Cvoice24.com

ফুলে ভালোবাসা বাড়ায় তাদের মুখে হাসি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ফুলে ভালোবাসা বাড়ায় তাদের মুখে হাসি

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। ছবি: সিভয়েস

ফুল সৌন্দর্য, স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী এই ফুল জড়িয়ে আছে আনন্দ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধার সঙ্গে। জাতি-ধর্ম-সংস্কৃতি—সব পর্যায়ে ফুলের চাহিদা প্রচুর। এ চাহিদা মেটাতে গিয়ে ফুল পরিণত হয়েছে অন্যতম বাণিজ্যিক পণ্যে।

দেশে প্রায় সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বী। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও গৃহসজ্জার জন্য মানুষ ফুল ব্যবহার করে।  জীবিকা নির্বাহে বেকারত্বের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকের পেশা হয়ে উঠেছিল ফুল ব্যবসা।  কিন্তু গেল বছর করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল ফুল ব্যবসায়ী ও চাষিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা। হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে সময় পেরিয়ে আবারো নতুন দিনের সূচনা করছেন তারা। ধারদেনা চুকিয়ে ফেলতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ফুল চাষে নেমেছেন অধিকাংশ চাষীরা। 

ভাষার মাস, ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসব— সবমিলিয়ে সংকট কাটিয়ে নতুন উদ্যমে আবার ঘুরে দাঁড়াবার প্রত্যয় ব্যবসায়ীদের।

ব্যসায়ীরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসবকে ঘিরে জমজমাট ব্যবসা হয়েছে। 
ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, এই তিন দিনে প্রায় দেড় কোটি টাকার ফুল বিকিকিনি করেছে নগরের দোকানগুলো। এ যেন সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনাময় দিনের আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নগরে রয়েছে ৩২০ টিরও বেশি ফুলের দোকান। যার সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। 

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরে করোনার কারণে বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করতে পারেনি বাংলার সংস্কৃতিমনা মানুষ। এ বছরে তা আবার ফিরিয়ে আনতে সকলে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এতে করে ফুল ব্যবসায় আসতে পারে নতুন সম্ভাবনা, যা ব্যবসায়ী ও চাষীদের দুঃখ ঘোচাতে সহজ ভূমিকা পালন করবে।

দেখা গেছে, এই বসন্ত যেন ফুল ব্যবসায় নিয়ে এসেছে নতুন বসন্ত। বসন্তের শুরুতেই নতুন চমক যেন ছুঁয়ে গেছে এ ব্যবসায়। বিকিকিনিতে ব্যস্ত নগরের দোকানগুলো। এছাড়াও বিভন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের হওয়ার কারণে বাড়ছে ফুলের চাহিদা, ফলে বাড়ছে বিকিকিনিও। যদিও গত বছরে ফুল ব্যবসায়ী ও চাষীরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন এবং এতে করে চাষীরা সমবায় সমিতির লোন ও ব্যাংক লোনে জর্জরিতও হয়েছেন। 

চট্টগ্রাম অঞ্চলে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ফুল চাষী। মূলত হাটহাজারী, পটিয়া, দোহাজারী, খাগরিয়া ও চকরিয়া এলাকায় এসব ফুলের চাষ করা হয়। এইসব চাষের মাঠ থেকে ফুল আসে নগরের প্রখ্যাত কাঁচা ফুলের পাইকারি বাজার চেরাগী পাহাড়ে। সেখান থেকেই এসব ফুল নগর ও বিভিন্ন মফস্বল এলাকায় পৌঁছে যায়।

চেরাগী পহাড় গার্ডেন ফ্লাওয়ারের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন বিশেষ দিনের বিশেষ বিকিকিনি সম্পর্কে বলেন, ‘গত বছর করোনা মহামারির লকডাউনে ফুল ব্যবসায় আমরা প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। এতে করে ব্যবসায়ী ও চাষী সকলেই এ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু চলতি বছরে এভাবে ব্যবসা চলতে থাকলে মোটামুটিভাবে সবাই স্বাভলম্বী হতে পারবে বলে আশা করছি। বিশেষ করে এবার বসন্ত উৎসব, ভালবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ভাল ব্যবসা হয়েছে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার কারণে ফুল ব্যবসায়ী ও চাষিদের অনেক টাকা ধারদেনা হয়েছে। তারা বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে এবার ফুল চাষ করেছে। তবে ফুল চাষিদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে আর্টিফিশিয়াল বা প্লাস্টিক ফুল। এসব প্লাস্টিক ফুলের কারণেও বাজারে কমেছে কাঁচা ফুলের চাহিদা।’

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাসির গনি সিভয়েসকে বলেন, ‘দোকান ভাড়া, কর্মচারিদের খরচ দিতে না পেরে অনেক ফুল ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। করোনার সময়ে চট্টগ্রামে আনুমানিক ৪ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, শহরও ছাড়তে হয়েছে অনেকের। তাছাড়া অনেক চাষী ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। তাদেরও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোন অংশে কম না।’

বর্তমান ফুল ব্যবসা সম্পর্কে নাসির গনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেকটা স্বচ্ছল হয়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসে বসন্ত উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভালো ব্যবসা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ফুলের দোকানগুলোতে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সুদিনের আশাবাদী।

-সিভয়েস/আরএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়