প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর: নানা সংকটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১৮ নভেম্বর ২০২১
প্রতিষ্ঠার ৫৬ বছর: নানা সংকটে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস

৫৬ বছরে পদার্পণ করছে শের দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো নানা সংকটের আবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আবাসন সংকট, শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, পরিবহনের অপ্রতুলতা, নামমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র, গবেষণায় অনগ্রসরতা, ছাত্রসংগঠনগুলোর হল দখল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। 

প্রতিষ্ঠার পর সমাবর্তন হয়েছে মাত্র পাঁচটি। ৩১ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন।

সেশনজট

করোনার দেড় বছর ছাড়া বেশিরভাগ বিভাগে সেশনজট না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী সেশনজট। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট,  ইংরেজি, নাট্যকলা, প্রাণিবিদ্যা, ওশানোগ্রাফি, ফিশারিজ ও স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের অবস্থা বেহাল। বিভাগীয় শিক্ষকদের সমন্বয়ের অভাবে এসব বিভাগে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। সঠিক সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শেষ করতে এসব বিভাগের সাত থেকে সাড়ে সাত বছর লেগে যাচ্ছে।

আবাসন সংকট

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ৫১ বছরেও চবি শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করা হয়নি আবাসন সুবিধা। প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে না। এর ফলে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার অপরিচ্ছন্ন ও বসবাসের অনুপযোগী কটেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ মাইল দূরে শহরে ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসিক চাহিদা মেটানোর জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি হল রয়েছে। এসব হলে সাত হাজার জন শিক্ষার্থীদের থাকার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্যে এটি একেবারেই অপ্রতুল।

তীব্র পরিবহন সংকট

চবিতে পরিবহন সংকট দীর্ঘদিনের। ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র সাড়ে ১৭ হাজার, ছাত্রী ১০ হাজার। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে নেই নিজস্ব কোনো বাস সার্ভিস।। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম শাটল ট্রেন। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। বিশ্ববিদ্যলয়ে এখন দুটি শাটল ট্রেন ও একটি ডেমু ট্রেন চলাচল করে। শাটলের প্রতিটিতে ৭টি করে ১৪টি বগি আছে। প্রতি বগিতে ১৪৪টি কওর মোট আসন আছে ২ হাজার ৫৯২টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আসন সংকটের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদ, দরজা ও ইঞ্জিনের সামনে দাঁড়িয়ে যাতায়াত করেন। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে রেলমন্ত্রী এসি ও ওয়াই-ফাইসহ ১৫-১৬ বগিবিশিষ্ট একটি নতুন ট্রেন দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা আর বাস্তবে রুপ নেয়নি।

নতুন বইয়ের অপর্যাপ্ততা

পুরনো বই দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। শিক্ষকদের রেফারেন্স অনুযায়ী বই না পাওয়া, আর পেলেও বেশির ভাগ বই পুরনো ও সেকেলে হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন লাইব্রেরিতে আসা শিক্ষার্থীরা। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে বই কিনে পড়ালেখা করতে হচ্ছে।

বাড়ছে না খাবারের মান

আবাসিক হলে পরিবেশন করা হচ্ছে নিন্মমানের খাবার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দোহাই দিয়ে এসব হল ডাইনিংয়ে নিম্নমান ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ফলে বাধ্য হয়ে হলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের আশপাশে বিভিন্ন দোকানে খেতে হচ্ছে।  এতে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।। শিক্ষার্থীদের দাবি, হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনগুলোতে নিম্নমানের চালের ভাত দেয়া হয়।

৩১ বছরেও হয়নি চাকসু নির্বাচন

প্রতিষ্ঠার পর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৩১ বছর পার হয়ে গেলেও অধরাই থেকে গেছে চাকসু নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট নির্বাচন, ডিন নির্বাচন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্বাচন হলেও দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে চাকসু নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানা অজুহাত দেখিয়ে এ নির্বাচন বন্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ ছাত্র নেতাদের।

৫৫ বছরে মাত্র ৫ সমাবর্তন

সমাবর্তন মানেই নবীন-প্রবীণদের মিলনমেলা। আর এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব থেকে বঞ্চিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। কালো গাউন গায়ে জড়ানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে তাদের। দীর্ঘ ৫৫ বছরে সমার্তন হয়েছে মাত্র চারবার। প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পর ১৯৯৪ সালে চবিতে সর্বপ্রথম সমাবর্তন হয়। পরে ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয় ও ২০০৮ সালে তৃতীয় সমাবর্তন হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ সমাবর্তন।

আরও পড়ুন ...

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়