সময়ের শ্রেষ্ঠ যুব নায়ক শেখ কামাল

নিয়াজ মোর্শেদ এলিট

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৬ আগস্ট ২০২৩
সময়ের শ্রেষ্ঠ যুব নায়ক শেখ কামাল

মঞ্চ অভিনয়, আবৃত্তি বা সঙ্গীতের কাজ তিনি করেছেন। কিন্তু পর্দার নায়ক ছিলেন না। তারপরও আমরা আজ যখন পেছন ফিরে ইতিহাসে চোখ বোলাই, দেখতে পাই এই বাংলাদেশের সবচেয়ে স্মার্ট নায়ক ছিলেন তিনিই। একাধারে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাংস্কৃতিক কর্মী, ক্রীড়া সংগঠক, খেলোয়াড় এবং রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি।

হ্যাঁ- বলছিলাম এই বাংলাদেশের তারুণ্যের অহংকার শেখ কামালের কথা।

আমরা যারা যুব রাজনীতি করি, তাদের কাছে শেখ কামালের চেয়ে বড় শিক্ষক সম্ভবত আর কেউ নেই। এই দেশে কী করে ছাত্র রাজনীতি করতে হয়, তরুনদের এই রাজনীতিতে টেনে আনতে হয়, তার শিক্ষাটা তিনিই দিয়ে গেছেন। শাহীন স্কুল থেকে পাশ করার পর নিজের এই দারুণ প্রতিভাটা দেখিয়েছেন।

স্কুলে থাকতে ছিলেন বন্ধুদের প্রিয় মানুষ এবং ঈর্ষার পাত্র। খেলাধুলা, গান, আবৃত্তি; সবখানে ছিলো তার দাপট। ঢাকা কলেজে আশার পর দেখা মিললো রাজনীতিবিদ শেখ কামালের। এই ঢাকা কলেজে তখন পাকিস্তানপন্থী গুন্ডাদের যন্ত্রণায় ছাত্রলীগের নাম নেওয়াই কঠিন ছিলো। তেমন একটা সময়ে এখানে তিনি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড শুরু করলেন। সে সময়ের সেরা সেরা ছাত্রদের নিজের ক্যারিশমা দিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। এমনকি তখনকার তুখোড় ক্রিকেটার রকিবুল হাসানকেও তিনি রাজনীতিতে এনেছিলেন।

এর ফল হিসেবে ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগকে বিজয়ী করতে পেরেছিলেন তিনি। নেপথ্যে থেকে পুরো কলকাঠি নেড়েছিলেন শেখ কামাল। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখালেন নিজের রাজনীতি প্রতিভার পুরোটা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন পাকিস্তান সরকারপন্থী এনএসএফ-এর গুন্ডাদের দাপট। সেখানে ছাত্রলীগের অবস্থান ছিলো একেবারে মৃদু। গুন্ডাদের জ্বালায় ছাত্রলীগ একটা মিছিলও বের করতে পারতো না। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রথমে নিজেদের পায়ের নিচে মাটি শক্ত করেছিলেন শেখ কামাল। সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, নাটক; প্রতিদিন শেখ কামালের কোনো না কোনো আয়োজন ছিলোই। এখানে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে জমজমাট আয়োজন করেছেন তিনি।

উল্লেখ করা যেতে পারে এখনকার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের লেখা একুশে ফেব্রুয়ারির ওপর প্রথম নাটক টিএসসিতে মঞ্চস্থ হয়েছিলো। আর সেই আয়োজনের প্রধান নায়ক ছিলেন এই শেখ কামাল। নিজের গাড়ি নিয়ে সারা শহর দাপিয়ে বেড়িয়ে সেই নাটক সফল করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, সেখানে নিজে অভিনয়ও করেছিলেন।

এরপর তো মুক্তিযুদ্ধ এলো। নিজে ফ্রন্টে মুক্তিবাহিনীর একজন হিসেবে ট্রেনিং নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে চাইলে পায়ের ওপর পা রেখে ভারতে বসে থাকতে পারতেন। তা করেন নি; ফ্রন্টে ছিলেন। পরে তাকে মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি করে থিয়েটার রোডে নিয়ে যাওয়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধের পর, দেশ স্বাধীন হলে সেনাবাহিনীর পদ ত্যাগ করে আবার পড়াশোনা আর রাজনীতিতে মন দেন। আর এই সময়ই দেশ গড়ার জন্য শেখ কামাল বেছে নেন খেলাধুলাকে। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

আমি নিজে একজন ক্ষুদ্র ক্রীড়া সংগঠক। ফলে আমি জানি যে, এই কাজটি করার আসল মন্ত্র কী। আর এটাও আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন শেখ কামাল। সদ্য স্বাধীন দেশে তখন তরুণ ও যুবকদের সামনে বিভ্রান্ত হওয়ার, কু-পথে যাওয়ার অনেক আশঙ্কা ছিলো। আর সেখান থেকেই সরিয়ে এনে তাদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করেছেন শেখ কামাল।

শেখ কামাল নিজে এক সময় খেলাধুলা করেছেন। ক্রিকেট খেলেছেন, অ্যাথলেটিক্স করেছেন, ফুটবল খেলেছেন। তবে খেলার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠন তৈরি করার ব্যাপারে। তার হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের কিংবদন্তী ক্লাব আবাহনী।

সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে নতুন ক্লাব আবাহনীতে যোগ দেওয়ার মত তারকা পাওয়া কঠিন ছিলো। শেখ কামাল নিজে খেলোয়াড়দের বাসায় বাসায় গেছেন। বন্ধুত্ব কাজে লাগিয়ে আবাহনীতে নিয়ে এসেছেন কাজী সালাউদ্দিন থেকে শুরু করে সে সময়ের সব সেরা তারকাদের। পুরো শহর মাতিয়ে রেখেছেন খেলাধুলায়।

ক্রিকেট সরঞ্জামে বাড়তি কর বসানোর প্রস্তাব ছিলো তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে। নিজে ক্রিকেটারদের সাথে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেছেন। ক্রিকেট খেলার পথ খুলে দিয়েছেন।

আরও অনেক কিছু তার করার ছিলো। এই দেশটার রাজনীতিকে, এই দেশটার খেলাধুলাকে, এই দেশটার সংস্কৃতিকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিলো। কিন্তু ঘাতকেরা তা হতে দেয়নি। শেষ অবধি এই দেশের জন্য বড় এক আফসোসের নাম থেকে গেছেন শেখ কামাল।

আজ এই মহানায়কের জন্মদিনে আমার সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা।

লেখক: নিয়াজ মোর্শেদ এলিট, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়