অবশেষে সেই ১০৮ গাড়ির নিলামের ডাক কাস্টমসের, বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ২৫ মে ২০২২
অবশেষে সেই ১০৮ গাড়ির নিলামের ডাক কাস্টমসের, বিক্রি নিয়ে শঙ্কা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল ১০৮ গাড়ি আবারো নিলামে তুলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। আগামী ১৯ জুন এসব গাড়ির নিলাম অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। তবে গাড়িগুলো বছরের পর বছর বন্দরে পড়ে থাকায় ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় বিক্রি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেহেতু এর আগেও নিলামে তুলে বিডারদের (ক্রেতা) কাছ থেকে তেমন কোন সাড়া পায়নি কাস্টমস।

বিশ্বে গাড়ি প্রস্তুতকারক খ্যাতনামা চার রাষ্ট্র জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ল্যান্ড রোভার, টয়োটা, ল্যান্ড ক্রুইজার, মিতসুবিশি, লেগাস, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে। তবে গাড়িগুলো নিলামে তুলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কোটি টাকা দাম হাকালেও ক্রেতারা অর্ধলাখ টাকার উপরে উঠতেই চান না। এ কারণে বার বার গাড়িগুলো অবিক্রিত রয়ে যাচ্ছে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, বন্দর শেডে নিলামযোগ্য ১০৮ গাড়ি রয়েছে। এরমধ্যে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৮৬টি গাড়ির ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) পাওয়া গেছে। ফলে এখন গাড়িগুলো কোন প্রকার বাধা ছাড়াই বিক্রির সুযোগ হয়েছে। যদিও অনুমতি পাওয়া গাড়িগুলো পাঁচ বছরের বেশি পুরনো। তাই এসব গাড়িতে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

সূত্র আরো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসে গাড়িগুলোর প্রক্রিয়াগত সব ধরনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। ফলে আগামী ১৯ জুন গাড়িগুলো কিনতে আগ্রহী দরদাতাদের দরপত্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দুইভাবে অর্থাৎ অনলাইনে ও প্রথাগত নিয়মে দরপত্র জমা দিতে পারবেন ক্রেতারা। এ কারণে আগামী ১২ ও ১৩ জুন দরপত্র জমা দেয়ার সুযোগ দিচ্ছে কাস্টমস। পাশাপাশি ৫ থেকে ৯ জুন পর্যন্ত আগ্রহী ক্রেতারা গাড়িগুলো দেখারও সুযোগ পাচ্ছেন।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে লুকোচুরির কোন সুযোগ নেই। ক্রেতারা নিজেরাই দেখেশুনে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তারপর নিজেদের সিদ্ধান্তমত দাম নির্ধারণ করে দরপত্র জমা দিতে পারবেন। যথাযথ দরদাতার হাতেই গাড়ি বিক্রি করা হবে। ১০৮ গাড়ির মধ্যে ৮৬টি গাড়ি পাঁচ বছরের বেশি পুরনো। তবে এসব গাড়িতে ভাল সাড়া ও দর পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তার।

নগরের চৌমুহনী এলাকার গাড়ি ব্যবসায়ী রমনা কারের মালিক মো. সাদেক সিভয়েসকে বলেন, গাড়ি নিলামে উঠলেই আমরা সস্তায় কিনে ফেলতে পারবো তা কিন্তু নয়। দরপত্র জমা দেয়ার আগে আমাদেরকে অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয়। প্রথমত গাড়ির বর্তমান কন্ডিশন কেমন, যে মডেলটা আমি বিক্রির জন্য কিনবো, মার্কেটে তার চাহিদা আছে কিনা? এরকম অনেক বিষয় রয়েছে। নিলামে ওঠা গাড়িগুলো বেশ পুরনো মডেলের। কাস্টমস যদি একটি গাড়ি দুই কোটি টাকা দাম দেয়, তার উপর নিয়ম অনুযায়ী ৬০ শতাংশ মূল্য কাভারেজ করতে গেলে পুরনো ওই গাড়ির পেছনে আরো ১ কোটি টাকা খসাতে হবে। অথচ একজন ক্রেতা এক কোটি টাকা খরচ করে ভালো ব্রান্ডের নতুন মডেলের গাড়ি কিনতে পারছেন। আবার নিত্যনতুন মডেলের উপর ক্রেতার আগ্রহ বেশি।

গাড়ি আমদানিকারক মোসলেম উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, গাড়িতো কিনলেই হবে না। নিলামে তোলা গাড়িগুলোর মডেল বেশ পুরনো হয়ে গেছে। আমরা গাড়ি কিনে এনে বিক্রি করতে না পারলে শোরুমে পড়ে থাকবে। এতে আবার আমাদেরকে লোকসানে পড়তে হবে। গাড়ির ব্যবসায় এখন প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। তাই বুঝেশুনে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।   

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) মো, আল আমিন সিভয়েসকে বলেন, গাড়িগুলো নিলামে তুলতে সহজে ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) পাওয়ার জন্য আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। তারা সবদিক বিবেচনা করে ১০৮ গাড়ির মধ্যে ৮৬টি গাড়ির ওপর সিপি দিয়েছেন। তবে আগ্রহী ক্রেতারা ১০৮ গাড়ির উপরেই দরপত্র জমা দিতে পারবেন। আগামী ১৯ জুন আমরা দরপত্র খুলবো। আশা করছি এবার আমরা ভালো সাড়া পাবো।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়