চট্টগ্রামের সাগর তীরে স্মার্ট সিটি গড়তে সংসদীয় কমিটির সায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে চীনের প্রস্তাব

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
চট্টগ্রামের সাগর তীরে স্মার্ট সিটি গড়তে সংসদীয় কমিটির সায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে চীনের প্রস্তাব

চীনের সাংহায়ে নির্মিত স্মার্ট সিটির মত চট্টগ্রামেও উপ শহর গড়তে প্রস্তাব দিয়েছে চীন।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি কোম্পানি নিজেদের খরচে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের বিনিময়ে সিডিএকে পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূল থেকে মিরসরাই ইকোনমিক জোন পর্যন্ত ৬০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় সাগর ভরাট করে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছে। তবে সেখান থেকে লভ্যাংশও নিতে চায় চীনা ওই চার প্রতিষ্ঠান। যদিও এরআগে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান কোইকা চট্টগ্রামে মেট্রো রেল নির্মাণে সমীক্ষা যাচাইয়ে ইতোমধ্যে দফায় দফায় ঢাকা-চট্টগ্রামে মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকও করেছে। 

এমন সময়ে আগে থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া চীনা দাতা সংস্থাগুলোর নতুন করে আনা প্রস্তাবটি আলোচনার জন্ম দেয়। এবার মেট্রোরেলের বিনিময়ে সমুদ্র উপকূলে স্মার্ট সিটি গড়ে দিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দেওয়া প্রস্তাবে সায় দিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও। চীনের এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে সেই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে নিজস্ব অর্থায়নে মেট্রোরেল প্রকল্প করে দিতে চায় চীন। বিনিময়ে সমুদ্র উপকূলে ৬০ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় চীন ও বাংলাদেশের অংশীদারত্বে স্মার্ট সিটি গড়ে তুলবে। চীন সেই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।’

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- কমিটির সদস্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বজলুল হক হারুন, মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আনোয়ারুল আশরাফ খান ও ফরিদা খানম।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, ‘আমাদের বে টার্মিনালের যে নির্ধারিত স্থান, তারপর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত সাগরের মধ্যে একটি চরের মতো আছে। ওই জায়গায় সাগরের জমি রিক্লেইম (ভূমি উদ্ধার) করে তারা টাউনশিপ (উপশহর) করতে চায়। বিনিময়ে তারা মেট্টোরেল পুরোটা তাদের অর্থায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কোন টাকা লাগবে না। চীনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাগরের জমি উদ্ধার করে যে ‘স্মার্ট সিটি’ তারা গড়তে চায়, তার দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকবে। সেখানে প্লট বিক্রির টাকা তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে।’

প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে হাসান বিন শামস আরো বলেন, ‘বে টার্মিনালের পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত অংশের সাগরের জমি উদ্ধারের কথা রয়েছে প্রস্তাবে। তবে মাঝে জাহাজভাঙা শিল্পসহ যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো বাদ যাবে। এখানে সাগরের জমি উদ্ধার করলে কোনো ক্ষতির ঝুঁকি নেই। দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাগরের ভূমি রিক্লেইম করে এরকম টাউনশিপ করা হয়েছে। এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতাও আছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। বলেছে, এমন প্রযুক্তি তাদের কাছে আছে, যাতে ওই অংশে সাগরের পানি স্বচ্ছ দেখা যাবে।’ 

সিডিএ জানায়, এই সড়কের পাশে সাগর তীরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কর্ণফুলী নদীতে টানেল এবং পদ্মা সেতুর কাজও চীনা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত দ্রুত গতিতে করছে। সেকারণে চীনা প্রস্তাবের পক্ষে সিডিএ থেকে শুরু করে সংসদীয় কমিটি। যদিও টাউনশিপ নির্মাণে কত টাকা খরচ হবে, সে বিষয়েও প্রস্তাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই সিডিএর কাছে। এমনকি চীনের কোন চারটি কোম্পানি যৌথভাবে মেট্রোরেল ও টাউনশিপ প্রকল্পের এই প্রস্তাব দিয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাননি প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস। 

চট্টগ্রামে বে টার্মিনালের প্রস্তাবিত এলাকার পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত অংশে সাগরের জমি উদ্ধার (ল্যান্ড রিক্লেম) করে টাউনশিপ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে চারটি চীনা কোম্পানি। চট্টগ্রামে বে টার্মিনালের প্রস্তাবিত এলাকার পর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত অংশে সাগরের জমি উদ্ধার (ল্যান্ড রিক্লেম) করে টাউনশিপ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে চারটি চীনা কোম্পানি। মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, কর্ণফুলী টানেল, টানেলের ওপারে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর ও জ্বালানি হাব ঘিরে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা হবে। 

সেসব বিষয় মাথায় রেখেই গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ঢাকার পর চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন। নগরীতে তিন থেকে চারটি রুটে মেট্রোরেল করে এই নেটওয়ার্কে মিরসরাই ইকোনোমিক জোন, বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও নগরীর উপকণ্ঠের গ্রোথ সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করার দাবি রয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের।

যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনের প্রস্তাবটি নিয়ে আরও যাচাই বাছাই করার দরকার আছে। এখনই কোন মন্তব্য করা যাবে না। তবে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে চায়নিজ সিটি করে শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলে দিয়েছিল চীন। সেই বিষয়টিও মাথায় রাখার প্রস্তাব তাদের। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়