এমপি সমর্থিত প্রার্থী সন্দ্বীপ-সীতাকুণ্ডে!

আহমেদ সারজিল, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
এমপি সমর্থিত প্রার্থী সন্দ্বীপ-সীতাকুণ্ডে!

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগের আয়োজনের শেষ নেই। দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেয়ার পাশাপাশি সংসদ সদস্যরাও যাতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করেন সেই বিষয়ে বারবার নির্দেশনা আসছে কেন্দ্র থেকে। কঠোর আদেশও আছে যাতে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা প্রার্থী না হন। এমনকি সমর্থন দেওয়ার বিষয়েও নিষেধ আছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। তবে নির্বাচনের মাঠের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। দলের এসব নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।  

প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। খোঁজ-খবর নিয়ে দুই উপজেলাতেই স্থানীয় এমপির প্রার্থী দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের প্রভাব বিস্তারের কারণে নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীও নেই তেমন। অল্প যে কজন আছেন তারা হালে পানি পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যাপক চেষ্টা থাকলেও উপজেলা নির্বাচনকে শেষ পর্যন্ত এমপিদের প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। মূলত উপজেলা পর্যায়ে নিজেদের ক্ষমতার বলয় ধরে রাখতে মরিয়া এমপিরা। ফলে শুরু থেকেই নানাভাবে এই নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন তারা। 

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডে প্রার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত। স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের এ বিষয়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। দলীয় কর্মকাণ্ডে পরোক্ষভাবে তা ফুটে উঠলেও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।

সীতাকুণ্ড : এখানে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য এস এম আল মামুনেরও রয়েছে নিজস্ব প্রার্থী। সীতাকুণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এবারের উপজেলা নির্বাচনে দুজন প্রার্থীর মধ্যে রাজু চৌধুরীকে সমর্থন দিচ্ছেন বর্তমান এমপি এস এম আল মামুন। রাজুকেই এমপির প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে প্রচার করছেন তাঁর অনুসারিরা। পাশাপাশি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদেরকেও তিনি আলাদাভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন রাজু চৌধুরীকে সমর্থন দেয়ার জন্য। 

এ বিষয়ে আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি গতবারের উপজেলা নির্বাচনে মামুন সাহেবের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম সেই ক্ষোভ থেকে হয়তো আমাকে তিনি সমর্থন করেন না। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ার পরেও তিনি একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে সমর্থন করছেন। শুনেছি মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রেজাউল করিম বাহারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটিও ঘোষণা করেছেন রাজু চৌধুরীকে জয়ী করার জন্য।’

‘তবে এবারের নির্বাচনে উনি চাইলে সাইলেন্ট থাকতে পারতেন। আমি একজন সিনিয়র সদস্য। আমার সাথে অপেক্ষাকৃত তরুণ একটা ছেলেকে প্রার্থী দিয়েছেন, তাও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ছোট। তবে তিনি যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন ওদের অনেকে জিম্মি। তারাও মনে প্রাণে ওই প্রার্থীকে গ্রহণ করছেন না। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজু চৌধুরী গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে হেরেছেন। এর আগেও একবার পরাজিত হয়েছেন। তবে এবারে বর্তমান এমপির প্রশ্রয়ে এবার উপজেলা নির্বাচন করছেন।’-বলেন মহিউদ্দিন। 

এ বিষয়ে রাজু চৌধুরী বলেন, ‘আমি আশাবাদী সীতাকুণ্ডে খুবই সুষ্ঠু ভোট হবে। আমার প্রস্তুতি ভালো। আমি জয়ের জন্য আশাবাদী। আমার বাবাও সীতকুণ্ডের জন্য কাজ করেছেন আমি এর ফলটা পাবো আরকি। আমি বিরামহীন রাজনীতি করেছি সেই কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছি।’
বর্তমান এমপির সমর্থনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করেছি তার ফলাফল পাবো বলে আশাবাদী। আমার অপর প্রতিদ্বন্দ্বীর একটু গ্যাপ ছিলো। আমি কারও বিপক্ষে বলতে চাই না।’    

সন্দ্বীপ : দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপেও দেখা গেছে একই চিত্র। এখানে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আনোয়ার হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ওমর ফারুক ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হালিমা বেগম শান্তাকে সমর্থন দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা।

এমপির এমন অবস্থানে বেকায়দায় পড়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন মিশন। কদিন আগেও রমরমা অবস্থান থাকলেও নির্বাচনকে ঘিরে অনেকটাই একঘরে হয়ে গেছেন মাইন উদ্দিন মিশন। মনোনয়ন জমা দেয়ার দিনেই সেই চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আনোয়ার হোসেন মনোনয়ন জমা দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বেদন সহ। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, দপ্তর সম্পাদক সদস্য সহ প্রায় এক ডজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন মিশনের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে এমপিদের একটি পছন্দ থাকবে এটা স্বাভাবিক। এবারে সন্দ্বীপ উপজেলায় বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা পরোক্ষভাবে মগধরা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন করছেন। বিভিন্ন ভাবে জানান দিচ্ছেন তিনি। এই কারণে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাঈনউদ্দীন মিশনের সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের তেমন কোনো নেতা কর্মী নেই; সবাই আনোয়ার হোসেনের সাথে। অন্যদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে এমপি যাকে চেয়েছেন তার বাইরে কেউ ফরম পর্যন্ত কিনেনি। শুধু মাত্র একজন প্রার্থী হয়েছেন। তিনি এমপির পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে রূপালী লাইফ ইনসুরেন্সের ম্যানেজার।' 

সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহফুজুর রহমান সুমন ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন এমন আলোচনা ছিল মাঠ পর্যায়ে। তিনিও বিভিন্ন সময় ঘনিষ্ঠজনদের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা বলেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেননি তিনি। কেন প্রার্থী হলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পারিবারিক সিদ্ধান্ত। আর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুষ্টু চক্রের ভয়ে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হইনি। ওই চক্রের কারও নাম আমি বলতে চাচ্ছি না। তবে ওনাদের একটা প্রভাব বিস্তার থাকে সব জায়গায়।’

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন মিশন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দলীয় প্রতীক নেই বা এমপি মন্ত্রীরা কারো পক্ষ নিতে পারবে না। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কে কার কে কার সাথে যাবে, না যাবে এটা ওনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে আমার টাকা নেই তাই হয়তো আমার সাথে লোক কম এমনটাও হতে পারে। আর আমিতো কাউকে জোর করে আমার সাথে আনতে পারবো না। বিভিন্ন কারণে নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে প্রকাশ্যে না থাকলেও আমি এখন পর্যন্ত জয়ের ব্যাপারে আশবাদী। আর নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। জনগণ যাকে চাইবে তাকেই ভোট দিবে।’

তবে এক্ষেত্রে সবাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) এলাকা হিসেবে ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দীন বেদন বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন করিনি। নমিনেশন জমা দেওয়ার সময় যারা যেতে পারছে গেছে তাদের পছন্দের প্রার্থীর সাথে। এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’
অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে শুধুমাত্র একজন প্রার্থী কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অন্য আর কাউকে পাইনি। তবে আমি ভেবেছিলাম অন্তত চার-পাঁচ জন দাঁড়াবে। কিন্তু একজনকেও পাইনি।’ মাইন উদ্দিন মিশনের সঙ্গে তার গ্রুপিং আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমাদের সম্পর্ক ভালোই। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আমার ইচ্ছাতেই এস এম আনোয়ারকে সমর্থন দিয়েছি। গ্রুপিং বা অন্য কোনো বিষয় এখানে নেই।'

উপজেলা পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী ওমর ফারুক বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দী নিয়ে জিততে পারলে ভালো লাগতো। তবে এই নির্বাচনে একজন ব্যক্তিও প্রার্থী হয়নি।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়