Cvoice24.com

আগ্রাবাদে চাঁদা না পেয়ে উচ্ছেদ অভিযানে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা— অভিযোগ দোকানিদের

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৩ অক্টোবর ২০২১
আগ্রাবাদে চাঁদা না পেয়ে উচ্ছেদ অভিযানে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা— অভিযোগ দোকানিদের

নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় ফুটপাত দখল করে জনগণের চলাচল বিঘ্নিত করার অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে সেই উচ্ছেদের পেছনের গল্পটা অন্যরকম বলছে সেখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া ভুক্তভোগীরা। 

তাদের দাবি— চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের উপ প্রধান কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীর ‘লোকের’ দাবি করা দোকান প্রতি মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে না পারার ক্ষোভে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। ক্ষোভের মাত্রা এতোই তীব্র ছিল যে, চসিকের ম্যাজিস্ট্রেটবিহীন এ অভিযানে এস্কেভেটর চালানো হয় দোকানের ভেতরে। ওই যন্ত্রটি সেখান থাকা লোকজনের গায়ের ওপরও তুলে দেওয়া হয়। যদিও এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন চসিকের এ কর্মকর্তা। 

রোববার (৩ অক্টোবর) সকাল ১০ টা থেকে আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি হয়ে তাহের চেম্বার বাদামতলী সোনালি ব্যাংক মোড় হয়ে লাকী প্লাজা এক্সেসরোডসহ বড়পুল পুল পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশের সড়ক, ফুটপাত ও নালার উপরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হয়। উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা থাকলেও এ অভিযানে কোন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন না। 

এদিকে উচ্ছেদ হওয়া একাংশের দাবি— চাঁদা না দেওয়ায় তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, উচ্ছেদের আগে দেয়া হয়নি কোনো নোটিশও। অভিযানে গুলজার কনভেনশন হল সংলগ্ন প্রায় ৩০টি দোকানও উচ্ছেদ করা হয়। তবে এ অংশের দোকানদারদের দাবি উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী কিছুদিন আগে এক লোক মারফত তাদের কাছে দোকানের মাসোয়ারা বাবদ মাসিক ২০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে তারা এত টাকা দিতে পারবে না বরং মাসিক ৫ হাজার দিবে বলে জানান। কিন্তু এতে রাজি হননি ওই ব্যক্তি। এর দুইদিন পর আজকে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। যদিও ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেন নি কেউ। 

ওই স্থানের এক দোকানদার সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন কিছুই জানানো হয়নি। মালামাল সরানোর জন্য কোনও সময় পর্যন্ত দেয়নি। ম্যাজিস্ট্রেট এলে মানবিক কারণে অন্তত কিছু সময় দেয়। সময় না পাওয়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। আমরা তো জায়গা ছেড়েই দিবো। কিন্তু অল্প কিছু সময় আমাদের দিলে কি এমন ক্ষতি হতো। হঠাৎ করে এস্কেভেটর এনে দোকান ভাঙা শুরু করে দেয় তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছুদিন আগে মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরীর পাঠানো এক লোক আসেন। তিনি মাসে ২০ হাজার করে টাকা দাবি করেন। এরপর আমরা সবাই আলোচনা করে ৫ হাজার টাকা দিতে পারবো জানাই। এতে তিনি হবে না বলে জানান। এরপর আজকে সকালে দেখি হঠাৎ করেই নোটিশ ছাড়া দোকান ভেঙ্গে দেয়া হলো। অথচ অন্যান্য লাইনের যারা টাকা দেয় তারা আগের থেকেই দোকান সরিয়ে ফেলেছে।’

এমনকি দোকানে এক লোক থাকা অবস্থায় এক্সেভেটর চালিয়ে দোকান উচ্ছেদ করায় আহত হন হৃদয় নামে এক দোকানদার। তিনি বলেন, আজকে তো আমাদের সময়ই দেয় নাই। অন্যসময় তো কিছুটা সময় দেয়। আমরা গরীব মানুষ। কর্ণারের দিকে একটা দোকানে ফটোকপি মেশিন আছে। এই মেশিনটা বের করতে গিয়েছি তখনই এই দোকানের ওপর এস্কেভেটর দিয়ে ভাঙ্গা শুরু করে। ভাঙ্গা টিন, কাঠের টুকরো লেগে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে যায়। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, ‘নোটিশ দেয়া হয় মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ করলে। কিন্তু এই যে জায়গাগুলো এখানে মাঝে মধ্যে তিন ,চার, পাঁচবার করে উচ্ছেদ করা হয়। একদিকে উচ্ছেদ করলে আরেক দিকে বসে যায় এরা।’  

চসিকের ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অভিযান কেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযান ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া করা যায় নাহ। তবে আজকের অভিযানের জন্য অফিশিয়ালি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল রাতে মেয়র মহোদয় আমাকে ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন- অবৈধ স্থাপনা এসব উচ্ছেদ করা করার জন্য। আমি আজকে সকাল দশটা থেকে এসব উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি।’ 

উচ্ছেদ হওয়াদের দাবি আপনার লোক পরিচয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা চেয়েছে, সেই টাকা না পেয়েই আপনি উচ্ছেদ চালিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এরা তো সব সময় এরকমই বলে। কালকে আরেক জায়গায় উচ্ছেদ করলে তারাও এসবই বলবে। এরা এসব পেশা হিসাবে নিয়েছে। এমন কোন কিছু হবার কোন সুযোগ নেই।’

সিভয়েস/ওয়াইআর/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়