কালুরঘাট সেতুতে কাভার্ডভ্যানে আটকে দীর্ঘ জট

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৬ জানুয়ারি ২০২১
কালুরঘাট সেতুতে কাভার্ডভ্যানে আটকে দীর্ঘ জট

ছবি: সিভয়েস

এমনিতেই নড়বড়ে। ছোট-বড় কোন গাড়ি গেলেই কেঁপে উঠছে পুরো সেতু। সেই কালুরঘাট সেতুর মাঝ অংশে বড় একটি কাভার্ডভ্যান এসে আটকে সৃষ্টি করেছে প্রায় দুই ঘন্টার জট। সৃষ্ট জটের কারণে এই ২ ঘন্টা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ। এমনকি এ সময়টুকুতে আটকে ছিল দোহাজারী থেকে ষোলশহরগামী ট্রেনও। 

বুধবার (৬ জানুয়ারি) সকালে সেতুর ওপর একটি কার্ভাডভ্যানের চাকা পাংচার হওয়াতেই এমন ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সেতুর পশ্চিম দিকে থেকে একটি কাভার্ডভ্যান এসে মাঝ অংশে আটকে যায়। এতে করে এক মুখী এ সেতুতে সৃষ্টি হয় চরম যানজট। সেতুর দু’দিকেই আটকে থাকে শত শত যানবাহন। এমনকি দোহাজারী থেকে ফেরার পথে ৭টা ৫০ মিনিটে সেতুর একপ্রান্তে প্রায় দুই ঘন্টার জটে আটকে থাকে দোহাজারী ডাউন ট্রেন।

একটি বেসরকারী কোম্পানিতে কর্মরত সোহরাব হোসেন তুষার সিভয়েসকে বলেন, ‘সকালে অফিসে যাওয়ার পথে দেখি যানজটে বেহাল অবস্থা। প্রায় দু’ঘন্টা এ যানজটে আটকে ছিলাম। এ কারণে দেরি হওয়াতে আর অফিসেও যেতে পারিনি।’

এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, সৃষ্ট যানজটের কারণে দোহাজারী থেকে ফিরতি ট্রেনটি আটকে ছিল ৯টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। পরে একটি রেকার এসে দুর্ঘটনায় চাকা পাংচার হওয়া কার্ভাডভ্যানটিকে উদ্ধার করে। 

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুতে একটি কাভ্যার্ডভ্যান আটকে যানজট সৃষ্টি হয়। এতে করে দোহাজারী থেকে ফিরতি একটি ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে।’ 

জোড়াতালিতে চলছে কালুরঘাট সেতু

 এ সেতু বারবার সংস্কার-মেরামত করে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের আক্ষেপ, এ সেতু নাকের ডগায় মূলার মত ঝুলিয়ে নির্বাচনী বৈতরণিতে পাড় হয় ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। অন্যদিকে এই সেতুর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় প্রায় ২০ বছর আগে। অর্থাৎ ২০০১ সালে। এরপর ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়। এ সময় ১১ মাস সেতুর ওপর যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এভাবে দফায় দফায় হয়েছে সেতুর সংস্কার কাজ। দীর্ঘদিনের অভিযোগ এই সেতু ‘হচ্ছে-হবে’ বলে দিন পার করছে সংশ্লিষ্টরা।

যে কারণে দেরি হচ্ছে

মূলত এ সেতুর উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও রেলওয়ের ‘দ্বন্দ্বের’ কারণেই পিছিয়েছে নতুন সেতু নির্মাণের কাজ। যদিও গত বছরের ১২ অক্টোবর উচ্চতার প্রশ্নের এই বিরোধটি নিরসন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে।

মূলত প্রথমে রেলওয়ে চেয়েছিল ৭ দশমিক ২ মিটার পরে ৯ মিটার পর্যন্ত হবে নতুন সেতুর উচ্চতা। তবে সেতুর নিচ অংশে জাহাজ চলাচল ও পানি প্রবাহ সঠিক রাখতে ১২ দশমিক ২ মিটার হওয়া উচিত বলে দাবি করেছিল বিআইডব্লিউটিএ। পরে সিদ্ধান্তের জন্য উভয়পক্ষই দ্বারস্থ হোন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখান থেকেই নির্দেশনা আসে নতুন সেতু হলে তার উচ্চতা হবে ১২ মিটার।

ওই সময়ে চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ সিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘সেতুর উচ্চতা নিয়ে সব জটিলতা কেটে গেছে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। রেলওয়ে ও বিআইডব্লিউটিএ’র যৌথ বৈঠকে দ্বিমত থাকার পর দু’পক্ষই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে সিদ্ধান্ত চায়। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব শুনে ১২ মিটারেই কালুরঘাট সড়ক কাম সেতু নির্মাণে অনুমতি দিয়েছেন। ফলে আর কোনও বাধা থাকলো না।’ 

যদিও বা পরবর্তীতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন সিদ্ধান্তের আলোকে নতুনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। নতুন নির্দেশনার আলোকে কাজ করতে অর্থায়ন বাড়বে। ফলে এই জটিলতা কাটিয়ে নতুন সেতুর কাজ শুরু করতে আরও সময়ের প্রয়োজন হবে।

-সিভয়েস/এপি/এমএম

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়