করোনায় বাড়লো কমলার দাম

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৪ এপ্রিল ২০২১
করোনায় বাড়লো কমলার দাম

করোনার প্রভাবে আচমকা বেড়ে গেছে কমলালেবুর দাম। ভিটামিন ‘সি’—তে ভরপুর কমলার রসে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ; এই ধারণাতেই বিক্রিও বেড়েছে এই ফলের। সেই সাথে দাম বেড়েছে আপেল ও মাল্টার। 

রবিবার (৪ এপ্রিল) একাধিক ফল ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার প্রকোপ বাড়ার পর থেকেই কমলা, মাল্টাসহ ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফলের দাম বেড়ে যায়। চাহিদার তুলনায় বাজারে এসব ফলের সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়ে গেছে। 

ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দফায় দফায় বাড়ছে কমলা লেবুর দাম। আগে কমলা কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো। নতুন করে করোনার প্রকোপ বাড়ার আগে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে কমলা বিক্রি হয়েছে। সেখান থেকে এক লাফে দাম বেড়ে এখন কমলার কেজি ২৫০ টাকা। 

এদিকে শুধু কমলা নয়, করোনার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাল্টা ও আপেলের দাম। আগে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মাল্টা এখন ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

অপরদিকে কেজি প্রতি ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া আপেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া নগরীতে ২৮০ টাকার আনার ৪০০ টাকায়, প্রতিকেজি তরমুজ ৪০ টাকা, ড্রাগন ৩৫০ টাকা, পেয়ারা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নগরের লালখানবাজারে ফল কিনতে আসেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন। তিনি সিভয়েসকে জানান, করোনার প্রকোপ আবারো বেড়েছে এবং সেটি আগের চেয়ে আরো শক্তিশালী। করোনায় ভিটামিন ‘সি’ সম্বৃদ্ধ ফল শরীরের জন্য বেশ কার্যকরী। তাই কমলা কিনতে এসেছি। কিন্তু কমলার দাম শুনে আমি রীতিমত অবাক। কেজিতে ২৫০ টাকা দাম চাচ্ছেন দোকানদার। দামাদামি করার সুযোগ দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। উল্টো দাম আরো বাড়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। 

নগরের মহিলা কলেজ মোড়ে ফল বিক্রেতা আবুল হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনা বাড়লে আপেল ও মাল্টার চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় চাহিদা এত বেশি থাকে, সে পরিমাণে সরবরাহ থাকে না। তাই দামটাও বেড়ে যায়। বর্তমানে আমরা প্রতি কেজি কমলা ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি। সামনে তা ৩০০ টাকা পর্যন্ত পৌছতে পারে।’ 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আপেল, কমলা, ডালিম, আঙুর, নাশপাতি ও লেবুজাতীয় ফল মিলিয়ে ৬ লাখ ১৬ হাজার টন ফল আমদানি করা হয়েছে। তাছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩১ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টন ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬১ হাজার টন বিদেশি ফল আমদানি করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮০ হাজার টন আপেল, ৫২ হাজার টন মাল্টা আমদানি হয়েছে। তাছাড়া কমলা, আঙ্গুর, নাশপাতি, ডালিম আমদানি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ টনেরও বেশি। 

ফল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন,  ‘রমজানকে সামনে রেখে আমরা পর্যাপ্ত ফল আমদানি করেছি। পাশপাশি করোনার সংক্রমণও আবার বেড়েছে। সব মিলিয়ে কমলা, আপেল, মাল্টা, আঙ্গুরটাই বেশি আমদানি হচ্ছে এখন। তবে চাহিদা বেড়ে গেলে বাজারে ফলের সরবরাহে টান পড়বে, এটা স্বাভাবিক। তখনই কেবল দামটা বেড়ে যায়।’ 

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ যেহেতু আবারো বেড়েছে, তাই মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন হওয়া খুব জরুরি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের টাটকা ফল রাখা জরুরি। বিশেষ করে এ সময় ভিটামিন সি সম্বৃদ্ধ ফল বেশি খেতে হবে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ‘করোনাকে পুঁজি করে অনেক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজি করে ফলে দাম বাড়িয়ে দেয়। এজন্য প্রশাসনকে আরো বেশি কঠোর হওয়া জরুরি। পাশাপাশি লকডাউন আতঙ্কে অনেকেই আগেভাগে পণ্য কিনে মজুদ করে রাখেন। এটার সাথে আমরা একমত পোষণ করি না। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ রয়েছে। ক্রেতাদের প্রয়োজন মোতাবেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা উচিত।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়