Cvoice24.com


চট্টগ্রামে করোনা বদলাচ্ছে পেশার ধরণ

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ৯ জুলাই ২০২০
চট্টগ্রামে করোনা বদলাচ্ছে পেশার ধরণ

ছবি : সিভয়েস

করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য বিপুলসংখ্যক বেসরকারি কর্মজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পেশা পরিবর্তন শুরু করছেন। এরা বেশিরভাগ হচ্ছে চাকরি হারানো ও ব্যবসা বন্ধ হওয়া কর্মহীন মানুষ। মূলত টিকে থাকার জন্য নতুন পেশার সন্ধানে নেমেছেন তারা। আবার মহামারির পূর্বে অনেক প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে গান গেয়ে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তারাও একই অবস্থার মধ্যে পড়েছে বলে জানা গেছে। কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান না হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

সাতকানিয়া উপজেলার একটি বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান। করোনা মহামারির কারণে ৪ মাস ধরে স্কুল কলেজ তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আর সে কারণেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকও এখন বেকার সময় পার করছেন। স্কুল বন্ধ থাকাতে এখন তিনি পুরোদমে কৃষি কাজ করছেন।

তিনি জানান, বেসরকারি স্কুলে চাকরি করি, ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনে শিক্ষকদের বেতন চলে। আর এখন সরকারিভাবে বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করা সম্ভব নয়, তাই এখন পেশা বদল করে চাষাবাদ করছি। কারণ আপনকাজে শরম নেই।

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) গবেষণা মতে, করোনা মহামারি শুরুতে দেশে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন ৬ কোটি ৮২ লাখ মানুষ। করোনার কারণে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনে এসব মানুষ কাজ হারান। তবে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত কর্মহীন লোকের সংখ্যা ১৪ লাখ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় প্রবাহের জেরে বিশ্বজুড়ে ৩৪ কোটি মানুষ কাজ হারাতে পারেন। এ ক্ষতির তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও।    

চট্টগ্রাম যন্ত্র শিল্পী সংস্থার সভাপতি প্রবীর দত্ত সাজু বলেন, শিল্পীরাও তো মানুষ। গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন, কিন্তু মহামারি তো সব শেষ করে দিলো। তাই আমরা এখন তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে অনলাইনে হোম ডেলিভারির সুযোগ করার পদক্ষেপ নিয়েছি। সেখানে মিউজিশিয়ানরা কাজ করবেন।

এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস বলেন, সেবাজনিত পেশাতে বেশি মন্দা চলছে। ছোট খাটো দোকানে বেচা-কেনা হচ্ছে না। চট্টগ্রামের অনেকে পেশা হারিয়ে সেই গ্রামে ফিরে যাওয়ার অবস্থাটুকু নেই। বর্তমানে আমাদের অবস্থাও তেমনই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকাতে গ্রামে এসেছি, চক্ষু লজ্জার কারণে বেশি নিম্নমানের কাজও করতে পারছি না। ঋণ করে সংসারের ঘানি টানতে হচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলবো? তার দুশ্চিন্তাই আছি।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জীবন ও জীবিকার সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে মানুষ যে ধরনের চাকরি বা চলার চেষ্টা করছে সেভাবে পারছে না। সবকিছুকে কাবু করে রেখেছে ক্ষুদ্র এক অনুজীব মহামারি কোভিড-১৯। বর্তমানে বিশ্বের সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সে সাথে আমার জানা মতে দেড় কোটি মানুষ এখন কর্মহীন। সুতরাং বর্তমানে যে যেটি কাজ হাতের নাগালে পাচ্ছে, সেটি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। চট্টগ্রামে অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো ভাড়া বাসায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের উপরই শিক্ষকদের বেতন ও ভবন ভাড়া প্রদান করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষিত মানুষ চাকরি হারিয়ে নতুন নতুন পেশা নিয়ে বসছেন। এটি হয়তো বেঁচে থাকার জন্য। তবে এটি দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না।

উল্লেখ্য, এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবেলায় সরকার এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার সর্ববৃহৎ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে। এসব প্যাকেজের একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি সঞ্চারের মাধ্যমে সাময়িক কর্মহীনতা দূরীকরণ। কিন্তু এর বাইরে চলতি বাজেট কর্মহীন মানুষদের নিয়ে কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

-সিভয়েস/এমআইএম/এসসি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়