নিরাপদ এলাকার কাছাকাছি এমভি আবদুল্লাহ

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৭, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
নিরাপদ এলাকার কাছাকাছি এমভি আবদুল্লাহ

সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৩৮৬ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে আরব সাগরের নিরাপদ এলাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। আরও ৬৫ থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল চলার পর জাহাজটি আরব সাগরের নিরাপদ এলাকায় পৌঁছবে। ওই পথ পাড়ি দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দুটি যুদ্ধজাহাজ নিরাপত্তা দিচ্ছে।

এদিকে, ফের জলদস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে জাহাজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। জাহাজে নেওয়া হয়েছে গার্ড। চারপাশে লাগানো হয়েছে কাটাতারের বেড়া। এছাড়া, জলকামানের আদলে তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যুহ। 

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পাড়ি দিতে পাহারা দিচ্ছে ইউ যুদ্ধজাহাজ
 
জাহাজের ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ জাহাজটির মালিকপক্ষ এসআর শিপিং কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তারা মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা পর্যন্ত সোমালিয়ার উপকূল থেকে ৩৮৬ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হতে বুধবার সকালের মধ্যে আরও ১২১ নটিক্যাল মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে।

এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম বলেন, ‘ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশীদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় জাহাজটির অবস্থান ছিল অক্ষাংশ: ০৯ – ৩৭.১০ উত্তর / দ্রাঘিমাংশ: ০৫৫-৫০.৮০ পূর্ব এবং সোমালিয়া উপকূল থেকে ২৯৪.৯ নটিক্যাল মাইল দূরে। দুপুর ২টা পর্যন্ত জাহাজটি সেখান থেকে আরও ৯০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম না করা পর্যন্ত ইইউ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলো নিরাপত্তা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।’

বাড়ানো হয়েছে জাহাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নতুন করে জাহাজটি যেন জলদস্যুদের কবলে না পড়ে সেজন্য এমভি আবদুল্লাহ'তে গার্ড নেওয়ার পাশাপাশি জাহাজের চারপাশে লাগানো হয়েছে কাটাতারের বেড়া। যেন দস্যুরা জাহাজে উঠতে না পারে। 

জাহাজটি মঙ্গলবার সকালেও এডেন মহাসাগরে দস্যুপ্রবণ এলাকা পাড়ি দিচ্ছিল। মধ্যরাতে এটি আরব সাগরে পৌঁছার কথা। যেহেতু জাহাজটি ধীরে চলছে, তাই সেটি দুবাইয়ের আল হারামাইন বন্দরে পৌঁছতে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম বলেন, ‘এমভি আবদুল্লাহ দস্যুর কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পর ‘আক্রান্ত স্থান’ থেকে কয়েকবার গতি পরিবর্তন করেছে। এটি মঙ্গলবার দুপুরে এডেন মহাসাগর অতিক্রম করছিল। ওই এলাকাটা উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি জাহাজ এই জাহাজকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই দুই জাহাজের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে কিছুটা ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহকে। আরও ৬৫ থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল চলার পর জাহাজটি আরব সাগরের নিরাপদ এলাকায় পৌঁছবে। 

জাহাজ নোংরা করে রেখেছে দস্যুরা

জাহাজটিতে ৩১ দিন ধরে থেকে অনেকটা নোংরা করে ফেলেছে দস্যুরা। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে জাহাজের অবস্থা এমন করেছে যে জাহাজের ভেতরের চেহারাই পাল্টে গেছে। এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা সেই জাহাজ চলন্ত অবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন বলে জানা গেছে।

জাহাজের মাস্টার আব্দুর রশিদ এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, নাবিকদের স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থা ভালো রয়েছে। জাহাজটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাত্রা সম্পন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি তেল, পানি ও খাদ্য মজুদ রয়েছে। দেশে নিরাপদে পৌঁছার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালিয়ান দস্যুরা। এটি মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটেছিল। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপর শুরু হয় দর-কষাকষি। 

জানা গেছে, ৫৪ কোটি টাকার বিনিময়ে ২৩ নাবিকসহ ৩১ দিন পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় জাহাজটিকে ছেড়েছে জলদস্যুরা। মুক্তি পাওয়ার পর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়।

এর আগে, একই গ্রুপের জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর সোমালি জলদস্যুরা হাইজ্যাক করেছিল। ওই সময় জাহাজটির ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। জাহাজটিতে প্রায় ৪১ হাজার মেট্রিক টন নিকেলের আকরিক ছিল। আরব সাগর দিয়ে যাত্রার সময় ভারতের লাক্ষাদ্বীপ থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে তারা হাইজ্যাকের শিকার হয়। তখনও জলদস্যুদের সাথে জাহাজের মালিকপক্ষের নানাভাবে দেনদরবার ও দরকষাকষি শেষে সমঝোতায় ১০০ দিন পর মুক্তি মিলেছিল তাদের।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়