Cvoice24.com

সাধারণ ওষুধে সারছে না ডায়রিয়া, দিতে হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫০, ২৩ মে ২০২২
সাধারণ ওষুধে সারছে না ডায়রিয়া, দিতে হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক

নগরের হালিশহরের বাসিন্দা মাহির হাসান (ছদ্মনাম)। সাত বছর বয়সী শিশু মাহির গেল সপ্তাহে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। ডায়রিয়ায় এতই কাহিল এ শিশু, ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের পাশাপাশি সাধারণ কিছু ওষুধ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তিনদিন টানা শরীরের অবস্থা অবনতি হলে ব্যবহার করতে হয় অ্যান্টিবায়োটিক। আর তাতেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন মাহির হাসান। 

শুধু মাহির হাসানের ক্ষেত্রেই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল এক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামে বাড়তে থাকা ডায়রিয়া রোগীদের বেশিরভাগের শারীরিক অবস্থা একই। খুব দ্রুতই অবনতি হচ্ছে। যারাই এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই চিকিৎসকদের ভাষায় ‘শেষ অবস্থায় এসে ধরণা দেওয়া হচ্ছে’। আবার অনেকেই পানিবাহিত এ রোগে গুরুতর হয়ে শকেও চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

ঢাকার পরিস্থিতি নেই চট্টগ্রামে, চার হাসপাতালে ভর্তি ৬৭ ডায়রিয়া রোগী

এদিকে, এমন অবস্থার মধ্যেই রোববার (২২ মে) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হওয়ার খবর দিয়েছে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাঁরা জানান, নগরের হালিশহর এলাকার ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে পানিবাহিত এ রোগে। তিনিও একই পরিস্থিতির মধ্যেই হাসপাতালে এসেছিলেন। প্রথমদিকে সাধারণ ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হলেও অ্যান্টিবায়েটিক ব্যবহার করার পরও মৃত্যু হয় এ বৃদ্ধের। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৃত্যু ছাড়াও বিআইটিআইডি হাসপাতালে গেল এক সপ্তাহ ধরে প্রায় দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালটিতে। এরমধ্যে গত চার দিনেই চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ১৪০ জন নারী-পুরুষ। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৬৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। 

ডায়রিয়া/ ২৪০ জায়গার পানির নমুনা পরীক্ষা করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,  চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই বৃদ্ধ। তাঁদের অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। পানিশূণ্যতার কারণে শকে চলে যাচ্ছিলেন তাঁরা। ডায়রিয়ার মধ্যে কলেরা রোগী বেশি। বেশির ভাগ রোগীর ডায়ারিয়ার পাশাপাশি পেটে ব্যথা রয়েছে।

ফৌজদারহাট বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশার্স ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ জানান, গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বেশিরভাগ রোগীই ভর্তি হচ্ছেন শেষ পরিস্থিতিতে এসে। এমন রোগী অতীতে কম পাওয়া গেছে। ভর্তি হওয়াদের মধ্যে সিংহভাগই নগরের হালিশহরের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। 

এদিকে মা ও শিশু হাসপাতালেও প্রায় অর্ধশত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে বলে জানা গেছে। ভর্তিরতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে শিশু। প্রাপ্ত বয়স্ক রয়েছেন মাত্র ২০ জন। তারা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালটির চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি নিয়েই রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যাকে ক্রিটিক্যালও বলছেন অনেকেই। তাঁদের ভাষ্য— এসব রোগীদের স্বাভাবিক ওষুধ ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না। যার কারণে বাধ্য হয়েই এন্টিবায়েটিক ব্যবহার করতে হচ্ছে। 

চট্টগ্রামে কমতে শুরু করেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মাহমুদ এ চৌধুরী আরজু বলেন, ‘শিশু বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এবারের ডায়রিয়াটা ভিন্ন। যার কারণে স্বাভাবিক ও অন্য সাধারণ যে ওষুধ দিয়ে এতদিন চিকিৎসা প্রদান করা হতো তাতে কাজ হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই চিকিৎসকরা এন্টিবায়েটিক ব্যবহার করছেন। 

একই মত পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জামাল মোস্তাফার। তিনিও জানান, ব্যক্তিগত চেম্বারের পাশাপাশি হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। তিনি ধারণা করছেন এ সপ্তাহ রোগী বাড়তে পারে। এখন যে রোগীগুলো পাওয়া যাচ্ছে তারা আগের রোগীর চেয়ে একটু ভিন্ন। যেটাকে চিকিৎসকরা বলে থাকেন ইনফেক্টিভ ডায়রিয়া। যার কারণে এসব রোগীকে এন্টিবায়েটিক ব্যবহার করতেই হচ্ছে।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়