Cvoice24.com

লবণবোঝাই ট্রাক চলে পুলিশের টোকেনে!

জাহেদ হোসাইন, সাতকানিয়া

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ২১ মার্চ ২০২৪
লবণবোঝাই ট্রাক চলে পুলিশের টোকেনে!

লবণপানিতে মরণফাঁদ হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। এই সমস্যা অনেক পুরনো। তবু প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই চলছে লবণ বোঝাই ট্রাক। এতে পিচ্ছিল সড়কে হরহামেশা ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে। বিধিনিষেধ না মানলেও হাইওয়ে পুলিশের ‘টোকেনে’ সড়কে পার পেয়ে যাচ্ছে এসব ট্রাক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকান, নয়াখালের মুখ ও চারা বটতল এলাকায় অবস্থান নেয় হাইওয়ে পুলিশের টিম। সেখানে লবণ বোঝাই ট্রাক আটকে নেওয়া হয় মাসোহারা। তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি)।

দোহাজারী এলাকার আজগর আলী সেলিম বলেন, ‘সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে দোহাজারী হাইওয়ে থানার টহল পুলিশের গাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার মৌলভীর দোকান, নয়াখালের মুখ ও চারা বটতল এলাকায় অবস্থান নেয় আর রাতভর লবণবাহী ট্রাকের চাঁদা আদায় করে টোকেন দিতে থাকে। এর ফলে লবণ বোঝাই ট্রাকগুলো পার পেয়ে যাচ্ছে সহজেই।

জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া ও মহেশখালীতে উৎপাদিত শত শত মেট্রিক টন লবণ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত কক্সবাজার মহাসড়ক পথে চলাচল করে। এসব ট্রাকের গন্তব্য থাকে পটিয়ার ইন্দ্রপোল নয়তো চট্টগ্রাম নগরের মাঝিরঘাট। ট্রাকগুলো থেকে পানি নিঃসৃত হয়ে মহাসড়কে পড়ে। মহাসড়কের পাশের ইটভাটায় মাটি সরবরাহের সময় মহাসড়কে ছিটকে পড়া এঁটেল মাটি আর লবণ নিঃসৃত পানি মিশে সড়কের উপর পিচ্ছিল আবরণ তৈরি করে। রাতের কুয়াশায় পিচ্ছিল আবরণ মন্ডে পরিণত হয়ে মহাসড়ককে বিপজ্জনক মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে।

রাতে এবং ভোর বেলায় সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলমান গাড়ি ব্রেক কষলেই পিচ্ছিল আবরণের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। লবণ পরিবহনে ট্রাকে জিওট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না লবণ ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনিক শিথিলতার কারণে চালকেরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
 
এ কারণে প্রতিদিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে আর পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকে।

এছাড়া লবণ-পানিতে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ নষ্ট হচ্ছে । কার্পেটিং উঠে গিয়ে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে ছোট-বড় গর্ত। একদিকে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অন্যদিকে গর্তের কারণে বিকল হচ্ছে যানবাহন।

আবদুল আজিজ নামে এক পথচারী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সকালে রামু থেকে চকরিয়া যাওয়ার পথে লবণের পানির কারণে চোখের সামনে দুটি এক্সিডেন্ট দেখলাম। সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত মহাসড়ক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আবার দিনে সূর্যের আলোতে মহাসড়ক শুকিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় গাছপালার কারণে আলো না পড়ায় পিচ্ছিলতা থেকে যায়।’

নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর বলেন, ‘লবণের মৌসুমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ভর্তি করে লবণ পরিবহন করা হয়। এ সময় গাড়ি থেকে নিঃসৃত লবণপানি এবং ইটভাটায় সরবরাহের ছিটকে পড়া মাটি মিশে পিচ্ছিল আবরণ সৃষ্টি হচ্ছে। রাতের কুয়াশা ওই আস্তরণকে আরো পিচ্ছিল করে তোলে। মহাসড়কের এ পিচ্ছিলতার কারণে অধিকাংশ সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। লবণ পরিবহনের সময় নিঃসৃত পানি যাতে মহাসড়কে না পড়ে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগী হতে হবে।’

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি খান মোহাম্মদ এরফান বলেন, ‘লবণবাহী ট্রাক এ মহাসড়কে অনেক কমে গেছে। লবণবাহী ট্রাক এখন পেকুয়া বাঁশখালী হয়ে শোধনাগারে যাচ্ছে। অল্প যেগুলো চলে মহাসড়কের ক্ষতি হলে তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

লবণবাহী গাড়ি থেকে বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। কেউ বলে থাকলে মিথ্যা বলেছেন। হাইওয়ে পুলিশ সড়কে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করে।’ চাঁদাবাজি করবে কেন— পাল্টা প্রশ্নও রাখেন তিনি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়