Cvoice24.com

পুনর্বাসন ছাড়া লালদিয়ারচর ছাড়বে না ১৪শ’ পরিবার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
পুনর্বাসন ছাড়া লালদিয়ারচর ছাড়বে না  ১৪শ’ পরিবার

পুনর্বাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হয় মানববন্ধনে।

দক্ষিণ পতেঙ্গার লালদিয়ার চর। প্রায় ৫৭ একরের এ কর্ণফুলীর চরে ২৩শ’পরিবারের বসবাস। প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাসের এই স্থান শিগগিরই উচ্ছেদ করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। হাইকোর্টের নির্দেশে এরইমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই চরের বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ। গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে চর ছেড়ে যাওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে পুনর্বাসন ছাড়া জন্মস্থান ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই চরের বাসিন্দারা। বসতভিটা রক্ষায় রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। এলাকাটিকে উচ্ছেদের বাইরে রাখার দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা।    

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটায় পতেঙ্গার লালদিয়ার চরসহ বিমানবন্দর সড়কের ১১নং থেকে বিজয় নগর দীর্ঘ ৩ কিলোমিটার এলাকায় এ মাবনবন্ধন করেন স্থানীয়রা। এ সময় মানবিক দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে উপযুক্ত পুনর্বাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা না করার জন্য উদাত্ত আহবান জানানো হয়।

উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির এ মানববন্ধনের ডাকে সাড়া দিয়েছে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলরসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা। তারাও উচ্ছেদের আগে পুর্নবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দ্রুত ওই চরে কেটে দেওয়া বিদ্যুৎ. পানি ও গ্যাস সংযোগ চালু করতে অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

মানববন্ধনে বেশকিছু প্লে-কার্ড গণমাধ্যমের নজর কাড়ে। যেখানে, একজন বৃদ্ধ মহিলাকে চেয়ারে বসে মানববন্ধনে অংশ নিতে দেখা যায়। যার হাতে থাকা প্লে-কার্ডে গোলাপি রঙের কালিতে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘রোহিঙ্গা না হয়ে বাংলাদেশি হলাম বলে কি পুনর্বাসন পাব না?’। এর একটু পরেই আরও একটি চেয়ারে প্লে-কার্ড নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় এক বৃদ্ধ পঙ্গু ব্যক্তিকে। তার হাতে থাকা প্লে-কার্ডে লেখা ছিল, ‘মুজিববর্ষে সবাই ঘর পাচ্ছে, আর আমরা গৃহহীন হতে যাচ্ছি’।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভূমিকে দখলের জন্য আবুল হাশেম এবং আবুল কাশেম নামের দুই ব্যক্তি বিভিন্ন জাল নথি তৈরী করে লালদিয়ারচরের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করে এবং মামলা দায়ের করে। যার প্রেক্ষিতে স্থায়ী বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। তৎকালীন ভূমি মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসককে লালদিয়ারচর বাসীকে স্থায়ী বন্দোবস্তের আদেশ করলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) বিভিন্ন মামলা ও দ্বিতীয় মুন্সেফ কোট, সদর চট্টগ্রামের ইংজাংশনের কথা উল্লেখ করে স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদানে অপারগতা জানান। পরবর্তীতে দুটি সামরিক জান্তা সরকারের আমলে উক্ত জায়গা জাল নথির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের অনুকূলে অন্যায়ভাবে বিএস জরিপে লিপিবদ্ধ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে লালদিয়ারচরের একাংশের পাঁচশত পরিবারকে কোন প্রকার পুনর্বাসন ব্যতীত উচ্ছেদ করা হয়।’

বক্তারা দাবি করে বলেন, ‘নদী রক্ষার কথা বলে কর্ণফুলী নদী থেকে প্রায় ১০০০ ফুট দূরে অবস্থানরত জনপদ লালদিয়ারচর উচ্ছেদের জন্যে চট্টগ্রাম বন্দর আবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। নদী তীরের বিশ ফুটের মধ্যেই বিনোদন কেন্দ্র চট্টগ্রাম বোট ক্লাব, ইনকন্ট্রেড ডিপো, কোস্টগার্ডের রেডি রেস্পন্স বার্থ, বিমানবন্দরের রানওয়ে এপ্রোচ লাইট, সাইফ পাওয়ারটেকের অফডক ডিপো অবস্থিত। যা মহামান্য হাইকোর্ট নদী রক্ষায় উচ্ছেদের যে আদেশ দিয়েছেন তা ব্যাহত হচ্ছে।’ 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিমান বাহিনী ঘাটি জহুরুল হকের স্থাপনা তৈরী করার সময় ওই এলাকার জনসাধারণকে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার বর্তমান লালদিয়ারচর এলাকায় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পূনর্বাসন করেছিলেন, পরবর্তীতে স্থায়ী বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর তা স্থবির হয়ে পড়ে।

উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আলমগীর হাসানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগ এর সদস্য রোটারিয়ান ইলিয়াস, ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরী, ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, ওয়ার্ড সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর শাহানুর বেগম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর আলম একাত্বতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়