‘চুলে ফ্রেঞ্চ বেনী করায়’ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলেন প্রধান শিক্ষিকা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:২১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
‘চুলে ফ্রেঞ্চ বেনী করায়’ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হলেন প্রধান শিক্ষিকা

এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কাবাডি দলের সঙ্গে ক্রীড়া শিক্ষিকা

২০১১ সাল থেকে চট্টগ্রামের এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আছেন শরীরচর্চার শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার বাইরে অন্য কোনো খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পায় না এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন চেষ্টা করে উল্টো হয়েছেন প্রধান শিক্ষিকার চক্ষুশূল। থানা পর্যায়ে গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া  বাধ্যতামূলক হওয়ায় তাতে ‘সায়’দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার অংশ হিসেবে ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কাবাডি দল করেন শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। সে অনুসারে প্রস্তুতিও নেন, কিন্তু ম্যাচের আগেরদিনই ঘটে অন্য ঘটনা। কাবাডি দলের ছাত্রীদের চুলে ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণী করার কারণে মারলেন ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী। 

শিক্ষার্থীদের বকা, অপমান ও চুল ধরে টানাটানির প্রতিবাদে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নিজের মাথার সব চুল কেটে ন্যাড়া হয়েছেন শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। একইসঙ্গে তিনি পদত্যাগ করেন। তার পরের দিনই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনা নিয়ে গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেন তিনি। বিষয়টি এখন সারাদেশেই আলোচিত। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী সাবিনা, সানজিদাদের জয়ের রেশ এখনো কাটেনি। প্রশাংসার জোয়ারে ভাসছে তারা। আর সে সময়টাতে চট্টগ্রামের এক স্কুলে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় হতবাক নেটিজেনরা। 

ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন সিভয়েসকে বলেন, ‘গত ৮ সেপ্টেম্বর ফাইনাল ম্যাচ ছিল। নিয়ম অনুযায়ী একদিন আগে অংশগ্রহণকারী দলের ছবি তুলে কো-অর্ডিনেটরের কাছে জমা দিতে হয়। ওই দিন (৭ সেপ্টেম্বর) ছাত্রীদের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ছবি তোলার জন্য ছাত্রীদের জার্সি পরে তৈরি হতে বলি। তারা বেণী করে জার্সি পরে তৈরি হয়। এর মধ্যে আমি টয়লেটে যাই। সেখান থেকেই আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার চিৎকার- চেঁচামেচি শুনতে পাই। টয়লেট থেকে বের হয়ে শুনি প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের বকাঝকা করেছেন। কয়েকজন ছাত্রীকে চুল ধরে মারধর করেছেন। তখন দুই মেয়েকে কান্না করতে দেখি। আর তার কারণ হচ্ছে চুলে ফ্রেঞ্চ স্টাইলে বেণী করা। এরপর আমি প্রধান শিক্ষিকাকে জানাই যে, আমিই ছাত্রীদের বেণী করতে বলেছি। তার কারণ কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী চুলে ক্লিপ লাগানো যায় না। চুল চোখের সামনে চলে আসায় মেয়েদের খেলতে অসুবিধা হয়। এ কথা শুনে তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে ছাত্রীদের আদর করে সান্ত্বনা দিই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফাইনাল খেলার দিনই প্রধান শিক্ষিকা মডেল টেস্ট রেখেছেন। আর যে কারণে ম্যাচে অংশ নিতে দেরি হয়। এতে প্রতিপক্ষ দল ওয়াকওভার পেয়ে যায়। আর আমার মেয়েরা খেলার সুযোগ পায়নি। আর উনি (প্রধান শিক্ষিকা) আমাকে হেনস্থা করার জন্যই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন। শুধু বাচ্চাদের নয়; আমি নিজেও যেন খেলাধুলা না করতে পারি তা বলার জন্য থানা শিক্ষা অফিসারকে তারা জানাবেন বলছেন। আমি যখন কিছুই করতে পারবো না তাইলে থেকে কী করবো। আমি সভাপতি বরাবর পদত্যাগ পত্র দেই।’

ঘটনার এতদিন পর কেন জানালেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতকাল আমি যখন স্কুলে গেলাম আমাকে বলা হলো আপনি যেহেতু অব্যাহতি পত্র দিয়েছেন আমরা আপনাকে অব্যাহতি দিয়েছি। আপনি আর আসবেন না। তখন আমি বললাম, আমি তো অব্যাহতি পত্র হাতে পাইনি। তখন তিনি বলেন সেটা বাই পোস্টে চলে যাবে। গতকাল দুপুরে আমার স্থায়ী ঠিকানা রংপুরে স্কুল থেকে একটা চিঠি যায়। এরপর রাতে আমার ছাত্রীরা জানায় তাদেরকে ক্লাসে হুমকি দিচ্ছে তারা যাতে আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করে। আমাকে ফেসবুকেও ব্লক দেয়। যদি তারা করে তাহলে তাদেরকে রেড টিসি দিয়ে বের করে দিবে। আমি তো এতোদিন চুপ ছিলাম। যখন দেখলাম আমার জন্য বাচ্চাদের সঙ্গে তিনি এমন করছেন তাই ফেসবুকে লিখলাম।’

এ বিষয়ে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়