ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং/
চট্টগ্রামে ১৮৪৬ হেক্টর ফসল নষ্ট, বেশি ক্ষতি বাঁশখালীতে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২৭ অক্টোবর ২০২২
চট্টগ্রামে ১৮৪৬ হেক্টর ফসল নষ্ট, বেশি ক্ষতি বাঁশখালীতে

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় খাল বিল তলিয়ে গেছে। আর এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। চট্টগ্রামে আমন ধান এক হাজার ৪৮২ হেক্টর ও শীতকালীন সবজির ক্ষতি ৩৬৪ হেক্টর মিলে মোট ১ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁশখালীতে। ওই উপজেলায় আমন ধান এবং শীতকালীন সবজি মিলে ক্ষতি হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমি। অন্যদিকে সিত্রাংয়ের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেয়েছে চন্দনাইশ উপজেলার কৃষকরা। সেখানে আমন ধানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও  ৩ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আমন ধান ও শীতকালীন সবজি মিলে ১ হাজার ৮৪৬ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে আমন ধান ১ হাজার ৪৮২ হেক্টর ও শীতকালীন সবজি ৩৬৪ হেক্টর জমির। আর আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁশখালী আর ক্ষয়ক্ষতি শূন্য ছিল চন্দনাইশ।

আমন ধানে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলো হলো— মিরসরাই উপজেলার ১৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টরের মধ্যে ৬০ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ছয় হাজার ৪৫ হেক্টরের মধ্যে ১৫০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ২১ হাজার ৩৯০ হেক্টরের মধ্যে ৫০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৯ হাজার হেক্টরের মধ্যে ৬০ হেক্টর, রাউজানে ১২ হাজার ১০ হেক্টরের মধ্যে ৪৫ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টরের মধ্যে ৪৫ হেক্টর, বোয়ালখালীতে চার হাজার ৭৫৫ হেক্টরের মধ্যে ৩৮ হেক্টর, পটিয়ায় ১০ হাজার ৮৭৫ হেক্টরের মধ্যে ২০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১ হাজার ৪৯০ হেক্টরের মধ্যে ৭০ হেক্টর, আনোয়ারায় ৭ হাজার ৫৩০ হেক্টরের মধ্যে ৬০ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ১০ হাজার ৮৬৪ হেক্টরের মধ্যে ৪৯ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ১১ হাজার ৮৮৫ হেক্টরের মধ্যে ১০ হেক্টর, সন্দ্বীপে ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টরের মধ্যে ২০ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১৫ হাজার ৮৫০ হেক্টরের মধ্যে ৮শ’ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। এতে চন্দনাইশ উপজেলার ৮ হাজার ২৪৫ হেক্টর ফসলের মধ্যে কোনো ক্ষতি হয়নি। এছাড়া নগরের পাঁচলাইশে ৬৪০ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে শীতকালীন সবজি ক্ষেতে ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলাগুলোর মধ্যে— মিরসরাইয়ে ৬৭৯ হেক্টরের মধ্যে ৬ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ২ হাজার ৩১১ হেক্টরের মধ্যে ১০ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৬৬৯ হেক্টরের মধ্যে ৭০ হেক্টর, হাটহাজারীতে ১৬০ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, রাউজানে ৪৫ হেক্টরের মধ্যে ৭ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৫৮৫ হেক্টরের মধ্যে ১২ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ৩৭০ হেক্টরের মধ্যে ২৫ হেক্টর, পটিয়ায় ২৫৪ হেক্টরের মধ্যে ৯ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ১৪৯ হেক্টরের মধ্যে ৮ হেক্টর, আনোয়ারায় ৩৩৮ হেক্টরের মধ্যে ২৫ হেক্টর, চন্দনাইশে ৪৭২ হেক্টরের মধ্যে ৩ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ৭৪ হেক্টরের মধ্যে ১৩ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ৬শ’ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, সন্দ্বীপে ৬০ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১ হাজার ২শ’ হেক্টরের মধ্যে ১৫০ হেক্টর শীতকালীন সবজির ক্ষতি হয়। এছাড়া নগরের পাঁচলাইশের ১৩৮ হেক্টরের মধ্যে ২ হেক্টর, পতেঙ্গায় ১১ হেক্টরের মধ্যে ৪ হেক্টর এবং ডবলমুরিংয়ে ৩৬ হেক্টরের মধ্যে ৫ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান সিভয়েসকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে চট্টগ্রামের অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ফসলের রোপনের উপর ভিত্তি করে ১ বিঘা জমি পরিমাণ সার ও বীজ দেওয়া হবে। এ বরাদ্দটা প্রত্যেক উপজেলার কৃষকদেরই দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত আর না হোক। তবে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের এ বরাদ্দ আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া হবে।’

কবে নাগাদ এসব বিতরণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাদ্দ হাতে পেয়েছি। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে সব উপজেলায় এসব বিতরণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মোট ৬৬টি ইউনিয়নের ৫৮ হাজার ৫৭২ জন মানুষ দুর্যোগের কবলে পড়ে। এছাড়া চট্টগ্রামের ৫৮৫৪ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এরমধ্যে আংশিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭৬০ এবং সম্পূর্ণ বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ৯৪টি। এছাড়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রায় শত কোটি টাকার পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হয়।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়