‘আপু আমি জ্বলে যাচ্ছি, পুড়ে যাচ্ছি, আমাকে মাফ করে দিস’—মহিউদ্দিনের বোন
বাঁশখালী প্রতিনিধি
‘কনটেইনার আগুন লাগার ১ ঘন্টা আগে ও আমি আমার ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। পরে শুনি প্রিয় ভাইটা আগুনে পুড়ে গেছে। আমি হাসপাতালে ভিডিও কলের মাধ্যমে ভাইকে দেখেছি। তখন সে আমাকে বলেছে,আপু আমি জ্বলে যাচ্ছি, পুড়ে যাচ্ছি, আমাকে মাপ করে দিস। এভাবে আমার ভাইয়ের কান্না শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। আল্লাহ আমার ভাইকে নিয়ে গেছে। আমার ভাইটি জম্মগ্রহণ করার ২ বছর পূর্বে আমার মা মারা যায়।’
শুধু মহিউদ্দিনের বড় বোন শারমিন আক্তার নয়, এভাবেই সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ৪৩ জনের মধ্যে বাঁশখালীর ৩ জনের পরিবারের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে আশেপাশের পরিবেশ।
নিহত মহিউদ্দিন (২২) পুঁইছুড়ি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব চালিয়া পাড়া আহমদুর রহমানের ছেলে। সে ৬-৭ বছর পূর্বে কনটেইনার গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করে। তিন ভাই ২ বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়।
নিহত অন্য দুইজন হলেন, সে পুঁইছুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব চালিয়া পাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হাসান আলীর ছেলে মো. তোফাইল ইসলাম তোহা (১৮) ও বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নে ফরিদুল আলমের ছেলে মো. মুবিন (২৪)। তোফাইল ইসলাম তোহা ৩-৪ বছর পূর্বে কনটেইনারে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করে। অন্যদিকে মুবিনুল
২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে ২য়। সে চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ থেকে অথর্নীতিতে স্নাতক শেষ করে সীতাকুণ্ড বি এম কনটেইনারে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন।
নিহত তোহার বাবা বলেন, আমি আমার ছেলের সাথে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে কথা বলেছি। আমার চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে তোহা ৩ নাম্বার। সে ৮ম শ্রেণী পাস করে কনটেইনারে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করে।
নিহত মুবিনুলের পিতা ফরিদুল আলম বলেন, ‘৬ মাস পূর্বে আমার ছেলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। আমরা তাঁকে বিয়ের করার জন্য বউ দেখা শুরু করলাম। কিন্তু এর আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে গেছে।’
বাবার কান্না থামায় এমন সাধ্য কার। নিহতদের বাবার কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ।
এদিকে আব্দুস সোবহান প্রকাশ আব্দুর রহমান (২৮) নামে একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শেখেরখীল মোশারফ আলী সিকদার বাড়ির মৃত শাহ আলমের ছেলে। ২০১৪ সালে সীতাকুণ্ড বি এম কনটেইনারে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন। তার ১ বছরের একটি কন্যা রয়েছে।
নিখোঁজ আব্দুস সোবহানের মামা মো. হেফাজ উদ্দিন জানান,আমার ভাগিনা বিএম ডিপো কনটেইনার আগুন যখন লেগেছে তখন তার মা এবং স্ত্রীকে ভিডিও ফোনে আগুন জ্বলার দৃশ্য দেখান। এর কিছুক্ষন পর তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তার মৃত্যুর গুজব শুনা যাচ্ছে। তবে আমরা এখনও পযর্ন্ত তার কোন সংবাদ পাচ্ছি না।