ভূমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ২৫ এপ্রিল ২০২২
ভূমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প

বে-টার্মিনাল। ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও উদ্বোধনের ৪ বছর পর তা ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই আটকে আছে। অথচ প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান না হলেও ভেতরে ভেতরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি খোদ বন্দর চেয়ারম্যানের।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বে-টার্মিনাল প্রকল্পাধীন ৬৭ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির দখল চট্টগ্রাম বন্দরকে বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আরও প্রায় ৮০৩ একর জমি নামমাত্র বা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৭ সালে নগরের পতেঙ্গা ও হালিশহর সমুদ্র উপকূল ঘেষে ‘বে-টার্মিনাল’ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পর ৪ বছর কেটে গেলেও প্রকল্পটির কাজে তেমন একটা অগ্রগতি দেখা যায়নি। এমনকি প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের অন্তর্ভুক্ত ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাও এখনো নিরসন করা সম্ভব হয়নি। তবুও ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি অপারেশনে যাবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
 
বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বে-টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ চোখে না পড়লেও তা চলমান আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বেশি গভীরতা ও দৈর্ঘ্যের জাহাজ দিন-রাত ভিড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। বে-টার্মিনালে ৫ থেকে ৬ হাজার কনটেইনারবাহী জাহাজ আসতে পারবে। একসঙ্গে ভিড়তে পারবে ৪০ থেকে ৫০টি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দর জোয়ার-ভাটার উপর পরিচালিত হলেও বে-টার্মিনালে এ ধরনের ঝামেলা থাকবে না। ফলে বন্দরে জট কমে যাবে। পাশাপাশি ২০২৫ সালের মধ্যে দেড় হাজার মিটার মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, ১ হাজার ২২৫ ও ৮শ’ মিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান সিভয়েসকে বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাইরে থেকে প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান না হলেও ভেতরে ভেতরে আমরা কিন্তু ঠিকই কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। তবে অতি শিগগিরই আপনারা বুঝতে পারবেন কাজ কতদূর এগিয়েছি। আমরা আপনাদের সেটা জানাবো।

এদিকে, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে। জুলাই মাসে চালু হচ্ছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল।

এ বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়ে যাবে প্রায় তিন থেকে চার গুণ। গতবছরও এ প্রকল্পগুলোর কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

এম শাহজাহান আরও বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলেই কি আমরা চট্টগ্রাম বন্দর পরিত্যক্ত ঘোষণা করব? না, সেটা নয়। চট্টগ্রাম বন্দরের একটা ঐতিহ্য আছে। মাতারবাড়ি হবে আমাদের সাব-রিজিওনাল হাব। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর, বে-টার্মিনাল হবে আমাদের ‘সার্ভিস পোর্ট’।

এদিকে, গত ৩০ মার্চ মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণ কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখানে ৬শ’ মিটার জেটিতে একসঙ্গে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। চলতি বছরের জুলাই মাসে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে বছরে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করার সুযোগ তৈরি হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর ১৩৬ বছরে পা রাখল আজ। দিনটিকে স্মরণীয় করতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিবস। চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার হিসেবে পরিচিত এ বন্দর আধুনিক ব্যবস্থাপনায় ১৩৫ বছর পূর্ণ করে ১৩৬ এ পা রেখেছে আজ। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করোনার ঢেউ সামলে কন্টেইনারবাহী পণ্য উঠানামায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি।

তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দ্রুত বে-টার্মিনাল নির্মাণ, খোলা পণ্যবাহী জাহাজের জন্য সুবিধা বাড়ানোসহ নানা পরামর্শ বন্দর ব্যবহারকারীদের। অপরদিকে সক্ষমতা বাড়াতে, নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দ্রুত বে-টার্মিনাল নির্মাণও হবে— এমনটাই আশ্বাস চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের।

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়