হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়লেও হতাশ ডিম সংগ্রহকারীরা

রাউজান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ১৬ মে ২০২২
হালদায় মা মাছ ডিম ছাড়লেও হতাশ ডিম সংগ্রহকারীরা

হালদা নদীর রাউজান অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করে হতাশ ডিম সংগ্রহকারীরা। 

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তিন শতাধিক নৌকা ও ২০টি বাঁশের ভেলায় বসে জাল ফেলে ডিম আহরণ করেন ডিম সংগ্রহকারীরা। 

রোববার দিবাগত রাত ৩টায় বৃষ্টিপাত হলে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়তে শুরু করে। পরে সোমবার ভোরে বিভিন্ন স্থানে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি ডিম ছেড়েছে মা মাছ। 

সূত্র জানায়, সোমবার ভোর থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার ডিম সংগ্রহকারীরা প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করেছেন বলে ধারণা মৎস্য বিভাগের নদী পর্যবেক্ষণ টিমের তথ্য সংগ্রহকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।

এদিকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মোট প্রাপ্ত ডিমের পরিমাণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে জানিয়ে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করেননি উপজেলা কিংবা জেলা মৎস্য বিভাগ। এর আগে, জোয়ারের সময় শনিবার রাত সাড়ে ১১টা, ভাটার সময় শেষ রাত তিনটার দিকে এবং রোববার দুপুরে নদীর বেশ কিছু এলাকায় নমুনা ডিম পাওয়া গেছে। এবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ডিম সংগ্রহকারী ও হালদা বিশেষজ্ঞরা। 

প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম না পাওয়ার কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ডিম ছাড়ার বিশেষ স্থান নদীর কুম (গভীর এলাকা) ভরাটকে দায়ী করছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী ও ডিম সংগ্রহকারীরা। তাদের দাবি— নদীর অঙ্কুরিঘোনা থেকে রামদাশ হাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে এসব কুম। কিন্তু নদীর পাড় রক্ষা ও ভাঙন রোধে এসব কুমের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলায় অনেকটা ভরাট হয়ে গেছে এসব। ফলে প্রজনন মৌসুমে এসব কুমে পানির স্রোত কমে গেছে। যে কারণে মা মাছ এখানে ডিম ছাড়েনি। অন্যদিকে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি বলে দাবি হালদা বিশেষজ্ঞ ও উপজেলা প্রশাসনের।  

ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, তারা ২৫০ গ্রাম থেকে আধাকেজি পর্যন্ত নমুনা ডিম পেয়েছেন। বেশকিছু স্থানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশের নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এরমধ্যে হাটহাজারীর রামদাস মুন্সিরহাট, মাছুয়াঘোনা, নাপিতের ঘাট, আমতুয়া, নয়াহাট, রাউজানের আজিমের ঘাট, খলিফারঘোনা, ছায়ার ছড় এলাকায় ৫শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম করে ডিম পাওয়া গেছে। আবার কোথাও কোথাও কয়েক কেজি ডিম পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। 

এদিকে ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, নদীতে পাথর ব্লক ফেলে নদীর কুম ভরাট করে ফেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি। 
ডিম সংগ্রহকারী মুন্সিদাশ বলেন, হতাশা নিয়ে নদী থেকে উঠে যাচ্ছি। ডিম পায়নি, কি করে নৌকা ভাড়া ৭ হাজার টাকাসহ খরচ পুষাবো বুঝতে পারছি না। হালদা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পাথর ব্লকই কাল হয়েছে বলে দাবি তার। 

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ বলেন, সোমবার ভোরে ও এর আগে শনিবার রাতে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। হালদা নদীর রাউজান অংশের বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহ করেছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। 

তিনি আরও বলেন, হালদা নদীর মা মাছ ও জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় আমরা মাঠে ছিলাম। এরপরও প্রত্যাশিত ডিম পাওয়া যায়নি। বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত না থাকায় ডিম কম পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি। 

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারাহানা লাভলী বলেন, আমরা বার বার বলে আসছি পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর কুমগুলো ভরাট করে ফেলছে। মিটিংয়ে আমরা তাদের দায় করলেও তারা অস্বীকার করে আসছে। আমাদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা দিয়ে ভরাট করে ফেলছে, হালদা নদীর ডিম দেওয়ার জায়গা সংকোচিত হয়ে আসছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। আশা করি, এই বিষয়ে উনারা একটি সমাধান করেবেন। 

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, সোমবার ভোরে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। এ বছর হালদা রক্ষায় ভূমিকা থাকলেও প্রত্যাশি অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি। হালদা পরিবেশ, পানির মান সবই ঠিক থাকলেও শুধুমাত্র একটি সমস্যা সেটি হচ্ছে বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাত। বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ী ঢল সৃষ্টি হয়নি। একারণে প্রত্যাশি অনুযায়ী ডিম পাওয়া যায়নি। কেউ এক কেজি, কেউ দুই কেজি বা তার চেয়ে বেশি ডিম পেয়েছেন। তবে অন্যান্যবার কয়েক বালতি পাওয়া যেত। সে হিসেবে অনেক কম। তারপরও চলতি জোসহ আগামী জো’তে বৃষ্টিপাত হলে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে বলে আশা করছেন তিনি।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়