বে-টার্মিনালে শুরু হচ্ছে ডেলিভারি ইয়ার্ডের কাজ, কমবে যানজট

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১৭ নভেম্বর ২০১৮
বে-টার্মিনালে শুরু হচ্ছে ডেলিভারি ইয়ার্ডের কাজ, কমবে যানজট

নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯০৭ একর ভূমির মধ্যে ৬৮ একর ভূমির অধিগ্রহণ মূল্য বাবদ ৩৬৮ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে বেশি সক্ষমতা সম্পন্ন এই টার্মিনাল বাস্তবায়নের আগে নির্মিত হবে ডেলিভারী ইয়ার্ড। যেখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানির সকল পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হবে। এসব পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য ট্রাক, কাভার্ডভ্যান'সহ যাবতীয় পরিবহনকে আর চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে হবে না। ডেলিভারি ইয়ার্ডে অপারেশন শুরু হলে দীর্ঘদিনের যানজটের কবল থেকে মুক্ত হবে চট্টগ্রাম মহানগর। শীঘ্রই বে-টর্মিনালে ডেলিভারি ইয়ার্ডের কাজ শুরু হচ্ছে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বে-টার্মিনালের মাটি ভরাটের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। এরপর হবে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ। এ দুটি কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর দিয়ে বে-টার্মিনাল পর্যন্ত আভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হবে। সড়কের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত টোল সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য বে-টার্মিনালে যাবে। আগামী ১ বছরের মধ্যে বে-টর্মিনালে ডেলিভারি ইয়ার্ডের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন সচিব ওমর ফারুক। 

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনই মূলত চট্টগ্রাম নগরে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। যানজট নিরসনে টোল সড়ক নির্মাণ করা হলেও যানজটের কবল থেকে মুক্তি মেলেনি। এর মধ্যে পোর্ট কানেকটিং সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে বন্দর এলাকায় প্রতিনিয়ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। নগরে একাধিক ফ্লাইওভার নির্মিত হলেও পরিত্রাণ মিলছে না যানজট থেকে। আর এসব কারণে বন্দর থেকে পণ্য খালাস এবং পণ্য সরবরাহে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সকল পক্ষকেই হয়রানির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। 

হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একই সড়কে হওয়ার করণে আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী বিমানের যাত্রীদেরও পোহাতে হয় এই বিড়ম্বনা। যানজটের কবলে পড়ে অনেক সময় ফ্লাইট মিস করার ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরকে যানজটমুক্ত করতে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে চট্টগ্রাম শহরের বাইরে নিয়ে গেলে যানজট নিরসন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনকে কেন্দ্র করে মূলত চট্টগ্রাম নগরে যানজট লেগেই আছে। 
এছাড়া বিমানবন্দরে যেতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর এরিয়া পার হয়ে যেতে হয়। বিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে অনেক সময় দুই/তিন ঘন্টা লেগে যায়। এতে সময়ের অপচয় হয়। অনেক সময় বিমানের ফ্লাইট মিস্ হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এই অবস্থায় বে-টর্মিনাল ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের ফলে যানজট নিরসন হবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। 

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারি সাথে জড়িত একাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্তাধিকারীরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে লোড-আনলোডে যতক্ষণ সময় যায় তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয় চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ এবং বের হতে। অনেক সময় পুরো একদিন লেগে যায় বন্দরে ইন-আউট করতে। এতে পণ্য পরিবহনের খরচ দ্বিগুণ হয়ে যায়। বে-টার্মিনালে ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মিত হলে নগরবাসী যাটজটের কবল থেকে মুক্তি পাবে। 

আন্তর্জাতিক পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাই'সহ বিভিন্ন এলাকায় 'ইকোনোমিক জোন' বাস্তবায়নের পথে। এ অবস্থায় দিন দিন বন্দরে পণ্য পরিবহনের মাত্রা বাড়ছে। এই অবস্থায় যানজট একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বে-টার্মিনালে ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণই যানজট নিরসনের একমাত্র সমাধান হতে পারে। 

সিভয়েস/এসএ/এস.আর 

শাহাদাৎ চৌধুরী 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়