দুর্গম পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ‘আলীনগর’

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৭ জুলাই ২০২২
দুর্গম পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য ‘আলীনগর’

সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের সরকারি খাস জায়গার উপর দুর্গম পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ‘আলীনগর’ নামের এক দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্য। এ যেন বাংলাদেশের মধ্যেই আরেক বাংলাদেশ। যেখানে প্রবেশের আগে অনুমতি নিতে হবে দুই রাজার। বড় রাজা মোহাম্মদ ইয়াসিন ও ছোট রাজা মোহাম্মদ ফারুক। আলীনগর নামটাও তাদের দেওয়া কেননা সরকারি তালিকায় এ নামে কোন গ্রাম নেই এই উপজেলায়। 

দেশের বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও নানা অপরাধে জড়িতদের এখানে এনে আশ্রয় দেয় এই ইয়াসিন ও ফারুক। সন্ত্রাসীরাও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এখানে এসে বসবাস শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় নাম রয়েছে এরকম দাগী অনেক আসামি এখানে রয়েছে বলেও জানা যায়। আলীনগরের সন্ত্রাসীরা বাইরে নানা অপরাধ করে আবার ফিরে আসে। এখানে যেকোন ঘটনার মীমাংসা করেন দুই রাজা। তাদের অনুমতি ছাড়া কেউ থানায় বা অন্য কোথাও অভিযোগ দিতে পারেনা। 

এদের দাপট এতই বেশি যে গত ১৫ জুলাই শুক্রবার স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালা উদ্দিন আজিজ আলীনগর পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে চেয়ারম্যানের গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আরিফকে বেধড়ক মারধর করে ইয়াসিন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। 

সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তাদের সামনে জনপ্রতিনিধিকে মারার ঘটনাকে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তারা বার্তা দিতে চেয়েছে যে এখানে কারো প্রবেশ নিষেধ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, কয়েক বছর আগে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এসে বসবাস শুরু করে ইয়াসিন ও তার পরিবারের লোকজন। এরপর ধীরে ধীরে এখানকার দুর্গম পাহাড়ের একটি অংশ কেটে প্লট আকারে বিক্রি করা শুরু করে দুই ভাই। তাতেই রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়। নিজেদের রাজা উল্লেখ করে গড়ে তোলে নিজেদের আলাদা সাম্রাজ্য আলীনগর। কথিত আছে “ খুন করে আলীনগর চলে যাও তুমি নিরাপদ।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, আলীনগরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা মাত্র দেড় হাজার। তবে এখানে অনেকগুলা ঘর বেঁধে রাখা হয়েছে বিক্রির জন্য। 

সম্প্রতি সরকার আলীনগর ও পুরো জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে একটি বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই অনুযায়ী এখানে তথ্যমন্ত্রীসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য, চট্রগ্রাম সিটি মেয়র ও সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা দফায়-দফায় পরিদর্শন করেন। 

সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখান থেকে অভিযোগ খুব কম আসে। যেকোন অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি ।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়