উদ্বোধনের আগেই পিসিটিতে প্রথমবারের মত ভিড়লো বড় জাহাজ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
উদ্বোধনের আগেই পিসিটিতে প্রথমবারের মত ভিড়লো বড় জাহাজ

চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে প্রথমবারের মত ভিড়েছে ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘মেঘনা ভিক্টোরি’র মাধ্যমে নবনির্মিত এ টার্মিনালে উদ্বোধনের আগেই বড় জাহাজ ভেড়ানোর রেকর্ড গড়লো। 

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাহাজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। 

এ সময় খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত দেশকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলেছে, যা দৃশ্যমান। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ‍্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ‍্যে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি, ২০৪১ সালের আগেই আমরা লক্ষ‍্যমাত্রায় পৌঁছে যাব।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে বঙ্গোপসাগরে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীতে দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সামনে এগিয়ে যেতে কিছু চ‍্যালেঞ্জ আছে। এসব চ‍্যালেঞ্জও থাকত না, যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুকে হত‍্যার পর দেশে লুটপাট, দুর্নীতি শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ২১ বছরে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ কোনো কাজ হয়নি।

নৌ- প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু একটি শক্ত ভিত রচনা করেছিলেন। তিনি টেরিটোরিয়াল জোন ও মেরিটাইম বাউন্ডারি অ্যাক্ট প্রণয়ন করেন। বঙ্গবন্ধুর সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু মেরিটাইম খাত থেকেই ২০০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভের জন‍্য পেতাম।

এরআগে চলতি বছরের শুরুতে বন্দরের সিসিটি-১ নম্বর জেটিতে ভেড়ানো হয়েছিল বড় জাহাজ ‘কমন এটলাস’। চট্টগ্রাম বন্দরে এতদিন ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো হতো।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘মেঘনা ভিক্টোরি’ নামের জাহাজটি কানাডার ভ্যাঙ্কুভার বন্দর থেকে ৬২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে কুতুবদিয়া এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে জাহাজ থেকে কিছু পণ্য লাইটারিং করে নামিয়ে মেঘনা ভিক্টরিকে চট্টগ্রাম বন্দরের আলফা এঙ্করেজে আনা হয়েছিল। সেখান থেকে গত শুক্রবার জাহাজটিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব পাইলট দিয়ে ও টাগবোটের সহায়তায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের জেটিতে ভেড়ানো হয়। আজ উদ্বোধনের পর জাহাজটি আবার বহির্নোঙরে নেয়া হয়। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের জেটিতে আমরা আগে খাদ্যপণ্যবাহী জাহাজ ভিড়িয়েছি। এখনো এ কার্যক্রম চলমান আছে। এখন আমরা বাল্কপণ্যবাহী জাহাজ ভেড়াব। এর আগে এখানে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়েনি। এই যাত্রার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে আরো বড় জাহাজ ভিড়ানোর নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মো. নিজামুল হক এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উর রহমান।

বন্দর সূত্রে আরও জানা গেছে, নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বর্তমানে শুধু সরকার আমদানিকৃত চাল খালাস করা হচ্ছে। তবে টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য এখনো কোনো অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায়ই জাহাজে পণ্য লোড-আনলোড করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের ১৩ জুন পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের শেষ সময় ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ব্যয় আরও ১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়ে আরডিপি বরাবর আবেদন করে প্রকল্প সংস্থা।

২০২১ সালের মার্চে টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ‘ইকুইপ, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল’ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার। টার্মিনাল অপারেশন পরিচালনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট আ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড ও সিঙ্গাপুরের পিসিএর মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রাক-সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক পরিচালনা ব্যয় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে রয়েছে ৩২ একর জায়গায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ জেটি। যেখানে তিনটি জাহাজ বার্থিং করতে পারবে। এছাড়া থাকবে ২২০ মিটার দীর্ঘ একটি ডলফিন জেটি। থাকছে ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ইয়ার্ড এবং রাস্তা। পাশাপাশি ২ হাজার ১২৮ বর্গমিটার কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন শেড (সিএফএস), ছয় মিটার উচ্চতার ১ হাজার ৭৫০ মিটার কাস্টমস বন্ডেড ওয়াল, ৫ হাজার ৫৮০ বর্গমিটার পোর্ট অফিস বিল্ডিং, ১ হাজার ২০০ বর্গমিটার যান্ত্রিক ও মেরামত কারখানা, ২ হাজার ৫০০ মিটার রেলওয়ে ট্রেক নির্মাণ, ৪২০ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ, চার লেনবিশিষ্ট শূন্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এবং ছয় লেনবিশিষ্ট ১ কিলোমিটার আগের রাস্তা স্থানান্তর করে পুননির্মাণ, সিকিউরিটি পোস্ট, গেস্ট হাউস, ফুয়েল স্টেশন এবং লেবার শেড করা হয়েছে। 

বর্তমানে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি পুরোপুরি প্রস্তুত। রয়েছে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। তবে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চালুর বিষয়টি দফায় দফায় পিছিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের জুন মাসে টার্মিনালটি চালু করার কথা ছিল। এক বছর পিছিয়ে অর্থাৎ ২০২২ সালের জুনে টার্মিনালটি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পরে ওই বছরের ২১ জুলাই কার্যক্রম শুরুরও ঘোষণা দিয়েছিল বন্দর। অথচ গতবছরের জুলাই মাসে টার্মিনালের কাজ শতভাগ শেষ হলেও অপারেটর নিয়োগ জটিলতায় ভুগছে প্রকল্পটি। বর্তমানে শুধু সরকার আমদানিকৃত চাল খালাস করা হচ্ছে টার্মিনালটিতে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়