Cvoice24.com

সাগরে জলদস্যুর তাণ্ডব, কূলে মহাজনের ভয় 

মহেশখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১৫ আগস্ট ২০২২
সাগরে জলদস্যুর তাণ্ডব, কূলে মহাজনের ভয় 

সাগরে জলদস্যুদের তাণ্ডব আর কুলে মহাজনদের  সুদের জন্য চাপ। মাঝেমধ্যেই চেপে বসে প্রাকৃতিক দূর্যাগ। এভাবেই বিপর্যস্ত মহেশখালীর জেলেদের জীবন। তবুও সুদিনের প্রতীক্ষায় রয়েছেন তারা। 

স্থানীয় জেলেদের তথ্যমতে, উপজেলার কুতুবজোম, ছোট মহেশখালী, শাপলাপুর, মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ইউনিয়ন ও মহেশখালী পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি এবং বড়মহেশখালী, হোয়ানক ও কালারমারছড়া ইউনিয়নে প্রায় ১২ হাজার জেলের বসবাস। মহাজনদের কাছ থেকে সুদে হাজার হাজার টাকা নিয়ে সাগরে ট্রলার নামান তারা। সাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে ঘুর্ণিঝড় ও কালো বৈশাখীর পাশাপাশি পড়তে হয় জলদস্যুদের কবলে। জাল ও মাছ ডাকাতির পাশাপাশি জলদস্যুরা ট্রলারের মাঝি-মাল্লাদের কুপিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। অনেক সময় বোটের ইঞ্জিন নষ্ট করে দেয়।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মহেশখালী উপজেলায় কার্ড ও টোকেনধারী ১১,৪৪২ জন জেলে রয়েছে। এর মধ্যে জেলে কার্ডধারী রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। এর বাকিরা অনিবন্ধিত । এরা সরকারি কোন সহযোগিতা পায়না।

আবদুল হাকিম, সোলেমান, রফিক সহ কয়েকজন জেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে যায়। সরকারিভাবে কোন ওষুধ তারা পায়না। বেশি অসুস্থ হলে তীরে নিয়ে আসে। অন্যথায় ট্রলারেই মৃত্যুবরণ করে। 

তারা জানান, সাগরে টানা ১০/১৫ দিন মাছ ধরে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ চালানো যায়না। তাই বাধ্য হয়ে মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিতে হয়। আর সঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পারলে মহাজনরা নানান ভাবে অত্যাচার শুরু করে। 

ট্রলারের মাঝি জমির উদ্দীন বাশি বলেন, ‘শীতকালে সাগরে বেশি জলদস্যু নামে। ছয় মাস আগে আমার বোটেও জলদস্যুরা হামলা করে জাল ও মাছ নিয়ে যায়। বাধা দিলে আমাকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এখন একটু সুস্থ হয়েছি। কিন্তু পরিবারের ভরণপোষণের জন্য মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আবারও সাগরে নামতে হচ্ছে।”

আমির হোসেন নামে এক বোট মালিক জানান, ব্যবসায় টানা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় মহাজন থেকে সুদে টাকা নিয়ে সাগরে বোট পাঠাতে হয়। বেশির ভাগ সময় মাছ না পাওয়ায় কিংবা মাছের ন্যায্য দাম না থাকায় মাঝি-মাল্লাদের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে দুটি ট্রলার বিক্রি করে দিয়ে একটি ট্রলার দিয়েই সংসার চালাচ্ছেন তিনি।

মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান খাঁন জানান, জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন ধরণের ডিজিটাল উদ্যোগ নিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রত্যেক বোটে ডিজিটাল ডিভাইস বসানো হবে এবং কক্সবাজার ও কুতুবদিয়ায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হবে। এই ডিভাইসের মাধ্যমে আবহাওয়া ও দুর্ঘটনার খবর দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পৌঁছাবে। এটি দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘সাগরে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে এবং জেলেদের সচেতন করতে সার্বক্ষণিক কাজ করছি।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়