সুবাস ছড়াতে সুগন্ধির খোঁজে

মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৭ এপ্রিল ২০২৪
সুবাস ছড়াতে সুগন্ধির খোঁজে

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে গুণে গুণে আর ২ বা ৩ দিন পর ঈদ। এখন সুগন্ধি ও টুপির খোঁজে ব্যস্ত অনেকে। ঈদে পাঞ্জাবির সাথে মিলিয়ে টুপি ও পছন্দের সুবাস গায়ে মাখাতে ভিড় করছেন আতর-টুপির দোকানে। ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে খুঁজে নিচ্ছেন পছন্দের আতর। ঈদ আনন্দে আতর-টুপি ছড়িয়ে সেজে বসে আছে নগরের অলি-গলি ও ফুটপাত।

শনিবার (৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা শাহ জামে মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাত ও বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, এখন সবার নজর আতর এবং টুপির দিকে। তাই শেষ মুহূর্তে ক্রেতারা ভিড় করছেন আতর আর টুপির দোকানগুলোতে। ক্রেতাদের হাতে পছন্দের টুপি, আতর, জায়নামাজ কিংবা তসবিহ তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা।

ছোট ছোট দোকানে একটার পর একটা সাজানো রাখা হয়েছে বাহারি সব টুপি। ১০ বছরের ছেলে সন্তানকে নিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরের আন্দরকিল্লা এলাকায় আতর ও টুপি কিনতে আসেন মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা ইফতেখার আলম। তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ঘরের সবার জন্য জামা-কাপড়সহ অন্যান্য সব কেনাকাটা শেষ। তবে ঈদের জন্য নতুন করে টুপি এবং আতর কেনা বাকি ছিল। সেইগুলো কিনতে আজ ছেলেকে নিয়ে বের হয়েছি। পাশাপাশি জায়নামাজ দেখছি। পছন্দ হলে নিয়ে নিব।

নজর এখন বাহারি রঙের টুপিতে

রঙ-বেরঙের টুপিতেই নজর সব ক্রেতাদের। এছাড়া শিশুদের বেশ পছন্দের বিভিন্ন রঙের টুপি। অন্যদিকে বড়রা সাদা ও হালকা রঙের টুপিই বেশি পরেন। তাই বিক্রেতাদের ঘিরে বিভিন্ন ধরনের নকশার টুপি খুঁজতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। নগরে টুপির জন্য বিখ্যাত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ এলাকা। এছাড়া রিয়াজউদ্দিন বাজার ছাড়াও বড় বিপণীবিতানগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে টুপি।

আন্দরকিল্লা এলাকায় বিভিন্ন রঙের চায়না টুপি প্রতিটি ৬০ থেকে ১২০ টাকা, আল ফারুক টুপি ৮০ টাকা, ওমানি টুপি ১৬০ থেকে ২৮০ টাকা, পাকিস্তানি চুমকি টুপি ২৮০ টাকা, সুলতানি টুপি ৩৭০ টাকা, ঢাকার নায়েম ক্যাপ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কম দামি টুপির মধ্যে কাপড়ের লম্বা টুপি মান ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, হাতে বোনা জালি টুপি ৬০ থেকে ১৫০ টাকা, ভারতের নেটের টুপি ১৫ থেকে ২৫ টাকা ও প্লাস্টিকের টুপি ১৫ থেকে ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের চুমকি, মখমল কাপড়ের টুপি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই এলাকার টুপি বিক্রেতা আরাফাত হোসেন জিসান। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকেই টুপি কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় ছিল। বেচাবিক্রিও ভালো হয়েছে। আজকে (শনিবার) শবে কদর। আকজের দিনেও ভালো টুপি বিক্রি হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। অধিকাংশ মানুষ সাদা টুপি পছন্দ করলেও তরুণদের চোখ রঙিন টুপির দিকে।’

টুপি কিনতে আসা পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা শেষ করেছি। আমি এখন ছেলে আর আমার জন্য টুপি কিনতে এসেছি।’

ভিড় আতরের দোকানেও

সুগন্ধি লাগানো মহানবীর (সা.) সুন্নত। তিনি সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদগাহে যেতেন। তাই সব শ্রেণির মুসল্লি সুগন্ধি লাগানোকে সওয়াব মনে করেন। ঈদগাহে আতর লাগিয়ে যান। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান ঘুরে আতরের দোকানগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ফেরদাউস, খশ, মেশক আম্বার, কস্তুরি, মক্কা প্রভৃতি আতরের কদর আছে। ছোট এক শিশি সাধারণ আতর বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। এসবের মধ্যে কিছু কিছু আতরের দাম প্রতি তোলা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকাও রয়েছে।

শাহ আমানত মাজার গেট সংলগ্ন আতর-টুপির দোকানগুলোতে সবসময় ভিড় দেখা গেলেও রমজানে তাদের বেচাকেনা কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তাদের দাবি— ঈদকে ঘিরে রমজানের সময় তাদের চেয়ে ফুটপাত এবং বিভিন্ন শপিংমলে বিক্রি হয় বেশি। মানুষ এখন ওইসব দোকানেই ভিড় করছে। তাই তাদের বেচাকেনা কম।

এদিকে ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন শপিংমলে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের আতর। বিভিন্ন দোকান ঘুরে জানা গেছে, স্কয়ারের মদিনা আতর ৬০ টাকা, কিউটের চন্দন আতর ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, সৌদি আল রিহাব কোম্পানির ৬ মিলিলিটারের সিলভার, আল ফারেস, রেড রোজ, লর্ডস, আসিল, অরজিনাল, সিলভার স্টোন নামের আতর বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা, কানুজ কোম্পানির ১ আউন্স (২৫ এমএল) আতরের দাম ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, জান্নাতুল ফেরদৌস আতর (৬ মি.গ্রা.) ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পাকিস্তানি গুলে লালা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে  শপিংমলের আতরের দোকানে সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩২ হাজার টাকা দামের আতরও রয়েছে।

এদিকে, বিভিন্ন দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে ৪শ’ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে।

কোথায় পাবেন আতর-টুপি-জায়নামাজ?

চট্টগ্রামের সব শপিংমলেই মিলছে টুপি, আতর, জায়নামাজ। তবে, একটু কম দামে কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লা শাহ জামে মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাতের দোকানগুলোতে। এছাড়াও নগরের অনেক মোড়ে ভাসমান দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে আতর-টুপি। এদিকে, নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও টেরিবাজার ছাড়াও অভিজাত শপিংমল স্যানমার ওশান সিটি, আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, আখতারুজ্জামান সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, লাকি প্লাজা, সিঙ্গাপুর মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, গুলজার টাওয়ার, কেয়ারি ইলিশিয়াম, চকভিউসহ সব মার্কেটেই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন টুপি ও আতর বিক্রেতারা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়