চবি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ছাত্রলীগের একক আধিপত্যে কোণঠাসা অন্য সংগঠন

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১৮ নভেম্বর ২০২১
চবি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে ছাত্রলীগের একক আধিপত্যে কোণঠাসা অন্য সংগঠন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই নানা কারণে আলোচিত সমালোচিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র রাজনীতি। এক সময় শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চবি ক্যাম্পাসে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় হয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। তবে বর্তমানে এককভাবে ক্যাম্পাস রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করলেও নিজেদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলে বেপরোয়া সরকার দলীয় এ ছাত্রসংগঠনটি।

এদিকে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের প্রভাবে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে ছাত্রদল। ছাত্রদলের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। অন্যদিকে বামসহ অপরাপর ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তি একেবারেই দুর্বল।

একক আধিপত্য ছাত্রলীগের

২০১৯ সালের ১৩ জুলাই রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। দুই সদস্যের কমিটি দেওয়ার দুই বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। এতে করে নিজেদের মধ্যেকার আধিপত্য, অন্তঃকোন্দল, নেতৃত্ব দ্বন্দ্বে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন এ ছাত্রসংগঠটি। গত ৫ বছরে নিজেদের মধ্যে ২০০টির বেশি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০’র অধিক ছাত্রলীগ কর্মী। আবার এসব সংঘর্ষের রেশ ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের সর্বত্র। অবরোধ করা হয় শাটল ট্রেন। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনা। এসব ঘটনায় গত তিন বছরে ৮০ জনেরও অধিক ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার হয়েছে। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সংগঠনের অর্জন, সাফল্য ম্লান হচ্ছে। 

অস্থিত্ব সংকটে ছাত্রদল

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় দাপিয়ে বেড়ালেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের আর ক্যাস্পাসে দেখা যায়নি। বিক্ষিপ্তভাবে মাঝে মাধ্যে তাদের ক্যাম্পাসে দেখা গেলেও ছাত্রলীগের দাপটে তারা প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। ছাত্রলীগ এবং পুলিশের ভয়ে ক্যাম্পাসে দলীয় মিছিল মিটিংসহ কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় না ছাত্রদলের ব্যানারে। শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সারে সংগঠনটি। যা সংগঠনটির ভঙ্গুর অবস্থার প্রমাণ বলে মনে করছেন অনেকে।

২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে দীর্ঘ ছয় বছর পর খোরশেদ আলমকে সভাপতি ও শহীদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে শাখা ছাত্রদলের ৬৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ১৮ মে ২৪৩ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সংসদ। কিন্তু নতুন কমিটিতে ২৪৩ জনকে পদ দেওয়া হলেও বাস্তবে তাদের কোনো সক্রিয়তা নেই।

স্থবির বাম ছাত্রসংগঠন

সাংগঠনিক সব কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকলেও জনবল সংকটে ভুগছে এ সংগঠনগুলো। বর্তমানে বামপন্থী চারটি ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ) ও ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই চার ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হলেও নিজেদের এককভাবে কোনো কর্মসূচি খুব বেশি দেখা যায় না। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ব্যানারে তাদের আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। তবে এসব সমন্বিত কর্মসূচিতে হাতেগোনা ৩০-৩৫ নেতাকর্মী চোখে পড়ে।

কার্যক্রম নেই ইসলামি ছাত্র সংগঠনগুলোর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি ছাত্র সংগঠনগুলোর অবস্থান বেশ দুর্বল। যুদ্ধাপরাধসহ আরো নানা কারণেই ক্যাম্পাসে ছাত্র শিবিররের অস্তিত্ব বিলীন। ইসলামী ছাত্রসেনা, ইসলামী ছাত্র ফ্রন্ট ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন কার্যক্রম চালালেও ক্যাম্পাসে তাদের তেমন কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর তেমন কোনো যোগসূত্রতা নেই। শুধু ধর্মীয় কোনো ইস্যু তৈরি হলেই ইসলামী দলগুলো সরব হয় ক্যাম্পাসের বাইরে। অন্যথায় তেমন কোনো কার্যক্রমই থাকে না এ দলগুলোর। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে মাঠে দেখা যায় না ইসলামী দলগুলোর নেতাদের।

শিক্ষার্থীরা চায় শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমানে যারা ছাত্র রাজনীতি করছে তারা দলীয় স্বার্থকেন্দ্রিক। ছাত্ররাজনীতি হয় ছাত্রদের কল্যাণের জন্য কিন্তু বর্তমানে কোন ছাত্রনেতা সাধারণ ছাত্রদের কল্যাণের চিন্তা করেন না। ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে তারা কাজ করেন। এটাকে ছাত্ররাজনীতি বলা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক হলেই ছাত্র রাজনীতির সোনালী সময় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ছাত্র নেতাদের দলীয় লেজুরবৃত্তি ছাড়ার কথা বলেন তারা।

আরও পড়ুন...

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়