Cvoice24.com

পণ্য পরিবহনে পিছিয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপথ, সড়কপথই ভরসা

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ২০:০২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
পণ্য পরিবহনে পিছিয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপথ, সড়কপথই ভরসা

প্রতীকি ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার এবং খালি কনটেইনার পরিবহনে ব্যবহার হয় রেল, নৌ ও সড়কপথ। তবে ব্যয় বেশি হলেও দ্রুত সময়ে পণ্য পাঠাতে সড়কপথেই আগ্রহ বেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের। পণ্য পরিবহনে বর্তমানে রেলপথে সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ব্যবহৃত হলেও বৈরি আবহাওয়া, যথাসময়ে পণ্য পৌঁছাতে সময়ের অনিশ্চয়তা থাকা ও পানগাঁও-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন জাহাজ চলাচল না করায় নয় বছরেও ব্যবসায়ীদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ। 

চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ নৌপথে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। নয় বছর পার হলেও পণ্য পরিবহনে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহারের বিষয়টি ব্যবসায়ীদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। বন্দর থেকে নৌপথে ছোট জাহাজে কনটেইনার আনা-নেওয়া হয় কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনালে ও সামিট অ্যালায়েন্সের নৌ টার্মিনালে। রেলপথে কনটেইনার নিয়ে কমলাপুর ডিপোতে খালাস করা হয়। রেলপথে আগে মাসে ৫২টি কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল করত। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫টিতে। 

তবে বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর পর বেশিরভাগই বন্দর বা ডিপো থেকে কনটেইনার খুলে কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাকে করে সারা দেশে নেওয়া হয়। আবার রপ্তানি পণ্যের ৯০ শতাংশই সারা দেশের কারখানা থেকে কাভার্ডভ্যানে করে চট্টগ্রামের ১৮টি বেসরকারি ডিপোতে নিয়ে কনটেইনারে ভরা হয়। এরপর বন্দর থেকে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রেল ও নৌ-পথের তুলনায় সড়কপথে খরচ বেশি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য পৌছানো বা বন্দরে নেয়া সম্ভব হয় বিধায় সড়কপথে আগ্রহ বেশি তাদের। চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যে পরিমাণ কনটেইনার পরিবহন হয় তার ৭০ ভাগই সড়কপথে। পণ্যভর্তি কনটেইনার এবং খালি কনটেইনার পরিবহনে রেলপথে সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়া ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ একেবারেই কম। বন্দরের সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করলে তার প্রমাণ মিলে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রেলপথে ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৬২ টন, সড়কপথে ২ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার ১০৬ টন ও নৌপথে ৪ লাখ ৫ হাজার ২৮৮ টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে রেলপথে ৯ লাখ ১৪ হাজার ৯০৩ টন, সড়কপথে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৪৭ হাজার ৭২৩ টন ও নৌপথে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৬ টন পণ্য পরিবহন হয়েছে।

অন্যদিকে ২০১৯ সালে রেলপথে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৩০৫ টন, সড়কপথে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৫ হাজার ৬০২ টন ও নৌপথে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৮৪৯ টন পণ্য সারাদেশে আনা-নেওয়া করা হয়েছে। তার পরের বছর ২০২০ সালে রেলপথে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪২৭ টন, সড়কপথে ২ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ৭২৫ টন ও নদীপথে ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৯ টনের মতো পণ্য আনা-নেওয়া হয়। সবশেষ গতবছর অর্থাৎ ২০২১ সালে রেলপথে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৬০ টন, সড়কপথে ২ কোটি ৬১ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৪ টন ও নৌপথ ব্যবহার করে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৯৩৮ টন পণ্যভর্তি কনটেইনার পরিবহন করা হয়। 

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, বন্দর থেকে পণ্য খালাস করার পর অথবা ডিপো থেকে পণ্য বন্দরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সড়কপথকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এর প্রধান কারণ হলো সড়কপথে পণ্য পরিবহনে খরচ বেশি পড়লেও দ্রুত সময়ের মধ্যে দিনে দিনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্য আনা-নেওয়া করা যায়। বৈরি আবহাওয়াজনিত ঝুঁকি ও বেশি সময় লাগায় নৌপথে অনেকেরই আগ্রহ কম। সময় কমানো গেলে নিশ্চয়ই ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ নৌরুটের প্রতি আগ্রহী হবেন। 

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রতিবছর আমদানির পরিমাণ বাড়ছে। নৌপথে পণ্য পরিবহনে একদিকে খরচ কম, অন্যদিকে এটা জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধবও বটে। তাই সড়কপথ, রেলপথের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছে নৌ-পথকেও আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার এবং খালি কনটেইনার পরিবহনে রেলপথে সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই ব্যবহৃত হচ্ছে। নৌ-পথেও আগের তুলনায় গতি বেড়েছে। নৌপথকে আকৃষ্ট করার জন্য আমরা পানগাঁও চালু করেছি। চট্টগ্রাম বন্দরে পুরো আমদানির ৭০ ভাগই ঢাকামুখী। এ কারণে সড়কে চাপ পড়ে, খরচও বেশি হয়। রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই আমরা সকসময় চাই যে পণ্যটা নৌপথে চলে যাক। পানগাঁও রুটে আমরা চার্জ কমিয়েছি। পানগাঁওগামী জাহাজের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সব উদ্যোগ আছে। আমরা অনেক ধরণের সুবিধাও দিচ্ছি। পানগাঁও রুটে কেউ কার্গো নিলে তাদের জন্য স্টোর রেন্ট কম, ল্যান্ডিং চার্জ কম। তারপরও ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হচ্ছে না। দ্রুত সময়ে পণ্য আনা-নেওয়া করার জন্য ব্যবসায়ীরা সড়ক পথই বেশি ব্যবহার করছেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়