলামত। যেগুলো একেবারেই অরক্ষিত। 

রবিবার (১৩ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) খুলশী থানার ঠিক বাইরে সরাসরি সড়কের উপর ফেলে রাখা হয়েছে একটি লেগুনা (চট্টোমেট্রো-প ০৫০৬২৫) ও পিকআপ ট্রাক (চট্রোমেট্রো-ড ১১১১৫০)। লেগুনাটিতে মালখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া নম্বর (পিআর-৮৯/২০) থাকলেও পিকআপ ট্রাক থেকে মুছে গেছে আলামত নম্বর।

কর্তৃপক্ষের অবলহেলার কারণে মামলার গুরুত্বপূর্ণ এসব আলামত নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠলেও থানা প্রাঙ্গণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে জব্দ যানবাহন খোলা সড়কে রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

অযত্ন-অবহেলায় ধুলা আর স্তূপাকারে ডুবে থাকা আলামতগুলোর উপর জন্মেছে আগাছা। দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় এসব গাড়িগুলোর বেশিরভাগ অংশই ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে এসব আলামত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি খোয়া যাচ্ছে যানগুলোর ভেতরের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি।

স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা সিভয়েসকে বলেন, বেশ কয়েকমাস ধরে গাড়িগুলো রাস্তার উপর পড়ে থাকতে দেখছি। গভীর রাতে গাড়িগুলোর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করার পাশাপাশি পিকআপ ট্রাকের উপর নেশাগ্রস্থরা মাদক সেবন করে। এ ঘটনাগুলো থানার সামনে হলেও পুলিশের নিশ্চুপ ভূমিকার দিকে প্রশ্ন তুলছেন তারা।

এদিকে গাড়িগুলো সরাসরি সড়কের উপর রাখার কারণে সংকুচিত হচ্ছে থানা সংলগ্ন সড়কের বড় একটি অংশ। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন পথচারী ও গাড়ি চালকেরা। 

যাতায়াতকারী এক পথচারী সিভয়েসকে বলেন, ‘রাস্তার উপর পুলিশ কি এভাবে গাড়ি ফেলে রাখতে পারে? ৫ মিনিট রাস্তার উপর গাড়ি রাখলে পুলিশ মামলার উপর মামলা দেয়, অনেক সময় গাড়ি জব্দ করে ফেলে। কিন্তু মাসের পর মাস এই রাস্তায় গাড়িগুলো থানা পুলিশ ফেলে রেখেছে। পুলিশ যদি এই কাজ করে তাহলে সাধারণ জনগণ কি শিখবে?’

ভাটিয়ারী-নিউমার্কেট রুটের বাস চালক গফুর আলী সিভয়েসকে বলেন, ‘মাসখানেক ধরে এই সড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। প্রতিদিনই যানজট লেগেই থাকে। রাস্তার উপর এভাবে ট্রাক-লেগুনা ফেলে রাখায় এই রাস্তা ছোট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে একসাথে দু’টো বাস পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না।’ 

তবে ভাঙাচোরা এই গাড়িগুলোর মালিকদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলশী থানার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গাড়িগুলো মামলার জব্দকৃত আলামত। থানায় জায়গা নেই তাই গাড়িগুলো সড়কের উপরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সত্যি বলতে আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই গাড়িগুলো এভাবেই থাকবে।’

স্থান সংকুলান না হওয়ায় জব্দকৃত এসব গাড়ি নিয়ে ভোগান্তির কথা জানান খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিনুজ্জামান। সিভয়েসকে তিনি বলেন, ‘থানার ভিতরে জায়গা না থাকার কারণে সরকারি গাড়িগুলোও আমাদের বাইরের গলিতে রাখতে হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী সরকারি গাড়িগুলো নিরাপদ রাখতে থানার ভিতরে রাখার কথা। শুধুমাত্র স্থান সংকটের কারণে থানার গাড়িগুলো আমাদের অরক্ষিত অবস্থায় বাইরে রাখতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা চাইলেই কিছু করতে পারি না। আর গাড়িগুলোর মামলা এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমরা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। তবে অন্য কোনও ইউনিটে গাড়িগুলো ট্রান্সফার করা যায় কিনা এ বিষয়ে আমি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেখবো— যোগ করেন এই কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রথামত খুলশী থানায় পর্যাপ্ত জায়গা নেই। আর মামলার আলামতগুলো মূলত আদালতের আলামত। এসব আলামত থাকার কথা আদালতের মালখানায়। যেহেতু আদালত কোনও জায়গা দিতে পারছে না, তাই আমরা বাধ্য হয়ে থানায় এসব আলামত রাখছি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর সমাধানের জন্য আমাদের জায়গা দরকার। আর এই জায়গা দিতে হবে আদালতকে। আমরা আদালতকে বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে জানিয়েছি। আদালতের সিদ্ধান্তের উপর এর সমাধান নির্ভর করছে।’

এ প্রসঙ্গে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-প্রসিকিউশন) কাজী মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।

-সিভয়েস/জেআইএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়