Cvoice24.com

মিরসরাইয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে মৃত্যু শয্যায় রোগী 

মিরসরাই প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৫ মে ২০২৩
মিরসরাইয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্টে মৃত্যু শয্যায় রোগী 

মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট নাইটেঙ্গেল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল রিপোর্টের কারণে মৃত্যুর শয্যায় প্রসূতি নারী। তিনি এখন চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া আক্তারের রক্তের গ্রুপের ভুল রিপোর্ট দেয় ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে গ্রুপ নির্ণয়ের রিপোর্ট নাইটেঙ্গেলের হলেও এই রিপোর্ট গৃহবধূ সোনিয়ার নয় বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক রাজীব পাটোয়ারী।

তিনি বলেন, এই রিপোর্ট নাইটেঙ্গেলে করা তা ঠিক, কিন্তু এই রিপোর্ট সোনিয়ার নয় অন্যকোন রোগীর। 

সোনিয়ার স্বামী মাসুদ রানা বলেন, আমার প্রথম সন্তান হওয়ার সময় ২০১৯ সালে নাইটেঙ্গেলে ডাক্তার দেখালে সেসময় তার রক্তের গ্রুপের এই রিপোর্ট দেয়া হয়। নামের বিষয়ে সেসময় জিজ্ঞেস করলে তারা বলে রিপোর্ট আপনাদের ঠিক আছে নাম লিখার সময় ভুলে সোনিয়ার জায়গায় স্বর্ণা লিখা হয়ে গেছে। এটা তারা ভুল করেছে। আমার স্ত্রী এখন মৃত্যুর পথে।

জানা গেছে, প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে গত ১১ মে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন গৃহবধূ সোনিয়া। নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা না থাকায় পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন দায়িত্বরত চিকিৎসক নাছিমা আক্তার। সিজারের পর রক্তক্ষরণ হওয়ায় এক ব্যাগ রক্ত সঞ্চালনের পরামর্শ দেন তিনি। রোগীর আত্মীয়রা আগে থেকেই রক্তোর গ্রুপ এ পজিটিভ হিসেবে পরীক্ষা করানো রিপোর্ট আছে জানান। সে অনুযায়ী এ পজিটিভ রক্তের সঞ্চালন করা হয়। তবে রক্ত সঞ্চালনের পর রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকলে পরবর্তীতে গ্রুপ নির্ণয় করে দেখতে পান রোগীর রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ। 

এ বিষয়ে বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক কামাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, সোনিয়া আক্তার নামের এক রোগী গত ১১ মে সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়। ওই রাত সাড়ে ৯ টায় সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তান জন্ম দেন। ১২ মে সকালে তার শরীরে রক্তের প্রয়োজন হলে তখন চিকিৎসক তার রক্তের গ্রুপ জানতে চাইলে রোগীর স্বামী নাইটেঙ্গেলের ২০২১ সালের ৩ মার্চ তারিখে পরীক্ষা করা একটি রক্তের গ্রুপের দালিলিক কাগজ প্রদান করেন। যাতে রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ লেখা রয়েছে। এর পরেও চিকিৎসক রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে চাইলে রোগীর স্বামী বলে রক্তের গ্রুপ কি বার বার পরিবর্তন হয় বলে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে দেয়নি। এছাড়া তিনি রক্তের এ পজেটিভ গ্রুপের একজন ডোনারও সাথে নিয়ে আসেন রক্ত দেওয়ার জন্য। ডোনারের গ্রুপ ম্যাচ করে তখন চিকিৎসক রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করেন। কিছুক্ষণ পরে রোগীর শরীরে সমস্যা দেখা দিলে রক্ত দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে রোগীর শারীরিক সমস্যার কারণ খুঁজতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করলে তখন রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ আসে। আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী অন্য একটি ল্যাবে পরীক্ষা করালে সেখানেও ও পজেটিভ আসে। এরপর আমরা রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে রেফার করেছি।

জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক নাছিমা আক্তার জানান, যেকোন রোগীকে গর্ভবতী অবস্থায় যখন দেখাতে নিয়ে আসে আমরা তখন অবশ্যই রোগীর রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানার জন্য যা করা দরকার করে থাকি। এ রোগীকে যখন গ্রুপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো সেসময় তারা নাইটেঙ্গেলের রিপোর্ট আমার নিকট জমা দেয় এবং রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ বলে জানায়। তাদের করা আগের রিপোর্টে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল থাকায় এ সমস্যাটা হয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাকে এখনো কেউ জানায়নি। রোগীর স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়