Cvoice24.com

বন্দরে পড়ে থাকা ১২ রাসায়নিক পণ্যের গায়ে নেই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৭, ২৬ জুন ২০২২
বন্দরে পড়ে থাকা ১২ রাসায়নিক পণ্যের গায়ে নেই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ!

চট্টগ্রাম বন্দরে ক্যামিকেল গোডাউন ‘পি’ শেড

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত রাসায়নিক পণ্য ‘পি’ শেডসহ বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়। বর্তমানে বন্দরের চৌদ্দটি শেডে অন্তত ১২ ধরনের রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। অধিকাংশ পণ্যের গায়ে নেই স্টিকার বা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ। বছরের পর বছর পড়ে থাকতে থাকতে রাসায়নিক পণ্যভর্তি অনেক জার নষ্ট হয়ে গেছে। পাশপাশি হাইড্রোলিক এসিড ও ফেরস ফুমরতে নামের দু’ধরনের বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্যও রয়েছে বন্দরের ভেতরে। তবে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকা, ল্যাব পরীক্ষায় ধীরগতি ও মামলা থাকায় পণ্যগুলো একদিকে বন্দরের অভ্যন্তরে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে অন্যদিকে নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি করছে।   

গত ৩ জুন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার বিএম ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও রাসায়নিক বিস্ফোরণের পর বন্দরে পড়ে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বিক্রি করে দিয়েছিল কাস্টমস। ওই সময় বন্দর দাবি করেছিল— বন্দরের ইয়ার্ডে এখন যে রাসায়নিক পণ্যগুলো রয়েছে সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। অথচ বন্দরে এখনো বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্যের অস্তিত্ব রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, বন্দরের অন্তত চৌদ্দটি ইয়ার্ডে প্রায় ১২ ধরনের রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। বছরের পর বছর বন্দরে পড়ে থাকতে থাকতে অনেক জার নষ্ট হয়ে গেছে। আবার রাসায়নিক পণ্য বাতাসের সঙ্গে মিশে অনেক জার খালি অবস্থায় পড়ে আছে।       

কাস্টমস বলছে, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে থাকা রাসায়নিক পণ্যগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করার বিধান আছে। তবে একজন সচেতন ক্রেতা পণ্যগুলো কেনার আগে মেয়াদ আছে কিনা তা যাচাই করবেন। কিন্তু পণ্যগুলোর গায়ে কোন স্টিকার ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় তা বিক্রি করা মুশকিল। পাশাপাশি নিলামে তোলা পণ্যের বিপরীতে আমদানিকারকের দায়ের করা মামলা চলমান থাকলেও তা নিলামে বিক্রি করার সুযোগ থাকে না।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের সি-৭ শেডে আমেরিকা থেকে আনা সাত কেসে ৩২ কেজি ওয়াশিং কেমিক্যাল রয়েছে। ‘পি’ শেডে সুইজারল্যান্ড থেকে আনা ১৯ কেজি ফিনিশিং এজেন্ট রয়েছে। একই শেডে ২৭০ কেজি ঝুঁকিপূর্ণ হাইড্রোলিক এসিড রয়েছে। বন্দরের ‘সি-২’ শেডে তাইওয়ান থেকে আনা তিন ড্রামে ৩৭৮ কেজি ডায়েসিড এইচপি পণ্য ও সিসিটি ইয়ার্ডে ভারত থেকে আমদানি করা ৬শ ব্যাগে ১৫ হাজার ১২০ কেজি ফেরস ফুমরতে নামের বিপজ্জনক রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। 

এদিকে বন্দরের এম গোলার ভেতরে দক্ষিণ দিকে জার্মানি থেকে আনা পাঁচ হাজার ৪১৪ লিটার ফর্মাল ডিহাইড ও ৮ বোতল সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। ‘আই’ গোলার ভেতরে ২২ বোতলে ৫৫ লিটার ও এনসিটি-ওয়াই ইয়ার্ডে ১৫২ লিটার হাইড্রোলিক এসিড রয়েছে। পাশাপাশি বন্দরের ওয়াই-থ্রি ইয়ার্ডে ২৫ হাজার ৫৫০ কেজি সালফিউরিক এসিড রয়েছে। 

অন্যদিকে বন্দরের ভেতরে থাকা ‘এইচ’ গোলায় ১০ ড্রামে ১ হাজার ৫৬০ কেজি মিথানল ও ‘জে’ গোলায় ৫৪০ কেজি পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড রয়েছে। পাশাপাশি ‘এইচ’ গোলায় দশ জারে ৩শ কেজি, ‘এম’ গোলায় তেইশ জারে ২ হাজার ৭০ কেজি এবং ‘কে’ গোলায় ১২ ড্রামে (প্রতি ড্রামে ৬০ কেজি) ৭২০ কেজি ফসফরিক এসিড রয়েছে। তাছাড়া বন্দরের ‘সিএফএস’ শেডে ২ হাজার ১০ কেজি টেক্সটাইল কেমিক্যাল, ‘ওয়াই-৬’ গোলায় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫০ কেজি ডাইঅপসাইড এবং ‘ওয়াই-৪’ গোলায় কালো রঙয়ের ৬৩৯ জারে (প্রতি জারে ৩২ দশমিক শূণ্য ২ কেজি) এবং সাদা ১৯টি জারে (প্রতি জারে ২৪ দশমিক ৭২ কেজি) মোট ২৪ হাজার ৫৭০ কেজি এসিটিক এসিড রয়েছে। রাসায়নিক পণ্যগুলো বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে পাঁচ-ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। তবে পণ্যগুলোর গায়ে কোন লেবেল, স্টিকার বা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দরে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভর্তি যে ড্রামগুলো ছিল সেগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এখন অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য সেখানে আছে। কতদ্রুত এই পণ্য বন্দর থেকে সরানো যায় সে বিষয়ে আমাদের চিন্তা রয়েছে। একইসঙ্গে রাসায়নিক পণ্য যাতে বন্দর ইয়ার্ডে না নেমে জেটিতে ভেড়া জাহাজ থেকে সরাসরি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরিতে করে আমদানিকারকের কারখানায় নেয়া যায় তার উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি। এতে করে রাসায়নিক কনটেইনারের জট তৈরি হবে না। বন্দরও সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার সিভয়েসকে বলেন, বিভিন্ন সময় মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যগুলোর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে আটক করা হয়। বন্দরের ইয়ার্ড খালি করতে আমরা প্রতিমাসে দুটি নিলামের আয়োজন করি। সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্যও থাকে। আমরা আগামী ৩০ জুনও একটা নিলামের আয়োজন করেছি। সেখানে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি রাসায়নিক পণ্যও রয়েছে। রাসায়নিক পণ্যভর্তি অনেক ড্রাম নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ রাসায়নিক পণ্যের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ নেই। তবে আমাদের কাস্টমসের ল্যাবে পণ্যগুলো পরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযোগিতা যাচাই করা যেতে পারে।

সিভয়েস/টিএম

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়