Cvoice24.com

পুদিনা পাতায় ছেয়ে গেছে চন্দনাইশের ২০ হেক্টর জমি

নুরুল আলম, চন্দনাইশ

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২২ এপ্রিল ২০২১
পুদিনা পাতায় ছেয়ে গেছে চন্দনাইশের  ২০ হেক্টর জমি

ছবি: সিভয়েস

কেউ পাতা তুলছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ আগাছা পরিস্কারে ব্যস্ত। সবমিলিয়ে সবাই যেন গাঁট বেঁধে নেমেছেন সবুজারণ্যের পুদিনা উৎসবে। এবার চন্দনাইশ উপজেলার ২০ হেক্টর জমিজুড়ে আবাদ হয়েছে নিজের স্বাদ-গন্ধ অন্য খাবারে বিলিয়ে দেয়া এই পাতা।

স্থানীয় মো. আবদুর রউফ, মো. আবু তৈয়ব, আবদুল ছমদ, মাহাবুব, আছহাব মিয়া (ভূট্টো), শামসুল ইসলাম, এমরান হোসেন ও ফারুখ। ইতোমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছেন সফল পুদিনা চাষী হিসেবে। যদিও বছরের অন্যান্য সময় ধান-সবজির চাষাবাদ তাদের। বছরের এ সময়টাতে পুদিনা চাষের অতিরিক্ত আয় দিয়ে সংসারের নানা চাহিদা মেটান।

চন্দনাইশের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পুদিনা চাষ। ছবি: সিভয়েস

রোজার বাজার ধরে একটু বাড়তি আয় করতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে কানি কানি জমিজুড়ে পুদিনা আবাদ করেছেন তারা। সেখান থেকে অন্যান্য বছরের মতো এবারও লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তাদের। তবে এ স্বপ্নে বাধ সেধেছে করোনা। প্রতিবছর পুদিনার বাজার ঘিরে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি-খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনা থাকলেও এবার লকডাউনে বেধেছে যতসব বিপত্তি। এতে করে কৃষকদের বাধ্য হয়েই কমদামে বাজারে ছাড়তে হচ্ছে পুদিনা।

পুদিনা চাষী আছহাব মিয়া বলেন, মূলত রমজান মাসের কথা চিন্তা করে বাণিজ্যিকভাবে ১০ কানি জায়গায় পুদিনা চাষ করেছি। এতে শ্রমিক ও বিবিধ খরচ বাবদ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাজার দর ভালো হলে এবার ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পুদিনা বিক্রি করতে পারবো। তবে লকডাউনের কারণে পাইকারি বিক্রেতারা আসতে পারছে না। এজন্য উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজারে নিতে আঁট বাঁধছেন চাষীরা।

আবদুল গফুর নামে আরেক চাষী জানান, রোজা ছাড়া ছাড়াও সারাবছর তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পুদিনা সরবরাহ করেন। সেখানে চাটনি, জুস, সালাদ এবং ফুড ডেকোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন খাবারে এসব ব্যবহার করা হয়। তবে লকডাউনের কারণে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় তারা আগের মতো নিচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে কমদামে ছাড়তে হচ্ছে।

তার কথায় সুর মিলিয়ে চাষী বাচা মিয়া বলেন, অন্যান্য বছর ১ কেজি পুদিনা ৯০ টাকা ১শ টাকা বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার লকডাউনের জন্য ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ পাইকারি বিক্রেতা আসছে না। তাই চাহিদা কম।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, পুদিনার অনেক জাত। এরমধ্যে পিপারমেন্ট, স্পিয়ার মেন্ট ও অ্যাপেল মেন্ট হলো পুদিনার সবচেয়ে উন্নত জাত। জাপানি অরিজিন হলো আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে সহনশীল। এখানে একাধিক জাতের পুদিনার আবাদ হয়। চন্দনাইশ পৌরসভা, দোহাজারী, হাশিমপুর, গাছবাড়িয়া, কাঞ্চননগর ও উপজেলা সদরসহ পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক হারে পুদিনার চাষ করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা মাথায় নিয়ে তারা পুদিনা চাষ করেন একটু বাড়তি আয়ের আশায়। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ-সহযোগিতা দেওয়া হয় নিয়মিত।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, এখানকার ভূমিতে ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতা চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন। এবারও অধিক লাভের আশায় শুধু দক্ষিণ গাছবাড়িয়া হরিণার পাড়া এলাকায় অন্তত ১০ কানি জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে পুদিনার চাষ করেছেন ১০ থেকে ১৫ জন কৃষক। এতে তাদের একটা বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়েছে। প্রতিবছর চন্দনাইশ থেকে পুদিনা কিনে নিয়ে যায় পাইকাররা।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রাণী সরকার জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০ হেক্টর জায়গার উপর ঔষধি উদ্ভিদ  পুদিনা পাতার চাষ হয়েছে। হেক্টরে ফলন হয়েছে প্রায় ৮ থেকে ১০ টন। এখানকার কৃষক শুধু রমজান মাস টার্গেট করে পুদিনা আবাদ করেন। অন্য সবজি চাষ শেষ হওয়ার পর পুদিনার চাষ করেন তারা। আবার নতুনভাবে ধান লাগানোর আগে পুদিনার মৌসুম শেষ হয়ে যায়। অনেকটা জমি খালি পড়ে থাকা অবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে পুদিনা চাষ করে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতে পারলে তাদের বেচাবিক্রিটা আরও ভালো হতো।

ব্যাপকভাবে পুদিনা উৎপাদন করা গেলে বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ দেখছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। এজন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়