কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন অক্টোবরে, জানালেন প্রধানমন্ত্রী
সিভয়েস প্রতিবেদক
কর্ণফুলী টানেল। ফাইল ছবি
স্বপ্ন নয় সত্যি; গাড়ি নিয়ে কর্ণফুলী নদীর একপাড় দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাড় দিয়ে উঠার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আর ৯ মাস পর অক্টোবরেই উদ্বোধন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। এমনটিই জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সরকারের তৃতীয় বর্ষপূতি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আগামী অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’ এসময় পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলও উদ্বোধনের কথা জানান সরকার প্রধানমন্ত্রী।
দুটি টিউবের নির্মাণকাজ শেষে এখন ভায়াডাক্ট, অ্যাপ্রোচ সড়ক, টানেলের অভ্যন্তরে সড়ক নির্মাণ, পিচ ঢালাই, ইউটিলিটি সার্ভিস সংযোজন, তিনটি ক্রসিং প্যাসেজ সংযোজন করছে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শতভাগ ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কাজ চলছে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার করে সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীন সরকারে এ টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে।
প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক, যার সুদহার ২ শতাংশ। টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার হলেও মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেলের ব্যাস ৩৫ ফুট ও উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অন্য টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেল দুটির মধ্যপথে তিনটি কানেকটিং প্যাসেজ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ জরুরি প্রয়োজন কিংবা অভ্যন্তরীণ সংস্কারকাজ চলাকালীন একটি টিউব থেকে অন্য টিউবে এসব প্যাসেজ দিয়ে যানবাহন/প্রকল্প কর্তৃপক্ষ চলাচল করতে পারবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে চীনের সাংহাই সিটির মতো বন্দর নগরী চট্টগ্রামে গড়ে উঠছে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকায় গড়ে উঠবে আরও একটি নতুন শহর। নতুন এই শহরের অবকাঠামো একের পর এক নির্মিত হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, টানেলকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক ও টানেলের ভেতরের সড়ক হবে সর্বমোট ৪ লেনের। এর মধ্যে ওয়ান ওয়ে একটি টানেলে সড়ক থাকবে দুই লেনের।
একটি টিউবের সড়ক দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা অভিমুখী এবং অপর টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা অভিমুখী যানবাহন চলাচল করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রতিটি টিউব চওড়া ১০ দশমিক ৮ মিটার বা ৩৫ ফুট এবং উচ্চতা ৪ দশমিক ৮ মিটার বা প্রায় ১৬ ফুট। একটি টিউব থেকে অপর টিউবের পাশাপাশি দূরত্ব প্রায় ১২ মিটার। টানেলের প্রস্ত ৭০০ মিটার। এবং দৈর্ঘ্য তিন হাজার ৪০০ মিটার।