মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনা/
বাবার সঙ্গে সজীবের শেষ কথা ছিল ‘আল্লাহ হাফেজ’

সিভয়েস প্রতিবেদক 

প্রকাশিত: ২০:০৯, ২৯ জুলাই ২০২২
বাবার সঙ্গে সজীবের শেষ কথা ছিল ‘আল্লাহ হাফেজ’

নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাবা ও ভাই।

‘ও ভাই আর পোয়া নাই, আর পোয়া নাই মারা গিয়্যে,আই চিটাগং মেডিকেল’— বাকি কথা শেষ করার আগেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাবা মো. হামীদ। মুঠোফোনে কোন এক আত্মীয়কে ট্রেন দুর্ঘটনায় বড় ছেলে সজীবকে হারানোর কথা বলছিলেন তিনি। সজীবের মৃত্যুর খবর যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য শোকে পাথর করে দিয়েছে বাবা হামীদকে। ক্ষণে ক্ষণে ছেলের জন্য আহাজারি করে মুর্ছা যাচ্ছিলেন এ বাবা। ছেলেকে আল্লাহ হাফেজ বলে বিদায় দিয়েছিলেন তিনি। ছেলের সঙ্গে এ কথাই যে শেষ কথা হবে তা ঘুনাক্ষরে ভাবতে পারেননি তিনি। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত জিয়াউল হক সজীবের বাবা মো. হামীদ সিভয়েসকে বলেন, 'নামাজ শেষে বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছি; ওই সময় পাশের বাড়ির ভাবি এসে মিরসরাইয়ে এক্সিডেন্টের কথা বলে। তাড়াতাড়ি ছেলেকে কল দিলাম। দেখি মোবাইল বন্ধ। খাবার রেখে ছুটে গেলাম। মাঝপথে একটা এম্বুলেন্সে করে এখানে (চমেক হাসপাতাল) চলে এলাম। আমার ছেলেকে তো পাইনি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছি। সামান্য মুদি দোকানের কর্মচারী আমি। আমার আশা ভরসা সব শেষ।'

ভাইয়ের শোকে মুর্ছা যাচ্ছিলেন সজীবের ছোট ভাই তৌসিব। আহাজারি করে বলছেন, ও আল্লাহ আমাকে নিলে না কেন। আমার ভাইকে ফিরাই দাও। আমার ভাইকে এনে দাও তোমরা। আমার জানের ভাইটা কই। ভাইরে, তুই কই?'

বাবা হামীদ আর ছোট ভাই তৌসিবের কান্নায় চোখ জলে ছলছল করে উঠে উপস্থিত সকলের। বন্ধু, সহপাঠী আর এলাকাবাসীর কারণে  চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের জায়গায় তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই।

আজ শুক্রবার (২৯ জুলাই ) দুপুরে ঝর্ণায় ঘুরতে গিয়ে ঝরে গেলো ১১ প্রাণ। বয়সে সবাই তরুণ তুর্কী। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ গেটম্যানের ভুলেই ঝরেছে এতো প্রাণ। 

দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সেই মাইক্রোবাসের ১৮ যাত্রীর মধ্যে ১১ যাত্রীই ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সাতজন। এরমধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং একজন আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন। আশঙ্কামুক্ত মো. ইমন নিজেই মাইক্রোবাসে ১৮ জনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হতাহত সকলে ‘আর এন্ড জে' নামের একটি কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও শিক্ষক। নিহতদের মধ্যে চারজন শিক্ষক, ছয়জন ছাত্র ও মাইক্রোবাসের চালক আছেন। 

স্নাতক পড়ুয়া চারবন্ধু মিলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ধার দেনা করে দুইমাস আগে হাটহাজারীতে আর এন্ড জে নামের একটি কোচিং সেন্টারের যাত্রা শুরু করে। যাত্রার পর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কোচিং সেন্টারটির শিক্ষকরা এসএসসি পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু তাদের আর বাড়ি ফেরা হলো না। তাদেরই একজন মোস্তফা মাসুদ রাকিব। রাকিবের চাচা সারওয়ার বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলেটা আর ফিরবে না। ওর বাবা মা কেমন করে বাঁচবে। আমি কি করে ওদের সান্ত্বনা দিবো। কার ভুলে আমার ভাইয়ের ছেলেটা মরে গেলো। আমি এর বিচার চাই।'
সিভয়েস/এসআর

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়