বে-টার্মিনাল: দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি

প্রকাশিত: ১৩:৫২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বে-টার্মিনাল: দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির হাতছানি

প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছয় কিলোমিটার দুরে নির্মিত হচ্ছে আরেকটি বন্দর বে- টার্মিনাল। দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য এই টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নব দিগন্তের সূচনা হবে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। 

মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত ভূমির চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নব যাত্রার সূচনা হলো বে-টার্মিনাল কার্যক্রমের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বে-টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল এরিয়ার প্রায় ৬ গুণ। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে আগত জাহাজে যেখানে ১৮০০ কন্টেইনার বহন করে থাকে সেখানে বে টার্মিনাল ৫০০০ কন্টেইনারবাহী বহন ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে সমুদ্রগামী জাহাজের চলাচল অনেকটা জোয়ার ভাটার উপর নির্ভরশীল। ফলে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় বেড়ে যায়। বহির্নোঙ্গরে সৃষ্টি হয় জাহাজ জট। 

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বে-টার্মিনাল অপারেশনাল কাজ শুরু করলে জাহাজ চলাচলে আর জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে না। ২৪ ঘন্টাই জাহাজ চলাচল এবং পণ্য খালাস সম্ভব হবে। কমে যাবে জাহাজের গড় অবস্থানকাল। 

সূত্র জানায়, কর্ণফুলী চ্যানেল আঁকা বাঁকা হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৮৭ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হয় না। যদিও ২০১৫ সালে ড্রেজিং কার্যক্রমের ফলে জাহাজের দৈর্ঘ্য ১৯০ মিটারে উন্নীত হয়। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বে-টার্মিনাল চ্যানেলে কোন বাঁক নেই। ফলে নির্বিঘ্নে ১৯০ মিটারের বেশি অধিক দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়ানো যাবে এই টার্মিনাল দিয়ে। 

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির জন্য জন্য বন্দর বিশাল ফ্যাক্টর। দেশের আমদানি রপ্তানির সিংহভাগই চলছে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ইক্যুইপমেন্ট সংযোজিত হচ্ছে। সম্প্রতি ৩টি গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজিত হয়েছে। আরো ৭টি ক্রেন চলতি বছরেই যুক্ত হচ্ছে বন্দরে। 

একদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ইক্যুইপমেন্ট যুক্ত হচ্ছে অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ছয় গুণ বেশি অপারেশনাল সক্ষমতা সম্পন্ন বে-টার্মিনালের কাজ শুরু হচ্ছে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের পর অপারেশন শুরু করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার আরো সম্প্রসারিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আমদানি রপ্তানিকারক থেকে শুরু করে গোটা ব্যবসায়ী মহল। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বে-টার্মিনাল হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের ইউনিট-২। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট একটি মাইলফলক। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বে-টার্মিনালের কোন বিকল্প নেই। 

বিজিএমইএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফাস্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, বে-টার্মিনাল দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য আর্শীবাদ। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন গতি পাবে। দেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই প্রকল্প। এ টার্মিনালের কাজ যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে তত বেশি মঙ্গল হবে আমাদের জন্য।

ক্লিপটন গ্রæপের সিইও এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সিআইপি বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণ খুবই ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে দেশের আমদানি রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যাবে বহুগুণ। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বে-টার্মিনালকে অপারেশনের আওতায় নিয়ে আসা যাবে দেশ ততবেশি এগিয়ে যাবে। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহছানুল হক চৌধুরী বলেন, বে-টার্মিনাল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে টার্ন এরাউন্ট টাইম (জাহাজের গড় অবস্থান) কমে আসবে। বে-টার্মিনালে বড় বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। ফলে ফিডার জাহাজের প্রয়োজন থাকবে না। এতে করে পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে। 

তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল বাস্তবায়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে সড়ক ও রেলপথের উন্নয়ন জরুরি। 

চট্টগ্রাম বন্দরের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে উত্তর হালিশহরে বে-টার্মিনালের অবস্থান। বে-টার্মিনালের জন্য ৮৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় ৬৭ একর জমির জন্য অধিগ্রহণ মূল্য ৩৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকার চেক মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে হস্তান্তর করেছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। ২য় পর্যায়ের অবশিষ্ট ৮২১ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

সিভয়েস/এসএ/এমইউ

শাহাদাৎ চৌধুরী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়