Cvoice24.com

বৃষ্টির অপেক্ষায় ডিম ছাড়ছে না হালদার মা মাছ!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩৮, ৪ মে ২০২৩
বৃষ্টির অপেক্ষায় ডিম ছাড়ছে না হালদার মা মাছ!

দেশের কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্র হালদা নদী। প্রতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের যেকোনো পূর্ণিমা ও অমাবস্যার কয়েক দিন আগে-পরে জোয়ার ও ভাটার সময়ে হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। তবে গত কয়েকবছর ধরে কম বৃষ্টিপাত ও লবণাক্ততার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য। এই সময়টা (এপ্রিল-জুন) কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ তাপমাত্রা ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় ডিম ছাড়ছে না হালদার মা মাছ। গত বছরেও মা মাছ সামান্য পরিমাণে নমুনা ডিম ছাড়লেও পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়েনি। এবারও মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

গবেষকরা বলছেন, প্রজনন মৌসুম শুরু হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় এখনো পর্যন্ত ডিম ছাড়েনি মা মাছ। আবার অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ডিম ছাড়ার এ মৌসুমে ক্ষতিরও সম্মুখীন হতে পারে মা মাছ। যদিও হালদার মা মাছ ডিম দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এখন অপেক্ষা অনুকূল পরিবেশ এবং মুষলধারে বৃষ্টির।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরেও চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ডিগ্রি বেশি। অথচ কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন আচরণের ক্ষেত্রে অত্যানুকূল তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অল্প সময়ের জন্য মা মাছ সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। আর ইতিমধ্যে ডিম ছাড়ার একটি উপযুক্ত সময় (গত ১৮-২২ এপ্রিল পর্যন্ত অমাবস্যার জো) চলে গেলেও কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। 

এদিকে, মে মাসের (২-৭ মে) পূর্ণিমার জো চললেও দেখা নেই বৃষ্টির। পরিবেশ অনুকুলে থাকলে আগামী ৩টি জো’তেও ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা দেখছে গবেষকরা। এরমধ্যে একটি পরবর্তী অমাবস্যার ‘জো’(১৬-২১ মে)। এই সময়ের মধ্যে ডিম না ছাড়লে জুন মাসে আরও দুটি ‘জো’আছে। সেসময়েও পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তাঁরা। 

এ বিষয়ে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, ‘হালদার পানির লবণাক্ততা এখন আদর্শ মানের চেয়ে বেশি। নদীর মদুনাঘাট থেকে সর্তারঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নেওয়া পানি ল্যাবে পরীক্ষা করে লবণাক্ততা বেশি পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমে গেছে, তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। ফলে হালদার জলজ পরিবেশ এখন মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূলে নেই। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে বিদ্যমান প্যারামিটারগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। তবেই মা মাছ ডিম ছাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, হালদার জলজ পরিবেশে মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার যেমন পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, টিডিএস ও তড়িৎ পরিবাহিতার মান আদর্শ মানের চেয়ে অনেক বেশি তাই হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র বর্তমানে কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূলে নেই। উচ্চ তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীল অনেক জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী মারা যেতে পারে। ফলে কার্প জাতীয় মাছের খাদ্য উৎস কমে তাদের বৃদ্ধির হার এবং সামগ্রিক নদীর বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হ্রাস করতে পারে। এছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রায় মাছের বিপাকীয় হার বৃদ্ধির ফলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ফলে পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়ে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে প্রজনন সাফল্যকে হ্রাস করতে পারে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়