‌‘শেভরন’ নিজেই যেন করোনাভাইরাস!

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ৭ জুলাই ২০২০
‌‘শেভরন’ নিজেই যেন করোনাভাইরাস!

সারাদেশের মত বাংলাদেশে বাড়ছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এই ভাইরাসের নমুনা টেস্টের ল্যাব সংখ্যা। আগে শুধু চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে করোনা টেস্ট করানো হলেও জনগণের দুর্ভোগ কমাতে এ টেস্ট বেসরকারি হাসপাতালেও করার সিদ্ধান্ত নেন সরকার। কিন্তু এতে বিপরীত ইঙ্গিত করেন জনগণ।

কেননা, সরকারি হাসপাতালে নমুনা টেস্ট আর বেসরকারি হাসপাতালের নমুনা টেস্ট ফলাফলে দেখা দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। এক জায়গায় পরীক্ষা দিলে রিপোর্ট নেগেটিভ আবার অন্য জায়গায় দিলে পজিটিভ। বেশির ভাগ রোগীরা এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে চট্টগ্রামের শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি (প্রাইভেট) লিমিটেড এ নমুনা টেস্ট করিয়ে।

গতকাল সোমবার (৬ জুলাই) একজনের করোনা টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে উঠে আসে আবারও এমন অভিযোগ। 

ওই ভুক্তভোগী কাজী বাহাউদ্দিন ফারুক মুন্না সিভয়েসকে বলেন, ‘আমার মেজ ভাইয়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে আমরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে অনেকদিন চিকিৎসা করার পর তিনি সুস্থ হয়েছেন। এছাড়াও সেখানে ২বার পরীক্ষায় করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। পরে হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শে আমরা চট্টগ্রাম চলে আসি।'

তিনি আরও বলেন, 'কিন্ত ৩/৪ দিন যাওয়ার পর আমার ভাইয়ের একটু খারাপ লাগলে তাকে আমরা আবার শেভরনে গিয়ে করোনা টেস্ট করাই। কিন্তু এতে গত ৪ জুলাই রিপোর্ট আসে পজিটিভ। যেহেতু সবসময় শুনে আসছি শেভরনের রিপোর্ট মাঝে মাঝে ভুল আসে। সেই সন্দেহবসত আমরা আবার ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাই। সেখানে গতকাল ৬ জুলাই রিপোর্ট আসে নেগেটিভ।’

দুই জায়গায় ভিন্ন রিপোর্ট দেখে তিনি বলেন, ‘২/৪ দিনের ব্যবধানে একই টেস্ট একেক জায়গায় একেক রিপোর্ট তাহলে কোনটা সঠিক মনে করবো। তবে আমার প্রশ্ন হলো ঢাকাসহ চট্টগ্রামে ৩ বারের টেস্টে নেগেটিভ আসলে শেভরনে কেন পজিটিভ আসবে। এছাড়াও যদি শেভরনে সবার পরে টেস্ট করিয়ে রিপোর্ট পজিটিভ পেতাম তাহলে বলতে পারতাম আবার ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু শেভরনের রিপোর্টে পজিটিভ পাওয়ার পরই ইম্পেরিয়ালে যখন করাই তখন কেন নেগেটিভ। তাহলে ভুলটা কাদের এবং ভাইরাসটা কি শুধু শেভরনে টেস্ট করানোর সময় এসেছিল? এতে মনে হয় শেভরনই যেন করোনাভাইরাস!’

এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আরও অনেকে বলেন, 'যদি একই পরীক্ষা ভিন্ন ফলাফল আসে। তাহলে মানুষ কেমনে বুঝবে কোন রিপোর্ট সঠিক। এক জায়গায় পজিটিভ এক জায়গায় নেগেটিভ এমন হলে রোগীরা আরও অুসস্থ হয়ে পড়বে। এতে রোগীরা মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়বে।'

শুধু এ ঘটনা নয়। এরকম আরও ঘটনা ঘটেছে। চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ছাত্র গত ২৫ জুন করোনা পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ল্যাব শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা দেন। ২৮ জুন তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসে। ফলাফলে সন্দেহ হওয়ায় গত ৩০ জুন নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ফের নমুনা দেন তিনি। এবার ফলাফল আসে ‘নেগেটিভ’।

আরেকজন গত ১ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেলে করোনা পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দেন। রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ার কারণে ৩ জুলাই শেভরনে স্যাম্পল জমা দেন। দুইটা রিপোর্টই আসে (৫ জুলাই) রাতে। এতে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে নেগেটিভ আসে, কিন্তু শেভরনের রিপোর্টে আসে পজিটিভ। 

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের গঠিত মোকাবেলা কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়ক ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘আমার কাছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিআইটিআইডি, সিভাসু, চট্টগ্রাম মেডিকেল, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের রিপোর্ট আসলেও শেভরনের রিপোর্ট আসে না। আমি এমন অভিযোগ সমবসময় পাচ্ছি যে শেভরনে পজিটিভ আসলেও অন্যান্য জায়গায় নেগেটিভ আসছে।’

শেভরনের অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শেভরন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুমোদন দিয়েছে। কাদের সুপারিশে এ অনুমোদন দিয়েছে?  তাদের তদন্ত করা উচিত। কারণ, যখন এ অনুমোদন দিয়েছে তখন শেভরনে এ মেশিনটি ছিল কিনা! এবং তাদের বায়োসেফটি ১, ২, ৩ লেভেলের কোন ল্যাব ছিল কিনা। আর যদি থাকতো তাহলে পারমিশনের পর থেকে চট্টগ্রামবাসীকে এ সেবা দিল না কেন?’

চট্টগ্রাম শেভরনকেও ঢাকার জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতালের মতোই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি সরকারের সাথে প্রতারণার সামিল। স্বাস্থ্য প্রশাসনের যারা এটা সুপারিশ করেছে তারা সবাই তাদের সাথে যুক্ত। শেভরনের পিসিআর ল্যাব পারমিশন পাওয়ার ঘটনাটা ঢাকার জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতালের পারমিশন পাওয়ার মতোই প্রতারণার সামিল।'

অন্যান্য ল্যাবের রিপোর্ট পেলেও শেভরনের রিপোর্ট না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কাছে আমারও প্রশ্ন অন্যান্য ল্যাবের মতো শেভরনের রিপোর্ট না আসার কারণ কি। এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে জানবেন বলে তিনি জানান।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি (প্রাইভেট) লিমিটেডের কোভিড-১৯’র প্রজেক্ট অফিসার ডা. শফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, 'যার যার মেশিন টু মেশিন সমস্যা হতে পারে। রিপোর্ট পজিটিভ আসে এটার পক্ষে এবং এটা সত্য। যেখানে নেগেটিভ হয়েছে সেখানে তদন্ত করেন।'

ঢাকাসহ চট্টগ্রামে তিন ল্যাবে নেগেটিভ এবং শেভরনে পজিটিভের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না বলে জানান এবং সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে ওনার সাথে দেখা করতে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সিভয়েসকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে রিপোর্ট ভিন্ন আসতে পারে। যেমন- সেনসিটিভিটি, কে কিভাবে সংগ্রহ করছে, যেখানে পরীক্ষা করাচ্ছে সেখানের জায়গার বিষয় আছে। এছাড়াও জায়গা অনুপাতে ভাইরাস লোডেরও একটাও বিষয় আছে। ভুক্তভোগীরা যদি এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে এ বিষয়ে তদন্ত করবেন বলে তিনি জানান।’

-সিভয়েস/এমএম

মিনহাজ মুহী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়