চবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১৮ নভেম্বর ২০২১
চবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে চবি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভাবনা

৫৬ বছরে পা রাখলো দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জ্ঞানের প্রদীপ জ্বেলে চলেছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি। তৈরি করেছে অসংখ্য জ্ঞানী। অর্জনের পাশাপাশি আক্ষেপও কম নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চ শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠ নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও ভাবনার কথা জানিয়েছেন সিভয়েসকে।

 

অসঙ্গতির সংস্পর্শে হারিয়ে যায় প্রত্যাশা

সৈয়দ মো. জাহেদুল ইসলাম
নৃবিজ্ঞান বিভাগ

যে পথচলা পঞ্চান্ন বছরের, তার কাছে প্রত্যাশার মাত্রাও খানিকটা বেশি হওয়া চাই। দশটি অনুষদের অধীনে চুয়ান্নটি বিভাগ আর সাতটি ইনস্টিটিউট নিয়ে এই পথচলা কখনো মসৃণ ছিলো না, যেখানে নানা অসঙ্গতি এই যাত্রাকে অবরুদ্ধ করেছে বারংবার। অপর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, অপুষ্টিকর খাবার আর সংকটাপন্ন যাতায়াত ব্যবস্থার প্রভাব শিক্ষার্থীদের মনো-দৈহিক অবস্থার অবনতি করছে প্রতিনিয়ত। দেশের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাসের গর্বিত শিক্ষার্থী হওয়ার যে মানসিক প্রশান্তি, তা নিমিষেই হারিয়ে যায় নানা অসঙ্গতির সংস্পর্শে এসে। তাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে এইটুকু আশাবাদ থাকবে, সকল বাধাবিপত্তি আর অসংগতির সুরাহা করে শিক্ষায়-গরিমায় সম্মৃদ্ধ এক সোনার বাংলার বিনির্মাণে কাজ করে যাবে প্রাণের ক্যাম্পাস।


বিশ্বমঞ্চে ছড়িয়ে পড়ুক চবি

নুর নবী রবিন
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

জ্ঞান চর্চা ও উৎপাদনের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠ আরো আরো সুনাম কুড়াক। দেশের সবক্ষেত্রসহ বিশ্বপরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ুক এখানের শিক্ষার্থীরা। ২১’শ একরের এ ক্যাম্পাস হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষাজীবনের নির্ভরতার প্রদর্শক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে ট্যাগলাইন হিসেবে যুক্ত হোক একটি শিক্ষার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠান।


শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হোক

তাসনুভা তাহসিন
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

আয়তনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫ পেরিয়ে ৫৬ তে পদার্পণ করলো। হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণে প্রিয় ক্যাম্পাস সগৌরবে তার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক- শিক্ষার্থী দেশ, বিদেশে তাদের মেধার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বয়ে আনছে। এমন একটি বিশ্বমানের শিক্ষাঙ্গনে পড়বো, এটা আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল। এখন আমি সেই স্বপ্নের একজন গর্বিত সদস্য। ভাবতেই একরাশ ভালো লাগা মনটাকে আনন্দ দেয়। 

একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমার ভাবনা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হোক। সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে সুস্থ রাজনীতির চর্চা, খেলাধুলা, মুক্তচিন্তা, সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি গবেষণা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত বলে মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। যেখানে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মনোজগতের উৎকর্ষ সাধিত হয়। 

২৭ হাজার শিক্ষার্থীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো বহু সমস্যা বিদ্যমান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসিক ও পরিবহণ সমস্যায় জর্জরিত। তাছাড়া বেশ কিছু বিভাগে রয়েছে সেশন জট। প্রত্যাশা থাকবে, স্বপ্নের এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক হবে না বরং শিক্ষায়, জ্ঞানে, সংস্কৃতি, গবেষণায় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাপিয়ে যাবে।


গবেষণা ও জ্ঞান সৃজনে এগিয়ে আসতে হবে

নবাব আব্দুর রহিম
বাংলা বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমত এর সত্যতাটি নিশ্চিত করতে হবে। গবেষণা, জ্ঞান সৃজন ও উৎপাদন ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় অকল্পনীয়। শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ। বাংলাদেশ এমনকি চট্টগ্রাম নানা বিরল উপাদানে সমৃদ্ধ, এই বিশ্ববিদ্যালয় এসব ক্ষেত্রের সত্যিকার পাদপীঠ হয়ে উঠতে পারে যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই প্রত্যাশাগুলো নিশ্চিত করা যায়। এর প্রাথমিক উপায় হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে, যেটি বইপত্রে খুবই সমৃদ্ধ হয়েও একটি সংগ্রহশালা মাত্রে পরিণত হয়েছে।


স্বপ্নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সাবরিনা ইয়াসমিন মিতু
ক্রিমিনোলজি বিভাগ

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন কার না থাকে? স্বপ্ন দেখার কারণ হিসেবে বলতে পারি ‘বেশ নামি-দামি বিশেষজ্ঞ, গবেষকের সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জড়িত’ এই বিষয়টা কাজ করতো তখন। ড. আব্দুল করিম স্যার, জামাল নজরুল ইসলাম স্যারের কথা না বললেই নয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বরাবরই মুগ্ধ করে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ বলার কারণ অর্থাৎ গবেষণা, আবিষ্কারের দিক থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নিক এই প্রত্যাশা করি।


গর্বিত আমি চবিয়ান

তাসনিয়া নুর
ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমার পরিচয় খুব বেশিদিনের না হলেও, চবি আমার প্রাণের ক্যাম্পাস। এখানে আসার প্রথম দিনেই আমি ক্যাম্পাসের অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছি। চারিদিকে সবুজে ঘেরা, মনোরম পরিবেশ। শুধু সৌন্দর্যেই নয় জ্ঞান-গবেষণায়ও পিছিয়ে নেই এই বিদ্যাপীঠটা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।

 

করোনার সেশনজট কাটিয়ে উঠতে মাস্টার প্ল্যান প্রয়োজন

ঈশিতা দাশ
ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স

২১০০ একরের এই বিশালতার মাঝে আমিও একটি অংশ হতে পেরে অনেকাংশেই গর্ববোধ করি। শিক্ষা ও গবেষণায় চবি এগিয়ে যাবে বলে স্বপ্ন দেখি আমি। চবির কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তবে এখন বেশি প্রত্যাশা থাকবে করোনায় দেড় বছরের সেশনজট দ্রুত কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় তার একটা মাস্টার প্ল্যান কার্যকর করা।

আরও পড়ুন ...

 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়