বন্দরে ভিড়বে বড় জাহাজ, খরচ কমবে ২০ শতাংশ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
বন্দরে ভিড়বে বড় জাহাজ, খরচ কমবে ২০ শতাংশ

চট্টগ্রাম বন্দরে গত ৮ বছর ধরে শুধুমাত্র সাড়ে ৯ মিটার গভীরতাসম্পন্ন (ড্রাফট) জাহাজ ভেড়ার অনুমতি ছিল। এরচেয়েও বড় জাহাজ বন্দরে ভেড়ানো সম্ভব কিনা গত এক বছর ধরে লন্ডনভিত্তিক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই জরিপই চালানো হচ্ছিলো। অবশেষে জরিপে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। সেই অনুযায়ী পরীক্ষামূলকভাবে আগামী সপ্তাহে শুরু হবে বড় জাহাজ ভেড়ানোর ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলকভাবে বড় জাহাজ ভেড়ানো)। সফলতা পেলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর এই সিদ্ধান্তের কারণে আমদানি খরচ অন্তত ২০ ভাগ কমে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 

১৯৭১ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ১৩৭ মিটার লম্বা ও ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দিতো বন্দর। ১৯৯৫ সালে আরেক দফায় জাহাজের দৈর্ঘ্য ও ড্রাফট বাড়ানো হয়। এরপর সর্বশেষে ২০১৪ সালের ২ মার্চ বন্দরের পর্ষদ সভায় ১৯০ মিটার লম্বা ও সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিতে ভেড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব জাহাজ মাত্র ২ হাজার ২শ টিইইউএস কনটেইনার বহন করতে পারতো।  

তবে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিংয়ের সুযোগ পেলে ২ হাজাার ৬শ থেকে ২ হাজার ৮শ টিইইউএস কনটেইনার বহন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কেননা জাহাজে যত বেশি কনটেইনার রাখার সুযোগ তৈরি হবে পণ্য আমদানি খরচ ততোই কমবে। তাই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরেই এ সুবিধাটি পেতে যাচ্ছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।   

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় একটি জাহাজ বন্দর জেটিতে বার্থিংয়ের সুযোগ পেলে প্রায় ৬শ টিইইউএস কনটেইনার বেশি বহন করানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়াও এখন কমেছে। এতে করে আমদানি খরচ অন্তত ২০ ভাগ কমে যাবে বলে আশা করছেন তারা। 

বিজিএমইএ প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বন্দর জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছি। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এখন অনেকটাই এগিয়েছে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে যদি বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় জাহাজ ভেড়ানোর অনুমতি দেয় তাহলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। পোশাক খাতের জন্য অনেক কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। জাহাজ বড় হলে বেশি পরিমাণে কনটেইনার বহন করানো সম্ভব। এতে করে আমাদের আমদানি খরচ অন্তত ১৫ থেকে ২০ ভাগ কমে যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ এক বছর ধরে জরিপ চালায়। কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেল নিয়ে চলে এ জরিপ। জরিপের প্রতিবেদনে বন্দর জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভেড়ানা সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়। সেভাবেই এগোচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহে কয়েকটি বড় জাহাজ ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে ট্রায়াল রান চালানো হবে। সেখান সফল হলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটিতে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে এখন যেসব জাহাজ ভিড়ছে তার চেয়ে বড় আকারের জাহাজ ভেড়ানার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ তাদের চালানো জরিপ প্রতিবেদনে বন্দর জেটিতে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার গভীররতাসম্পন্ন জাহাজ ভেড়ানো যাবে বলে উল্লেখ করেছে। আমরা আগামী সপ্তাহে বড় জাহাজ ভেড়ানোর জন্য ট্রায়াল রান চালাবো। সেখানে সফল হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের পথে এগোবে বন্দর।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়