‘আগেভাগে না এলে যুৎসই জায়গা মেলে না’

দেবাশীষ চক্রবর্তী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৬:০১, ২২ এপ্রিল ২০২৪
‘আগেভাগে না এলে যুৎসই জায়গা মেলে না’

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা ঘিরে চাঁদপুর থেকে নিজের হাতে বানানো মাটির পুতুল নিয়ে এসেছেন মৃৎশিল্পী সঞ্জয় পাল। মেলার আরো দুদিন বাকি, একটু আগেভাগেই এসেছেন পছন্দমতো জায়গায় দোকান পেতে বসতে।

জহুর হকার মার্কেটের সামনে সিরাজুল হক পেট্টোল পাম্পের সামনে নানা তৈজসপত্রের পসরা নিয়ে বসছেন সোহেল রানা নামে এক ব্যবসায়ী। ২০ বছর ধরে তাঁর অবস্থান এ জায়গাতেই। সিরাজুল হক মিয়াই নাকি নিজ থেকে একসময়ে তাদের এ জায়গাতে দোকান বসানোর স্থান করে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এ জায়গায় তাঁদের অবস্থান। যুৎসই জায়গা ধরতে তাঁর কোনো তাড়া নেই, তবুও আগেভাগে এসেছেন, মেলার আগে কিছুটা বেচাকেনা করার জন্য।

রবিবার (২১ এপ্রিল) রাত থেকেই লালদীঘি ও তার আশপাশের এলাকায় মূল সড়কে এভাবে অবস্থান নিচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কোতোয়ালী, সিনেমা প্যালেস, আন্দরকিল্লাসহ তার আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের ল্যাম্প পোস্টের আলোয় বাঁশ গেঁড়ে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করছেন দোকানিরা। টুকিটাকি বেচাকেনা চলছে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে। ট্রাকে ট্রাকে পণ্য নিয়ে আসছেন অনেক ব্যবসায়ীরাও৷ সকাল থেকে শুরু হবে তাদের কর্মযজ্ঞ। কেউ কেউ রাতের সড়কেই রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন তৈজসপত্রের নানা নকশা।

দোকানিরা বলছেন, ২৫ এপ্রিল (১২ বৈশাখ) মূল মেলা৷ মেলার দু-চারদিন আগে থেকেই টুকিটাকি বেচাকেনা হয়। আবার আগেভাগে না এলে জায়গা পাওয়া যায়না।

চাঁদপুর থেকে আসা মৃৎশিল্পী সঞ্জয় পাল বলেন, গত বছর একদিন দেরিতে আসার কারণে ভালো জায়গা পাইনি। ফলে সেই বছর মেলার শেষ দিকেও পণ্য বিক্রি না হচ্ছে না দেখে অল্প দামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছে সব ছেড়ে দিয়েছি। তাই এবার আগেভাগেই এসেছি।

দোয়েল চত্ত্বর থেকে আসা সোহেল রানা বলেন, গত ২০ বছর ধরে পেট্টোল পাম্পের এই জায়গাতে বসছি। সিরাজুল হক মিয়াই আমাদের বসার জায়গা করে দিয়েছেন। জায়গা ধরার ঝামেলা নেই, একটু ভালো বেচাকেনার উদ্দেশ্য নিয়েই কয়েকজন কর্মচারীকে সঙ্গে করে আগেভাগে আসা৷ আমাদের আরো লোক আসবে, মেলার দিন।'

গত মেলার স্মৃতি স্মরণ করে ব্যবসায়ী শরিফ হোসেন বলছিলেন, দোকান রেখে পানির বোতল কিনতে গিয়ে ক্যাশ বক্সের সবটাকা চুরি হয়েছিল। ৩ হাজার টাকা নিয়ে ঘরে ফিরেছিলাম। সামান্য ভুলের কারণে পুরো শ্রম পণ্ড হয়েছিল৷ এবার আর ভুল হবেনা, সতর্ক আছি। ভালো বেচাকেনা করতে পারবো এটাই আশা।

চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হবে এই বলীখেলা। বলীখেলা ঘিরে আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল মেলা চলবে। মেলা হবে মাঠের বাইরে। ২৩ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে বলীখেলায় অংশগ্রহণার্থীদের নিবন্ধন শুরু হবে।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বলীখেলা’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদিঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি।

সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর লালদিঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলীখেলা। বলীখেলার একদিন আগে-পরে তিন দিন ধরে লালদিঘির পারসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়