Cvoice24.com


মাথার ওপর তারের জঞ্জাল, অগ্নি ঝুঁকির শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১১ আগস্ট ২০২০
মাথার ওপর তারের জঞ্জাল, অগ্নি ঝুঁকির শঙ্কা

ছবি: আজীম অনন

চট্টগ্রাম নগরীর অলি-গলির সড়ক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও বেড়েই চলেছে অবৈধ তারের জট। ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের তালিকায় থাকা অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর সড়ক-অলিগলিজুড়ে লাগামহীন এসব জঞ্জাল। সংশ্লিষ্টরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এসব দৃষ্টিকটু জঞ্জালে সামান্য আগুনের আঁচ পেলেই দেখতে হবে পোড়া লাশের মিছিল!
 
সম্প্রতি অবৈধ, দৃষ্টিকটু ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাবল অপসারণের কাজ শুরু করে নজির স্থাপন করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ৪ কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট করা হয়েছে। এতে করে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রাম নগরীর এই পুরাতন জঞ্জাল।

চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করেছেন নিউমার্কেট, জহুর হকার্স, রেয়াজউদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ, তামাকুণ্ডিলেইন, চকবাজার, বাণিজ্যিক অঞ্চল আগ্রাবাদের বেশ কিছু এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যে কোন মুহুর্তে সামান্য আগুনের আঁচ পেলেই ছাই হয়ে যাবে বড়সড় এলাকা। এসব বাণিজ্যিক এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো রাতে কর্মচারীরা ঘুমানোর কাজে ব্যবহার করে। হয়তো এই ঘুমন্ত অবস্থায় অপেক্ষা করছে বড় বিপদ।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারি পরিচালক ফরিদ উদ্দিন সিভয়েসকে জানান, অগ্নিঝুঁকির তালিকায় থাকা এসব এলাকায় সংশ্লিষ্টদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। কেননা এসব সরু অলিগলিতে আমাদের কাজ করার পরিবেশ নেই। উপরন্তু এসব বাণিজ্যিক স্থাপনায় তারা বসবাসও করেন। এতে অগ্নিদুর্ঘটনার সময়ে বিরাট অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মক প্রাণহানীর শঙ্কা রয়েছে।
 
দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ডিশ অপারেটর-ইন্টারনেট ক্যাবলসহ স্থানীয় কোম্পানিগুলো রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বিদ্যুতের খুঁটির জোরেই যেভাবে পারছে সেভাবেই সংযোগ টেনে নিচ্ছে। তাছাড়া বেপোয়ারা ভাবেই সংযুক্ত হয়েছে টেলিফোন লাইন ও বিদ্যুতের তার।

অথচ গেল বছর শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর)  চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে তারের জঞ্জালে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছিল। অভিযোগ আছে, বিটিআরসি, চসিক ও পিডিবির রশি টানাটানির কারণে তারের জঞ্জাল বাড়ছে। বিভিন্ন সময় এসব তারে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কিন্তু কোনো সংস্থাই ঝুঁকিপূর্ণ তারের দায়ভার নেয় না।

এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে পিডিবি বিতরণ সংস্থা দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শামসুল আলম সিভয়েসকে বলেন, 'বিদ্যুতের খুঁটির উপর বিভিন্ন লাইন টেনে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় আগুন ধরে যায়। অন্যদিকে টেলিফোন-ইন্টারনেটের মত গুরুত্বপূর্ণ লাইনগুলো চাইলেই বিছিন্ন করা যায় না। কেননা বর্তমানে সবাই এসব প্রযুক্তির সাথে যুক্ত। এগুলো  হঠাৎ এগুলো বিছিন্ন হলে জন ভোগান্তির সৃষ্টি হতে পারে।'

চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসাইন সেলিম সিভয়েসকে বলেন- 'আমাদের কোন তার এলোমেলোভাবে নেই। কিন্তু আমাদের তারের উপর ডিশ ক্যাবল-ইন্টারনেট তার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই নিয়ে যাচ্ছে।' এসব তার অপসারণ কিংবা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার বিষয়টি জানতে চাইলে এই দুটি সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই জঞ্জাল  অপসারণে নিজেদের অক্ষমতার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, 'স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে এই জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে।' শামসুল আলম জানান উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ এই ব্যাপারে নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কিছুই করার নেই।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম শহরে রাস্তাঘাট-ফ্লাইওভার করে ফেলা হলো  অথচ এই বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। তারের জঞ্জাল দৃষ্টিকটু দেখায়, ঝুঁকিপূর্ণ বটে। নাগরিক ভোগান্তি এড়িয়ে এই সমস্যা সমাধানে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের উপর গুরুত্বারোপ তিনি বলেন, 'হঠাৎ এসব তার কেটে ফেললে ভোগান্তি সৃষ্টি হবে। আমরা সবাই তো ইন্টারনেট-ফোন ব্যাবহার করছি। সংস্থাগুলোর পরস্পর সমন্বয় করে মাটির নিচে নতুন লাইন স্থাপন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব তারের সংযোগ দিতে হবে।'


-সিভয়েস/এপি/এসএইচ/এসসি

আসিফ পিনন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়