Cvoice24.com

আবারও জামায়াত-শিবিরের দুর্গে পরিণত হয়েছে
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ নেই

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ২১ মার্চ ২০২৪
সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ নেই

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ নেই বলে দাবি করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আবারও ওই এলাকা জামায়াতের দুর্গ হয়েছে বলে মত তাঁর। এমনকি বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের সঙ্গে জামায়াতের চুক্তি হয়েছে বলেও জেনেছেন তিনি!

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব কথা বলেন।

নদভীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সিভয়েস২৪-কে বলেন, 'সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ নেই এ কথা তিনি (নদভী) বলতে পারেন না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি ক্ষণস্থায়ী নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছিল, আছে এবং থাকবে। একসময় সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জামায়াতের আধিপত্য ছিল। সেই আধিপত্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ লড়াই-সংগ্রাম করেছে। সেই আন্দোলন সংগ্রামে অনেক নেতাকর্মীও নির্যাতিত হয়েছেন।'

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দুবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য নদভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে এখন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নৌকা নাই, নৌকা নাই মানে আওয়ামী লীগ নাই। স্বতন্ত্র আছে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, স্বতন্ত্রও নাই, জামায়াত আছে। এখন জামায়াতের এমন কোনো ক্যাডার নাই, যারা মাঠে নাই।’

বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের সঙ্গে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের চুক্তি হয়েছে দাবি করে নদভী বলেন, ‘ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীসহ যেসব বিতর্কিত আলেমকে আমি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আসতে দিইনি তাদের আনাগোনা এখন বেড়ে গেছে। জামায়াতের নেতাকর্মীরাও মাঠে সরব। আগামী উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হবে জামায়াত থেকে—এমন চুক্তি হয়েছে বলে আমি জেনেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এমপি নদভী আরো বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে নৌকাকে ডুবানোর যাবতীয় ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা হয় ঢাকায় বসা একজনের কলকাঠিতে। এখনো তার ইশারাতে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরছে। প্রধানমন্ত্রী বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাদের নৌকা প্রতীক দিয়েছিলেন তাদের অনেকে এখন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায়ও যেতে পারেন না। এ যেন জামায়াত-শিবিরের আমল সাতকানিয়া লোহাগাড়ায় ফিরে এলো।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে জামায়াত-শিবিরের দুর্গ থেকে আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত করেছিলাম। কিন্তু এখন সেই সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় স্বাধীনতার প্রতীক নৌকাকে পরাজিত করার জন্য জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব নির্বাচন করেন। যেভাবেই হোক তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর থেকে এমপির প্রত্যক্ষ মদদে নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও মামলা করা হচ্ছে।’

এসব ঘটনার জন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মোতালেবকে দায়ী করেন নদভী। 

গত দুই মাসে ছয়টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে দাবি করে নদভী বলেন, ‘নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাসে ৬ মার্ডার হয়েছে। যেখানে আমার ১০ বছরে একজনও মার্ডার হয়নি। আমি এমপি হওয়ার আগে যে পরিস্থিতি ছিল, এখন তার চাইতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কি ঘটনা ঘটে আমি জানি না। এমন কোনো দিন নাই ডাকাতি হচ্ছে না, কেউ না কেউ আহত হচ্ছে।’

বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে জামায়াতের এমপি সম্বোধন করে নদভী বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জামায়াত তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। শিবির কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে মিছিল করেছে। মনে হচ্ছে তারা এখান থেকে ইসলামী স্টেটের কাজ শুরু করেছে। তাহলে স্বতন্ত্র এমপি সাহেব সরকারের এমপি, নাকি জামায়াতের এমপি-আমি জানি না।’

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আজকের এই অরাজকতার মূল নায়ক হচ্ছে একজন সন্ত্রাসী গডফাদার। তার কাজ হলো কেউ এমপি হলে তার কাঁধে ভর করে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা, অন্যের জমি দখল করা, টিআর, কাবিখা নিয়ে সেগুলোর অর্থ লুটে খাওয়া। ২০১৪ সালে আমি যখন এমপি নির্বাচিত হই তখন তিনি আমার কাছে আসেন। তখন আমার সঙ্গে ছিলেন। একবার আমি একটি প্রকল্প উদ্বোধন করতে গেলে তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে সেখানে চলে এসেছিলো। অস্ত্রশস্ত্র তো লুকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু তা না লম্বা লম্বা অস্ত্র তারা প্রকাশ্যে দেখাচ্ছিল। এরপর থেকে তাকে আমার কাছে ঘেঁষতে দেইনি।'

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা ডা. মিনহাজের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে নদভী বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ডা. মিনহাজ নির্বাচনী স্লোগান দিয়ে বলেছে, ‘বহুত দিন খাইও, আর ন হাইও’। আমি তাকে বলি, ‘দেশে আমি এনেছি, তোমরা লুটেপুটে খেয়েছো’।

অনিয়মের প্রমাণ দিতে পারলে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সাবেক এই এমপি বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে সরকারি কোনো প্রকল্পের এক টাকার অনিয়ম আমার হাত দিয়ে হয়েছে, আমি রাজনীতি করা ছেড়ে দেব।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘গত আড়াই মাসে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জামায়াত কোনো মিছিল-মিটিং কিংবা সমাবেশ করেনি। তাদের কোনো কর্মকাণ্ডের কোনো তথ্য কেউ দিতে পারবে না। অথচ নদভীর আমলে জামায়াত প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করতো। উনি (নদভী) বলেছেন আমরা জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতের সাথে আঁতাত করেছি। কিন্তু নির্বাচনে জামায়াতের লোকজনরা ভোট দিতেই তো আসেনি। তারা উল্টো লিফলেট বিতরণ করেছে ভোটবর্জনের।’

নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে মিথ্যাচার করছেন দাবি করে মিনহাজ বলেন, ‘যেহেতু তিনি নির্বাচনে জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন আর সেই নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছি আমি। তাই তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এসব মিথ্যাচার করছেন। আমার প্রতি ক্ষোভের আরও একটি কারণ, আমি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহাম্মদ ইদ্রিসসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, 'সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ নেই, সবাই জামায়াত' সাবেক এমপি নদভীর এমন বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের দাবি—এমপি নদভী এবং তার স্ত্রী জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক। নির্বাচনে জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েই এমন মিথ্যাচার করছেন তিনি।

লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু সিভয়েস২৪-কে বলেন, 'এটা সম্পূর্ণ একটা ডাহা মিথ্যাকথা। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের সাথে ওনার (নদভী) কোনো সম্পর্ক ছিল না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে কে কোন উপজেলা, ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদক তাও জানেন না। তার বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। তিনি যার বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতির অভিযোগ তুলছেন তিনিও (এমপি মোতাবেল) তো উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তার (নদভী) স্ত্রী নিজেই জামায়াতের মাস্টারমাইন্ড। ওনার আমলে উনি জামায়াতকে দমনের নামে উল্টো আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন।'

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পান আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। নদভী প্রায় ৪৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মোতালেবের কাছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়