জব্বারের বলীখেলা
দুই বুড়ো বলীর ‘বল’ সমানে সমান

মিনহাজ মুহী ও রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
দুই বুড়ো বলীর ‘বল’ সমানে সমান

বয়স পেরিয়েছে সত্তর। চুল-দাড়িও পেকেছে দুজনেরই। কিন্তু দম যেন এখনো ফুরোয়নি। তাইতো, শক্তির খেলা বলীতে অংশ নিতে মফিজ বলী এবং খাজা বলী বুড়ো বয়সেও ছুটে এসেছেন লালদিঘী ময়দানে। এদের মধ্যে খাজা বলী অবসর নিলেও এসেছেন নিজের মনকে মানাতে না পেরে। আর মফিজ বলী খেলছেন ৪০ বছর ধরে!

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে প্রথম রাউন্ডে লড়াই শুরু করেন এই দুই বলী।

শুরু থেকেই এই প্রবীণ দুই বলীর মধ্যে চলছিলো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কেউই কাউকে ছাড় দিচ্ছিলেন না। একবার মফিজ বলী খাজা বলীকে শক্তির জেরে ‘কাত’ করে দিলে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়ে মফিজ বলীকেই মাটিতে ফেলে দিচ্ছিলেন খাজা বলী। কিন্তু শেষপর্যন্ত কেউ কাউকে পরাজিত করতে না প্রায় যৌথভাবে দুজনকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  দুজনকে দুই হাজার টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হয়।

একাত্তর বছর বয়সী খাজা আহমেদ বলীর বাড়ি নগরের পতেঙ্গা থানার কন্ট্রোল মোড় এলাকায়। তিনি বলী খেলেছেন ৫১ বছর ধরে। গতবছর তিনি অবসরও নিয়েছিলেন।মোহাম্মদ মফিজ বলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া গ্রামের মুরাদপুর এলাকায়। সত্তর বছরের এই বলী অংশ নিচ্ছেন টানা ৪০ বছর ধরে৷ প্রতিযোগিতা শেষে প্রতিবেদকের কথা হয় দুই বলীর সঙ্গে। 

খাজা আহমেদ বলী সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘গতবছর অবসর নিয়েছিলাম। বলীখেলার আয়োজন দেখে মন মানছিলো না। তাই বয়স ভুলে আবার চলে আসলাম লড়তে। বলীখেলা খুবই ভালো লাগে আমার ছোটবেলা থেকেই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ সারাদেশের মানুষেরই এই খেলা পছন্দ। তাইতো এতো লোকজন এসেছে খেলা দেখতে।’

এখনো যথেষ্ট শক্তিসামর্থ্য আছে জানিয়ে মোহাম্মদ মফিজ বলী বলেন, ‘বলীখেলা অত্যন্ত আনন্দদায়ক খেলা। বয়স ৭০ হলেও এখনো খেলতে পারি। তাই আমি অবসর নেইনি। আমার এখনো ওই রকম ক্যাপাসিটি আছে খেলার। আমার সাথে লড়ার মতো খেলোয়াড় খাজা আহমদ ভাই ছিলেন। তাই তার সাথে লড়েছি। দুজনই একইসাথে বিজয়ী হয়েছি।’

এবারের বলীখেলার ১১৫তম আসরের ফাইনালে দফায় দফায় ১১ মিনিট শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের পর স্বেচ্ছায় হার মানলেন কুমিল্লার রাশেদ বলী। চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় একই জেলার বাঘা শরীফ বলীকে। দুজনই চারবারের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীর শিষ্য। তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে সীতাকুণ্ডের রাসেলকে হারিয়েছেন খাগড়াছড়ির সৃজন বলী। 

বলীখেলায় পৃষ্ঠপোষক এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সৌজন্যে চ্যাম্পিয়ন বলীর হাতে অতিথিরা তুলে দেন ট্রফিসহ নগদ ৩০ হাজার টাকা। যা এই যাবতকালে সর্বোচ্চ। রানারআপকে দেওয়া হয় ট্রফিসহ নগদ ২০ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ট্রফিসহ ১০ হাজার, আর চতুর্থ স্থান অর্জনকারীকে ট্রফিসহ নগদ ৫ হাজার টাকার পুরষ্কার দেওয়া হয়। এছাড়া এবারের বলীখেলার প্রথম রাউন্ডে বিজয়ীরা পান ট্রফিসহ নগদ দুই হাজার টাকা। 

চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি মাঠে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খেলা শুরু হয়। খেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ৮৪ জন বলী অংশ নেন। 

এর আগে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার ১১৫ তম আসর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বলীখেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর।

প্রসঙ্গত, ১৯০৯ সালে বদরপাতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তরুণদের শামিল করতে এই বলীখেলার প্রচলন করেন। সেই থেকে আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদ প্রতিবছর একই স্থানে আয়োজন করে বলীখেলা। যদিও মহামারী করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে বন্ধ ছিল বলীখেলার আয়োজন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়