সিআরবিতে হাসপাতালটি হবে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০২, ৮ আগস্ট ২০২১
সিআরবিতে হাসপাতালটি হবে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে

চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধিতার পরও সিআরবির ‘পরিত্যক্ত’ স্থানে হাসপাতাল নির্মাণে অনড় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে হলেও বেসরকারি কোনো হাসপাতাল নির্মাণ চায় না আন্দোলনকারীরা। ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেলেও প্রস্তাবিত হাসপাতালটির নামকরণ করা হচ্ছে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের’ নামে।

ইতোমধ্যে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর ও রেল ভবন ঘুরে সেই প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টে পৌঁছেছে। ট্রাস্ট থেকে অনুমোদন পেলেই প্রস্তাবিত হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক নাম হবে, ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।’

সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ২ ফেব্রুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখার উপ-সচিব আলী কবীর বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের সভাপতির কাছে উক্ত হাসপাতালটির নামকরণের অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠান। সেখানে তিনটি চিঠির স্মারক উল্লেখ করে চট্টগ্রামের এক জনপ্রতিনিধির অনুরোধের কথা বলা হয়। অতি দ্রুত হাসপাতালটির নাম বঙ্গমাতার নামে নামকরণের অনুরোধ জানানো হয়। ট্রাস্টের সভাপতির দায়িত্বে আছেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালীন সময়ে ট্রাস্টের কোন সভা হয়নি বলে নামকরণের অনুমোদনের বিষয়টিও ঝুলে আছে। তবে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের সভা যখনই হবে তখনই তা অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। 

রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের কাছে পাঠানো চিঠির একটি কপি সিভয়েসের হাতে সংরক্ষিত আছে।

রেলওয়ে জানায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় (পিপিপি) এ হাসপাতালে থাকবে ৫শ’ শয্যা ও ১শ’ আসনের মেডিকেল কলেজ। তবে প্রকল্পের শুরুর প্রথম ৩ বছরে চালু হবে ২৫০ শয্যা। বাকি ২৫০ শয্যা চালু হবে আরও ২ বছর পরে। অর্থাৎ মোট ৫ বছরে চালু হবে বিশেষায়িত  ৫শ’ শয্যা। এরপর মেডিকেল কলেজ, মসজিদ, হোস্টেল, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন সুবিধা চালু করতে সময় লেগে যাবে আরও পরবর্তী ৬ বছর। সবমিলিয়ে আধুনিক হাসপাতালের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে ১১ বছর।

হাসপাতালটির ডিজাইনে রয়েছে— প্রায় ২ দশমিক ৪২ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ৫০০ শয্যা, ইউনটিলিটি বিল্ডিং ও হাসপাতাল বিল্ডিং। পরের ফেজে ৩ দশমিক ৫৮ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে মসজিদ, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক, নার্সদের জন্য পৃথক হোস্টেল। এর বাইরে আরও থাকছে স্টাফ কোয়াটার ও পুরুষ হোস্টেল।

সাত রাস্তার মোড় হয়ে সড়কের বাম পাশে বর্তমান রেলওয়ে হাসপাতাল, পাশের খালি জমি, রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি রোড এবং এই রাস্তাটির দু’পাশে থাকা প্রায় ৫০টি কর্মচারী কোয়ার্টার (একতলা সেমিপাকা) নিয়ে মোট ছয় একর জমিতে হাসপাতালটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় প্রকল্পটি পিপিপিতে বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।

এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এই প্রকল্পের পরিকল্পনা ও সহযোগী সংস্থা বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপি)। কার্যনির্বাহী সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং বাস্তবায়ন ও পরিচালনা করবে ইউনাইটেড চট্টগ্রাম হাসপাতাল লিমিটেড। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ১২ বছর। প্রকল্পের আওতায় ১শ’ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ, ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং দুই ধাপে মোট ৫শ’ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। এতে প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা খরচ হবে। ৫০ বছর পর প্রকল্পের মালিকানা হবে রেলওয়ের। এরপরই রেলওয়ের ওই স্থানে বৈধভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় রেলওয়ে। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিআরবির প্রস্তাবিত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজটির নির্মাণে পিপিপির আওতায় অংশ নেয় তিনটি প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপির মালিকানাধীন স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নাসিরাবাদের ডেনিম মিলস লিমিটডে। দ্বিতীয়টি হলো সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালামের মালিকাধীন ওয়েল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সাথে জয়েন্টবেঞ্চারে ‘ওয়েল-সানিজ-ম্যাক্স’ লিমিটেড। তৃতীয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকার ইউনাইটেড গ্রুপের ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। টেন্ডারের সব শর্ত পূরণ ও সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ পায় ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। 

যদিও গত মার্চ মাস থেকে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজন থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ অনেকেই সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সেই বিরোধীদের তালিকায় আছেন সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতারাও। ইতোমধ্যে স্মারকলিপির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। চিঠি দেওয়া হয়েছে রেলপথ মন্ত্রীকেও। 

আন্দোলন যতই হোক সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের খবর হলো, কভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেই মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে পানির স্তর, বাতাস ও শব্দের পরিমাপ পরীক্ষা করা হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ করে কীভাবে হাসপাতালটির নির্মাণ করা যায় সে বিষয়েও পেপার ওয়ার্কের কাজ করছে রেলওয়ে ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কাজ এগিয়ে নেওয়ার বার্তা তাদের দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত হাসপাতালের বিরোধীতার যৌক্তিক কারণ খুঁজতে মাঠে নেমেছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সেখানে কার কি ভূমিকা ও স্বার্থ সেটাও খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতাল নির্মাণ ইস্যুতে জনমতের বিষয়টিও আমলে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্দোলন নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিকল্প স্থান নির্ধারণসহ নানা মত দেওয়া হয়েছে। তবে সেই প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজনের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। 

যদিও ইতোমধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রস্তাবিত স্থানেই হাসপাতাল হবে। এই প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এবং যথাসময়ে কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য পিএম কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর আগে রেলওয়ের জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও হাসপাতাল নির্মাণ ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন প্রস্তাবিত স্থানেই হাসপাতাল নির্মাণ হবেই হবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়