প্রথমবারের মত বড় জাহাজ ভিড়বে রবিবার, দক্ষ পাইলটসহ প্রস্তুত বন্দর
সিভয়েস প্রতিবেদক
ফাইল ছবি
বহুল প্রতীক্ষা শেষে রবিবার (১৫ জানুয়ারি) পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মত বন্দর জেটিতে নোঙর করতে যাচ্ছে ১০ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ। যা পরদিন সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভেড়ানো হবে। ইতোমধ্যে জাহাজ ভেড়াতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দক্ষ পাইলট। পাশাপাশি বড় জাহাজ ভেড়াতে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় গভীরতা বৃদ্ধি ও পাইলটদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজও সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের বড় জাহাজ ভেড়াতে বড় বাধা ছিল কর্ণফুলী নদীর প্রবেশমুখ অর্থাৎ সাগর ও নদীর সংযোগস্থলের কম গভীরতা। তবে লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ এর জরিপে ইতিবাচক সাড়া পেয়ে বড় জাহাজ ভেড়ানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর। বড় জাহাজ ভিড়লে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমার পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজট কমে যাবে বলে দাবি বন্দর ব্যবহারকারীদের।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং করা চালু হলে ৩ হাজার ৫শ টিইইউএস কনটেইনার পরিবহন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ৯ থেকে ১৩ নম্বর জেটি এবং পিসিটি ও এনসিটিতেও ভেড়ানো যাবে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক সিভয়েসকে বলেন, বন্দর জেটিতে বড় জাহাজ ভেড়ানোর জন্য রবিবার ট্রায়াল রান দেয়া হবে। চলতি মাসের শেষেই আমরা নতুন জাহাজ ভেড়ানোর ঘোষণা দেবো। ইতোমধ্যে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের মালিকদের বলে দিয়েছি আমরা ২০০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়াতে প্রস্তুত। পাশাপাশি পাইলট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা দক্ষ পাইলট নিয়োগ দেবো।
শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন সিভয়েসকে বলেন, ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ চলাচল শুরু হলে আমাদের আমদানি-রপ্তানিকারকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজটও কমে যাবে।
এক সময় চট্টগ্রাম বন্দরে আসতো শুধু ৭ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। ২০১৪ সাল থেকে বন্দর জেটিতে আসছে ৯ মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ।
লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়েলিং ফোর্ড’ গত এক বছর ধরে তিনটি বিষয়ে জরিপ চালিয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কত গভীরতাসম্পন্ন এবং দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গা জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোন ধরনের পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কত গভীরতাসম্পন্ন এবং দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে— এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে জরিপটি চলে।
গত এপ্রিল মাসে পাঠানো ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বন্দরের যে অবকাঠামো রয়েছে তা ব্যবহার করে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। তবে বহির্নোঙ্গর ও গুপ্তখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দুয়েকটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, বন্দর জেটিতে ১০ মিটার গভীরতা ও ২০০ মিটার দৈর্ঘের বড় জাহাজ চলাচল শুরু হলে ৩ হাজার ৫০০ টিইইউএস কনটেইনার পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে আমাদের আমদানি খরচ অন্তত ৩০ ভাগ কমে যাবে।