অন্ধকারে আলোর পথযাত্রী চবির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৮ মে ২০১৮
অন্ধকারে আলোর পথযাত্রী চবির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা

ভোরের আলো ফোটার আগেই খোরশেদ খটাখট আওয়াজে ফটোপেপার বা ব্রেইলের কাগজে লিখতে থাকেন তার স্বকীয় ছন্দে। লিখার শব্দে তার পাশের সিটের ইউসুফ রোমানের ঘুম ভাঙ্গার পর বুঝতে বাকি থাকে না এই কাক ডাকা ভোরে খোরশেদ কি করছেন। নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম করে খোরশেদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশুনার পাশাপাশি পত্রিকায় গল্প  ও কবিতা লিখার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে এরই মধ্যে অতি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। সোলেমান বাদশা,  জাহাঙ্গীর এর ঘুম ভাঙ্গে অ্যাক্টিভ বয় খ্যাত শাহাজাহানের হাঁকডাকে। শাহজাহান সাংগঠনিক কোনও পত্র নিয়ে কিংবা বিল ভাউচার পাস করার জন্যে সূর্যের আগেই পৌঁছে যান আমানত হলে। এভাবেই নিত্যদিনের কাজকর্ম করে যাচ্ছে তারা।

উল্লেখিত প্রত্যেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। পড়াশুনা, খেলাধুলা, সঙ্গীতচর্চা,  ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে ফেইসবুক,  টুইটারসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং তথ্য প্রযুক্তিতে নিজেদের সংযুক্ত করে পথ চলছেন তারা। অন্য দশজন শিক্ষার্থীর তুলনায় তারা বরং আরো বেশি আত্মপ্রত্যায়ী ও সচেতন।

চবিতে পড়ুয়া সব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে তাদের ডিসএ্যাবল্ড স্টুডেন্ট সোসাইটি অব চিটাগং ইউনিভার্সিটি (ডিসকু) নামক একটি সংগঠন যার সদস্য সংখ্যা ৮৫। বলা বাহুল্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হল এমন একটি প্রতিবন্ধীবান্ধব শীর্ষ বিদ্যাপীঠ যেখানে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত। ডিসকু হল চবি’র সকল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিকট একটি পার্লামেন্ট।

ডিসকু নামক এই পার্লামেন্ট এর মাধ্যমে তারা তাদের সকল সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, একাডেমিক আয়োজন কিংবা সকল প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন। ডিসকু তার কার্যক্রম আর জনপ্রিয়তার মাধ্যমে চবিতে একটি প্রভাবশালী সংগঠন হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে গনতন্ত্র চর্চাও করে যাচ্ছে। প্রতিবার ডিসকুর কার্যকরি কমিটি সকল সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন তারা। বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবসসমূহ তারা পালন করে আসছেন এই সংগঠনের মাধ্যমে। ডিসকুর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিটিতে নির্বাচিত সভাপতি হুমায়ুন কবীর সমাজতত্ত্ব বিভাগে মাস্টার্স করছেন। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমরা সকল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং এসডিজি’র লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, এছাড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেদের বিকাশের জন্য আমরা সঙ্গীতের শিক্ষকও নিযুক্ত করেছি এক্ষেত্রে আমাদের বেসরকারী সংস্থা ইপসা ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সহায়তা প্রদান করছে। সংগঠনটির সাধারণ  সম্পাদক মনিরুজ্জামান জানান, আমরা এখানে পড়তে পেরে গর্বিত, এখানে আমরা পড়াশুনার পাশাপাশি নিজেদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছি। চবির সকল প্রতিবন্ধীরাই যেন একটি সুখী পরিবার। অবসরে তারা নিজেরাই মেতে উঠেন গলা ফাটানো গান, আড্ডা,হাসি-ঠাট্টা নিয়ে আবার কখনো মেতে উঠেন গঠনমুলক বিতর্কে। তাদের বিতর্কে স্থান পায় রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। নিত্য দিনের এসব গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নেন তানজিল, আরিফ,  মনির রানার মতো মেধাবী প্রতিবন্ধীরা শিক্ষার্থীরা। মানবতার খাতিরে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আলিম, জাহিদ, সায়মন, আইয়ুব, আকরাম, মাসুদ এর মতো হৃদয়বান বন্ধুরাও। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা আছেন হাসি আনন্দে ও স্বাচ্ছন্দে। তাদের বর্তমান সাংগঠনিকভাবে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পেছনে মালেক, রফিক, শাহাজাহান, হাসানের মতো সাবেক নেতৃবৃন্দের যথেষ্ট অবদান রয়েছে বলে তারা জানান।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখানকার প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আমাদের সন্তানতুল্য তারা স্বাভাবিক আর দশজনের চেয়ে ভালভাবেই মেধার অবদান রাখতে পারছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হতে পুরষ্কারপ্রাপ্ত ও বর্তমান সেলিব্রিটি ভাস্কর ভট্টাচার্য,  জয়ীতা তানজিলা মুনিয়া আমাদেরই শিক্ষার্থী। আমি এদের নিয়ে গর্বিত।

সিভয়েস/এএইচ

সিভয়েস/ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়