Cvoice24.com

চট্টগ্রামে শেষ ৪ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল একই স্থানে, সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ২২ জানুয়ারি ২০২২
চট্টগ্রামে শেষ ৪ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল একই স্থানে, সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা 

চট্টগ্রামে গত চার মাসে সংঘটিত চারটি ভূমিকম্পই রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কাছাকাছি মাত্রার এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলও ছিল একেবারে কাছাকাছি জায়গায়। যার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত বার্মিজ ফল্ট লাইনে। এসব তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন— যে স্থান থেকে এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে সেই স্থানে চরম অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। একই জায়গায় আগামীতে আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। তেমন কিছু হলে চট্টগ্রামে জানমালের চরম ক্ষয়ক্ষতির আশংকার কথাও জানাচ্ছেন তারা।

সর্বশেষ শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় মৃদ্যু ভুমিকম্প অনূভুত হয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের ফালাম শহরে ও রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪ ও ভূ-পৃষ্ট থেকে ৫৬ কিলোমিটার গভীরে এটির অবস্থান ছিল। 

জানা গেছে ভারত ও মায়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত বার্মিজ ফল্টে মাত্র ৪ মাসের মধ্যে তৃতীয় বারের মতো ৫ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছে। 

এর মধ্যে প্রথম ভূমিকম্পটি ঘটে গত বছরের ৮ অক্টোবর, রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫.৫ ও এটি ১১০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থান করছিল। দ্বিতীয়টি একই বছরের ২৫ নভেম্বরে অনূভুত হয়। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৬.১ যা মাটির ৩২ কিলোমিটার গভীরে অবস্থান করছিল। সর্বশেষ ভূমিকম্প অনুভূত হয় গত শুক্রবার। 

সবচেয়ে আতংকের বিষয় হচ্ছে এই ৩টি ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিলো ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে, যা নির্দেশ করছে ঐ স্থানে খুবই অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। 

শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাতে আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে এসব তথ্য জানান। 

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এই বার্মিজ ফল্টে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত শক্তি জমা রয়েছে। গত ৪ মাসে যে ৩ টি ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছে বার্মিজ ফল্টে সেগুলো চট্টগ্রাম শহর থেকে গড়ে ২৫০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত। ফলে আগামীতে একই স্থানে ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যদি তেমনটা হয় তবে চট্টগ্রাম শহরে জান ও মালের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে চুয়েটের আর্থকোয়েক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. আবদুর রহমান ভূঁইয়া সিভয়েসকে বলেন, ' সাধারণত বড় আর্থকোয়েকের আগে ছোট ছোট আর্থকোয়েক হয়ে থাকে। আমরা এভাবে চিন্তা করি, বড় কিছু ঘটার আগে ছোট ছোট কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। বিভিন্ন কারণে আমাদের এই জোনটা এমনিতেই আর্থকোয়েক জোন হিসেবেই পরিচিত। এই ঘটনাগুলোকে ওয়ার্নিং হিসেবে নিয়ে নিজেদের প্রিপেয়ার্ড হতে হবে। পুরো বাংলাদেশেটা তিনটা প্লেটের সংযোগ স্থলে অবস্থান।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে ইউরেশীয় প্লেট এবং ইন্ডিয়ান প্লেট যেটাকে আমরা সাবস্ট্রাকশন জোন বলি এটা একটু বিপদজনক। যে কারণে অল্প মুভমেন্টে দেখা যায় বড় ধরনের আর্থকোয়েক হতে পারে। যেটা ২৫ নভেম্বরে হলো। ৬.১ মাত্রা কিন্তু মোটেও কম না।  চিটাগং জোনটা এটার ফোকাল পয়েন্ট থেকে ১৮০ থেকে ১৮৫ কিলোমিটার দূরে ছিল। যার কারণে সেবার তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি কেবল দু একটা ভবন হেলে পড়ার খবর পেয়েছিলাম। তবে এটা একটা ওয়ার্নিং। ভবিষ্যতে এই প্লেটের সংযোগস্থলে আরও বড় ধরনের আর্থকোয়েক হতে পারে। ন্যাচার আমাদেরকে জানাচ্ছে তোমরা প্রিপ্রেয়ার্ড হও তো আমাদের প্রিপ্রেয়ার্ড হইতে হবে। নইলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়