উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না ইসলামী ফ্রন্ট

সিভয়েস২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না ইসলামী ফ্রন্ট

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের চেরাগি পাহাড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মতিন। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম, ২য় ও ৩য় ধাপের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তাফসীল অনুযায়ী, আগামী ৮ মে, ২১ মে এবং ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম তিন ধাপের নির্বাচন। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের সবচেয়ে সৌন্দর্যের বিষয় হল— ‘উৎসবমূখর পরিবেশে ভোটারদের অংশগ্রহণ’। বিষয়গুলোর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে নির্বাচন কমিশন এ দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে এটাই প্রতীয়মান হয়— নির্বাচন আচরণবিধির যথার্থ প্রয়োগের অভাব এবং প্রভাবশালী মহলের অন্যায় আচরণের প্রতি নির্বাচন কমিশনের নমনীয় মনোভাব। তথা প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার সুযোগ নিয়ে অযোগ্য লুটেরা ধনী শ্রেণি নির্বাচিত হয়ে পুরো নির্বাচন সংস্কৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ফলে রাজনীতি ক্রমান্বয়ে দূর্বৃত্তায়নের কবলে চলে যাচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, জাতীয়-স্থানীয় সকল নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে অর্থপাচারকারী, কালোবাজারী ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মুক্ত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুবই পরিতাপের বিষয়— নির্বাচন কমিশন (ইসি) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ গুণ বৃদ্ধি করে ১ লাখ টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ১৫ গুণ বৃদ্ধি করে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ দেশের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজকে অন্ধকারে রেখে ইসি কর্তৃক এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে আমরা ষড়যন্ত্রমূলক, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি। কেননা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য প্রার্থীর জামানত ২০ হাজার টাকা, সেখানে স্থানীয় নির্বাচনে একলাফে ১০ গুণ বৃদ্ধি করা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে ন্যায়পরায়ণ, জনদরদী সমাজসেবক দেশপ্রেমিক ও যোগ্য ব্যক্তিগণ নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া এক প্রকার অসম্ভব হয়ে যাবে। অন্যদিকে, দেশের অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, অর্থনৈতিক দূর্বৃত্ত ও কালোবাজারীরা নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত হবে।  

ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষ থেকে এ বিষয়গুলো লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে অবহিত করা হলেও কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এ সময় উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে জামানত সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে উপজেলা নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন করার দাবি জানান ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ।

ইসলামী ফ্রন্ট কেনো উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে আসছে— এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, ‘নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গে কঠোরতা থাকলেও আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে, দেশের মানুষ নির্বাচন কমিশন নামক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে; যা একটি দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে বড় অন্তরায় বলে আমরা মনে করছি।’

গত সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নির্বাচন হলফনামার সম্পদ বিবরণীতে ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার সম্পদ তথ্য গোপনের অপরাধ করেছেন। দেশের প্রধান সারির মিডিয়াগুলোতে লিড নিউজ হওয়া সত্ত্বেও এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। এ ধরনের অপরাধ প্রমাণিত হলে বিদ্যমান আইনে সংসদ সদস্যের পদ বাতিল হওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা লেখা থাকলেও নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে নির্বিকার ও নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিগত ২৮ মার্চ তার এক বক্তব্যে নির্বাচন খরচ ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার কথা উল্লেখ করে তা মাঠ পর্যায় থেকে তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যা সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। অথচ নির্বাচনবিধি অনুসারে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ২৫ লাখ টাকা উল্লেখ থাকলেও এ সংসদ সদস্য তার মনোনয়ন পত্রের হলফনামা ভঙ্গ করা, নির্বাচন ব্যয়ের হলফনামা ভঙ্গ করার বিষয়টি স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন তাকে শোকজ পর্যন্ত করেনি। অথচ এই ধরনের অপরাধে তার সংসদ সদস্যের পদ বাতিল করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতা থাকলেও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

সম্প্রতি শিংগাইর উপজেলায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীকে দিনদুপুরে অপহরণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ যাবৎ ক্রমান্বয়ে সংগঠিত কোন নির্বাচন অনিয়ম-অপতৎপরতার বিচার নির্বাচন কমিশন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করতে পারেনি। এছাড়াও সরকার দলীয় প্রার্থীরা বিভিন্ন নির্বাচন এলাকায় অন্য প্রার্থীদের হুমকি-ধমকিসহ নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে। কোন কোন প্রার্থী তাকে ভোট না দিলে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়ার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিচ্ছে। কোন কোন মন্ত্রী-এমপি একক প্রার্থী দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ সমস্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকর্তৃক সাংবিধানিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশনের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফলে সাধারণ জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাওয়া এবং ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, নির্বাচন কমিশনের অকার্যকর পদক্ষেপ ও ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফলে জনগণের আস্থাহীনতার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা আশঙ্কা করছি— আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মাত্র ৫ শতাংশ জনগণ হয়তো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’

ইসলামী ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ বলেন, যৌক্তিক বিষয়সহ নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, বিচারহীনতা ও সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এ যৌক্তিক সিদ্ধান্তের ফলে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বোধোদয় হবে। দেশে নির্বাচন সংস্কৃতি ও পরিবেশ পুনরুদ্ধার হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ তৈয়ব আলী, এড. আবু নাছের তালুকদার, এম সোলায়মান ফরিদ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম পাঠোয়ারি, পীরজাদা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল করিম তালুকদার, সহ-দপ্তর সচিব ইঞ্জিনিয়ার নুর হোসেন, প্রচার সচিব মাষ্টার আবুল হোসেন, সহ-প্রকাশনা সচিব মুহাম্মদ  নুরুল্লাহ রায়হান খান, শ্রম ও কৃষি সচিব মহিউল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর দক্ষিণ সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন নেজামী, যুবসেনার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এমরানুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, সহ-সম্পাদক রবিউল ইসলাম, ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুর রায়হান চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়