আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’
লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা, বাবা আর নেই জানে না অবুঝ দুই শিশু

মিরসরাই প্রতিনিধি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা, বাবা আর নেই জানে না অবুঝ দুই শিশু

অবিরাম চোখ বেয়ে পানি ঝরছে সবার।

নিজ মাথায় গুলি চালিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেন আনসার সদস্য আফজাল হোসেন (২৫)। অজানা কারণে সবাইকে কাদিয়ে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তাঁর স্ত্রী, সংসার আছে। আছে দুই সন্তানও। বিলাপ করছেন মা, স্ত্রী ও স্বজনরা। অবিরাম চোখ বেয়ে পানি ঝরছে সবার। তবে কে বোঝাবেন দুই অবুঝ শিশুকে? তারা জানে না তাদের বাবা আর পৃথিবীতে নেই। ফিরবে না আর কোনো দিনও।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো গ্রামে চলছে শোকের মাতম। স্বজন ও গ্রামবাসীর আহাজারিতে বাতাস হয়ে উঠেছে ভারি। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে সবাই শোকে কাতর। বিলাপ করে কান্নায় বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন তাঁর মা রিজিয়া বেগম। অন্যদিকে দু’টি অবুঝ শিশুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছেন আফজাল হোসেনের স্ত্রী। এদিকে, এখনো গ্রামে আসেনি আনসার সদস্য আফজাল হোসেন মরদেহ। সবাই তাঁর লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন।

নিহত আফজাল হোসেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গজারিয়া গ্রামের মহসিন আলী মেম্বার বাড়ির মৃত অহিদুর রহমানের একমাত্র ছেলে। তার একটি ৩ বছর বয়সী কন্যা ও ৭ মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

গতকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে দায়িত্বরত অবস্থায় নিজের ব্যবহৃত শটগান দিয়ে মাথায় গুলি চালান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি মারা যান।

এলাকায় চলছে শোকের মাতম—

এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন জিহান বলেন, ‘তিন বছর আগে আফজাল হোসেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদান করেন। দুই বছর আগে তার বাবা মারা যান। এরপর পরিবারের হাল ধরেন তিনি। তাঁর পরিবারে মা, দুই বোন (বিবাহিত), স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। ছুটিতে এলে তাঁর সাথে দেখা হতো। কেন সে এমন করলো তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’

স্থানীয় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রাজীব চৌধুরী জানান, ‘গতকাল (সোমবার) খবর পেয়ে রাতে তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছি। কেন সে এমন করেছে জানা নেই। আসলে আমরা তো তাঁর মনের খবর জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে প্রথম স্ত্রী আমাকে তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন। আফজাল আমাকে (স্ত্রী) ভরণপোষণ দিচ্ছে না। সে টাকা পয়সা না দিলে আমি (স্ত্রী) দুই সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবো? তখন আমি আফজাল হোসেনকে ফোন করলে অপরপ্রান্ত থেকে কোন মহিলার কণ্ঠ ভেসে আসে। তখন ধারণা করেছি, সে পরিবারের অগোচরে আরো একটি বিয়ে করেছে। বর্তমান (প্রথম) স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে তাঁর (আফজাল) মায়ের সঙ্গে থাকেন।

ইউপি সদস্য জানান, দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি আফজাল গ্রামের শালিসি বৈঠকে স্বীকার করেছে। আমি ধারণা করছি, পারিবারিক কলহ থেকে সে এমন (আত্মহত্যা) পথ বেছে নিতে পারে। এরপরও সে যেহেতু গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করে। সে হিসেবে তারা বিষয়টি আরো ভালো করে ক্ষতিয়ে দেখবেন। তাঁর প্রথম সংসারে দু’টি সন্তান রয়েছে। এরমধ্যে একটি ৩ বছর বয়সী কন্যা; আরেকটি ৭ মাসের পুত্র সন্তান।’

নারায়ণগঞ্জে আফজালের মরদেহের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ দুপুরের পর বাড়িতে আনার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য রাজীব চৌধুরী।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়