বেগানা নারীর দুঃসময়ে পাশে থাকতেই ‘মানবিক বিয়ে’ করেন মামুনুল হক

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১১, ৪ এপ্রিল ২০২১
বেগানা নারীর দুঃসময়ে পাশে থাকতেই ‘মানবিক বিয়ে’ করেন মামুনুল হক

দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা নারীর সঙ্গে মামুনুল হক

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ হন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। স্থানীয়দের জেরায় সঙ্গে থাকা নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন তিনি। তবে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হলে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা নারীকে নিয়ে ধোঁয়াশা বাড়তে থাকে। 

শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রয়াল রিসোর্টের পঞ্চম তালার ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ স্থানীয়দের কাছে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। তাকে উদ্ধারে যায় পুলিশ। পরে ঘটনা জানাজানি হলে তার অনুসারীরা ওই রিসোর্টে হামলা-ভাঙচুর করে তাণ্ডব চালায়। 

ওই সময় মামুনুল হক দাবি করেন, সঙ্গে থাকা নারীর নাম আমিনা তৈয়ব। তার দ্বিতীয় স্ত্রী। একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য আমিনাকে সঙ্গে নিয়ে ওই রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছিলেন হেফাজত নেতা।

এখন নানা মনে প্রশ্ন আসছে- আমিনা তৈয়ব আসলেই কি মামুনুলের দ্বিতীয় স্ত্রী? সেটি অবশ্য রোববার (৪ এপ্রিল) সকালে নিজেই খোলাসা করেছেন মাওলানা মামুনুল হক। নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই নারীর সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তিনি। মামুনুল হকের সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘হাফেজ শহিদুল ইসলাম আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের একজন। সাংগঠনিক কাজে আমার দু-চারজন সহযোগীর অন্যতম। বেশ পুরনো আমাদের সম্পর্ক। সম্পর্কের গভীরতা পারিবারিক পরিধি পর্যন্ত। পরিবারসহ একে অপরের বাসায় যাতায়াত আমাদের দীর্ঘদিনের। 

সেই সূত্রে তার পারিবারিক অভিভাবকত্ব করতাম আমি। পারিবারিকভাবে খুঁটিনাটি বিষয়ে পরামর্শের জন্য তারা আমার দ্বারস্থ হতো। দুই সন্তানের ছোট সংসার নিয়ে চলছিল তাদের জীবন। একটা পর্যায়ে এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে শুরু হয় মনোমালিন্য। মনোমালিন্য থেকে বাদানুবাদ এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু। 

আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। তখন তাদের সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি আমি। তাদের উভয়ের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু কোনোভাবেই আর সেটি সম্ভব হয়নি। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় তাদের। ছাড়াছাড়ির পর দ্বিতীয় সংসার শুরু করেন হাফেজ শহীদুল ইসলাম। সেই বিবাহ আমি পড়াই। তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করছেন। সেই ঘরে জন্ম নিয়েছে ফুটফুটে আরেকটি সন্তান। 

অপরদিকে হাফেজ শহীদ ভাইয়ের স্ত্রী হয়ে যায় অনেকটা অসহায়। এক রকমের কূলকিনারাহীন। রাগের মাথায় সংসার ভেঙে গভীর সংকটে পড়ে যান তিনি। ওই পরিস্থিতিতে তার জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি আমার শরণাপন্ন হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে পরামর্শ নেন। সেই দুঃসময়ে সহযোগিতা করার মতো আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না তার।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ এবং অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে আমি তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করি। জীবনের করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য নিয়মিতই আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় তাকে। এমতাবস্থায় একজন বেগানা নারীর সঙ্গে এভাবে সম্পর্ক রাখাকে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়।

তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, যত দিন তার অভিভাবকত্বের প্রয়োজন হবে আমার, তাকে বেগানা হিসেবে রেখে অভিভাবকত্ব করব না, বরং ইসলামি শরিয়তের আলোকে বৈধ একটা সম্পর্ক তৈরি করে নেব। বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলি এবং এ বিষয়ে তাদের জানিয়ে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিবাহের কালেমা পড়ে বিবাহ করে নিই।

দুই বছর ধরে এভাবেই মানবিক ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমি তার অভিভাবকত্ব করছি এবং একজন অসহায় নারীর দায়িত্ব গ্রহণ করে একটি পুণ্যের কাজ করেছি বলে বিশ্বাস করি। আমি যা বললাম, এটা আল্লাহর নামের হাজারবার শপথ করে বলতে পারব। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কুল্লামার শপথও করতে পারি।
 
বিষয়টি খোলাসা করার পরেও যুবলীগ, আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা আমার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করেছে এবং হামলা করেছে, গায়ে হাত তুলেছে, আমি এর বিচার চাই আল্লাহর কাছে প্রশাসনের কাছে এবং জনগণের কাছে। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের এই হামলা ও আচরণ প্রমাণ করে বর্তমানে বাংলাদেশে মান-সম্মান কিংবা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চলাফেরা করা সম্ভব না।

একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুক্ত হয়ে অনুসারীদের উদ্দেশ্যে তিনি ফেসবুক লাইভে গিয়ে বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিক ও পুলিশ আমার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে। আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম।’ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়