ভালো ফলাফলেও যে কারণে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ভালো ফলাফলেও যে কারণে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। ছবি: সংগৃহীত

অটোপাশের বছর ছাড়া গত চার বছরের তুলনায় এবার ভালো হয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল। অন্যান্য বছরের তুলনায় এমন ভালো ফলাফলেও এ বছর সবচেয়ে পিছিয়ে চট্টগ্রাম বোর্ড। তিন পার্বত্য জেলার গড় পাসের হার পিছিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।

এছাড়া এরআগে টানা দুবছর জিপিএ-৫ বাড়লেও, এবার গত চার বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি জিপিএ ৫ বেড়েছে। তবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার আগের চেয়ে ভালো। তবে গড় পাসের হারে অন্য বোর্ডকে টপকাতে পারেনি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। 

২০২১ সালের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৫.৫৭%। এরমধ্যে বাকি ৮টিই চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডকে পেছনে ফেলেছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অটোপাশের বছর ছাড়া বিগত বছরগুলোর তুলনায় পাসের হার বাড়লেও তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হার কম থাকায় সার্বিক ফলাফলে এই প্রভাব পড়েছে। যার কারণে গড় হারে পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। প্রতিবারই একই কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কমে যায়। যদিও এবার অন্যান্য বারের তুলনায় পাসের হারের শীর্ষে রয়েছে বান্দরবান। ধীরে ধীরে ভালো ফলের দিকে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। 

৯টি বোর্ডের ফলাফল

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে এবার মোট পরীক্ষার্থী ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৭ জন। পাস করেছে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯ জন। মোট পাসের হার ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৫০ হাজার ৯১৮ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৮৯ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। কুমিল্লায় মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৬৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। যশোর বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ জন। পাস করেছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৭৪১ জন। পাসের হার ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৮ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৬৩ হাজার ৯৬৪ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সিলেট বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ৬৭ হাজার ৯৯৮ জন। পাস করেছে ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। দিনাজপুর বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৬ জন। পাস করেছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪ জন। পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ময়মনসিংহ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ৭০ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৬৬ হাজার ২৫০ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। 

এদিকে, সবচেয়ে কম গড় পাসের হার ছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। এ বোর্ডে এবার মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ১ হাজার ২৫১ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৬২ জন। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা হয়নি। যে কারণে ওই বছর অটোপাশ দেওয়া হয় এবং পাসের হার ছিল শতভাগ। যেখানে ২০১৯ ও ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ ও ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর আগের বছরে পাসের হার এর চেয়েও কম ছিল। এবারের ফলাফলে যশোর বোর্ডে সবচেয়ে বেশি পাসের হার আর চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে কম। 

কিন্তু বরাবরের মতন মহানগরের চেয়ে পিছিয়ে আছে তিন পার্বত্য অঞ্চল। আর যার কারণে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার তুলনামূলক কম। প্রতিবার পার্বত্য জেলার কলেজগুলো পিছিয়ে থাকায় প্রভাব পড়ে ফলাফলেও। সে ধারায় এবারেও মহানগরের চেয়ে পিছিয়ে পার্বত্য অঞ্চল। তবে পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে বান্দরবানের গড় পাসের হার শীর্ষে রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ। পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে এবার সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে রাঙামাটির। সেখানে পাসের হার ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এরমধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল হয়েছে বান্দরবান জেলায়। সেখানে পাসের হার ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। যদিও অন্যান্য বার পাসের হার থেকে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশের ঘরে। সেখানে এবার সে ধারা থেকে বেরিয়ে পাসের হার ৮১ থেকে ৯২ শতাংশের ঘরে।

আবার জিপিএ ৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছে মহানগরের বাইরের কলেজগুলো। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন যার মধ্যে ১২ হাজার ৫৫৪ জনই মহানগরের। বাকি ১ হাজার ১৬৬ জন মহানগরের বাইরের। কিন্তু কক্সবাজারে জিপিএ ৫ পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। সেখানে ৭৭০ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। 

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ফলাফল প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, ‘গতবছর ছাড়া এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে। এই ফলাফলে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট আবার সন্তুষ্ট না এটা বলা কঠিন। তিনটি পার্বত্য জেলার কারণে পাসের হারে চট্টগ্রাম বোর্ড পিছিয়ে পড়ে। ওই তিন জেলায় পাশের হার কম। এটাই মূলত কারণ।’

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আরও বলেন, ‘পাহাড়ের জনগোষ্ঠী একটু পিছিয়ে পড়া। তাদের আরো পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা দরকার। এখন তাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুফল মিলবে।’

পাঁচ বছরের রেকর্ড জিপিএ ৫ বেড়েছে চট্টগ্রাম বোর্ডে
বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার জিপিএ ৫ বেশি পেয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ জন। আর এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ১৩ হাজার ৭২০ জন। অটোপাশের বছর ২০২০ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ১৪৩ জন। কিন্তু এর আগের বছরগুলোতে জিপিএ ৫ ছিল চট্টগ্রাম বোর্ডে সবচেয়ে কম। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৬০ জন। ২০১৮ সালে ১ হাজার ৬১৩ জন এবং ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৯১ জন।

অটোপাশের বছর ছাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় পাস ও জিপিএ ৫ বাড়ার কারণ
 
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অটোপাশের বছরের ফলাফল দেখার পর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার আরও প্রতি মনোযোগী হয়েছে। পাশাপাশি অভিভাবকেরাও সচেতন হয়েছে। এর বাইরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আকারে পরীক্ষা হওয়ায় সামগ্রিকভাবে ফলাফল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মাঝে এবার এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৮৩৪ জন। যা ২০১৯, ২০১৮ ও ২০১৭ সালে ছিল এ বছরের দ্বিগুনের কাছাকাছি। শতকরা হিসেবে এক বিষয়ে অকৃতকার্যের হার এবার ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর আগের বছরগুলোতে শতকরা ছিল ২০ শতাংশের বেশি। 

এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন, 'গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেশি ছিল এবং ফলাফলেও পাসের হার ও জিপিএ দুটোই বেড়েছে। আমরা ভেবেছিলাম অটোপাশের কারণে শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫ বেশি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে এবারে তার চেয়ে বেশি জিপিএ ৫ বেড়েছে। তার সাথে আরেকটি কারণ হতে পারে সংক্ষিপ্ত আকারে পরীক্ষা হওয়ায়। মানে গ্রুপভিত্তিক তিনটি বিষয়ের করে মোট ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যার কারণে ফলাফলে ভালো একটা প্রভাব ছিল।’

ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে

এবারেরও এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। জিপিএ ৫ ও পাসের হার দুই দিক থেকে মেয়েদের ফলাফল ভালো হয়েছে। এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১ হাজার ২৫১ জন। পাসের হার ৮৯.৩৯ শতাংশ। পাস করেছে ৮৯ হাজার ৬২ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৪৯ হাজার ৩০৬ জন এবং ছাত্রী ৫০ হাজার ৩২২ জন। 

মোট পাসের হার গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম এবং  মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রী ৭ হাজার ৬৭০ জন এবং ছাত্র ৬ হাজার ৫০ জন শিক্ষার্থী। পাসের হারেও মেয়েরা এগিয়ে। ছাত্র পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এমনকি জিপিএ ৫ এর দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়