Cvoice24.com

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ/
রাসায়নিক পণ্য বিক্রিতে তোড়জোড় বন্দর-কাস্টমসের

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ৮ জুন ২০২২
রাসায়নিক পণ্য বিক্রিতে তোড়জোড় বন্দর-কাস্টমসের

কথায় আছে—ভাগাড়ে গরু মরে, শুকুনের টনক নড়ে। তেমনিভাবে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি এলাকার বিএম ডিপোতে  বিস্ফোরণে প্রাণহানির ঘটনায় টনক নড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর আর কাস্টমসের। এ ঘটনার পর চার বছর ধরে পড়ে থাকা ৬০৯ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দুদিন আগে তাৎক্ষণিক নিলামে বিক্রি বিক্রি করেছে কাস্টমস। এবার আড়াইশো টন বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য বিক্রিতে তোড়জোড় শুরু করেছে সংস্থা দুটি। ইতোমধ্যে পণ্যগুলোর কায়িক পরীক্ষাও শেষ হয়েছে।

২০১৮ সালে তুরস্ক থেকে ৩০ টন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আমদানি করেছিল ঢাকা গাজীপুরের কেয়া নীট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানা। আমদানিকারক পণ্যগুলো খালাস না নেওয়ায় চার বছর ধরে বন্দরে পড়েছিল পণ্যগুলো। গত ৬ জুন বিকেলে রাসায়নিক পণ্যগুলো বিক্রি করে দিয়েছে কাস্টমস। এ কারণে বর্তমানে বন্দরের শেডে কোন ধরনের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নেই বলে দাবি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বর্তমানে বন্দরের ‘পি’ শেডে এস এম পাউডার, হাইড্রোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, সালফেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, এস্ট্রোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। এসব রাসায়নিক পণ্যগুলোর মধ্যে ১৯৯২ সালে আমদানি করা রাসায়নিক পণ্যও রয়েছে। সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর থেকে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস। রাসায়নিক পণ্যগুলো দ্রুত নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিলেও কবে নাগাদ নিলামে তোলা হবে সে দিনক্ষণ এখনো ঠিক করেনি কর্তৃপক্ষ। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সব হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড  বিক্রি হয়ে গেছে। এখন বন্দরে অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। তবে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এসব রাসায়নিক পণ্যের মাধ্যমে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও নেই। পাশপাশি রাসায়নিক পণ্যগুলো সেনা ও নৌ বাহিনীর সদস্যরা তদারকি করে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেয় সেভাবে বন্দর মেনে চলে। 
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, একটা নিয়ম ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে রাসায়নিক পণ্য বিক্রিতে ধীরগতি তৈরি হয়। তবে সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর নিরাপত্তার খাতিরে দ্রুত রাসায়নিক পণ্যগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো বিক্রি করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দু ধরনের রাসায়নিক পণ্য আমদানি হয়। এক ধরনের রাসায়নিক পণ্য গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল কারখানার জন্য আমদানি করা হয়। এ পণ্য আমদানিতে বন্ড সুবিধা পায় আমদানিকারকরা। অপরদিকে কিছু রাসায়নিক পণ্য আসে কাঁচামাল হিসেবে। তবে কাঁচামাল হিসেবে আমদানি হওয়া রাসায়নিক পণ্যগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়। বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণায় কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করা রাসায়নিক পণ্যগুলো আটক করে কাস্টমস। এগুলোর পরে ঠাঁই হয় বন্দরের ‘পি’ শেডে। জরিমানা গুণে পণ্যগুলো না ছাড়ানোর কারণে বছরের পর বছর তা বন্দরে পড়ে থাকে। পাশাপাশি এর আগেও রাসায়নিক পণ্যের প্রতি বিডারদের প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে তেমন একটা আগ্রহ থাকেনা। এ কারণে রাসায়নিক পণ্যগুলো বিক্রিও করা সম্ভব হয়না। 

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, বন্দরের ‘পি’ শেডে বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য রাখা হয়। প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি আয়তনের শেডটিতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, সালফেট, টেক্সটাইল কেমিক্যাল, রঙ তৈরির কাঁচামাল, এস্ট্রোজেনসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীদের আমদানি করা রাসায়নিক পদার্থের ৯৮ ভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে। বন্দরের ‘পি’ শেডে ৮৩ লটে ৫৮ হাজার ৩৪৮ কেজি রাসায়নিক পণ্য ছিল। এরমধ্যে গতবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৫৫ লটে থাকা ৫০ হাজারের বেশি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। তবে বর্তমানে বন্দরে ২৮টি লটে ৮ হাজার কেজির বেশি রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে ১শ মেট্রিকটন কস্টিক সোডা রয়েছে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বন্দরে ঝুঁকি কমাতে ও জায়গা খালি করতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১৫২ কেজি সালফিউরিক এসিড, ১ ব্যাগ টেক্সটাইল কেমিক্যাল, ৭৬২ ব্যাগ এলুমিনিয়াম পাউডার ও ৮০ ড্রাম সাইক্লো হেক্সানন পণ্য নিলামে তোলা হয়েছিল। তবে রাসায়নিক পণ্যগুলো এর আগেও বার বার নিলামে তুলেও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি এসব পণ্য কেনার আগে বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। পাশাপাশি তাদের কিছু শর্তও থাকে। বিডাররা (ক্রেতা) এসব ঝামেলা পোহাতে চান না। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দরে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ভর্তি যে ড্রামগুলো ছিল সেগুলো বিক্রি করা হয়েছে। এখন অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য সেখানে আছে। তবে এখন বন্দরে যে রাসায়নিক পণ্যগুলো আছে সেগুলো তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবুও কতদ্রুত এই পণ্য বন্দর থেকে সরানো যায় সে বিষয়ে আমরা কাস্টমসের সাথে কথা বলছি। একইসঙ্গে রাসায়নিক পণ্য যাতে বন্দর ইয়ার্ডে না নেমে জেটিতে ভেড়া জাহাজ থেকে সরাসরি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরিতে করে আমদানিকারকের কারখানায় নেয়া যায় তার উদ্যোগও আমরা নিচ্ছি। এতে করে রাসায়নিক কনটেইনারের জট তৈরি হবে না। বন্দরও সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার সিভয়েসকে বলেন, রাসায়নিক পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য নিলামে বিক্রি বা ধ্বংসের ক্ষেত্রে আমাদের একটা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। প্রথম সমস্যা হলো বিডারদের অনাগ্রহ থাকার কারণে পণ্যগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয় না। তাই অবিক্রিত পণ্যগুলো আবার বন্দরের শেডে ফিরে যায়। দ্বিতীয়ত আমদানি করা পণ্যগুলো অনেক সময় আমদানিকারকের মামলা থাকলে আমরা তা ধ্বংসও করতে পারিনা। তবে আমরা রাসায়নিক পণ্যগুলোর প্রতি এখন গুরুত্ব দিচ্ছি। গত ৬ জুন আমরা ৬০৯ ড্রাম হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিক্রি করেছি। অন্যান্য সময় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে রাসায়নিক পণ্যগুলো এত দ্রুত বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এবার কিন্তু স্পট নিলাম হওয়ায় আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে রাসায়নিক পণ্যগুলো বিক্রি করতে পেরেছিলাম। বন্দরে আরো রাসায়নিক পণ্য আছে। সেগুলো কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রি করা যায় সেটা নিয়ে আমরা বন্দরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা কায়িক পরীক্ষার কাজও শেষ করেছি। আশা করছি আমরা বিডারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাবো।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়